Also read in

পুরসভার ইতিহাসে সবথেকে বড় স্ক্যাম গান্ধীবাগের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক: জেলা কংগ্রেস

শিলচর পুরসভার ইতিহাসে সবথেকে বড় স্ক্যাম হতে চলেছে গান্ধীবাগের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক প্রকল্পটি। ঐতিহাসিক পার্কটিকে প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তুলে দিয়ে এখানে ভবিষ্যতে ‘বেলেল্লাপনা সংস্কৃতি’ আমদানি করার দিকে এগোচ্ছে বিজেপি শাসিত শিলচর পৌরসভা। আপাতত যতটুকু তথ্য সামনে এসেছে, বোঝা যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার নয়-ছয় হচ্ছে এই প্রকল্পটিকে নিয়ে। আর্থিক নয়-ছয়ের পরিমান ভবিষ্যতে আরও বড় হতে পারে। ‌

অল ইন্ডিয়া মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবের নেতৃত্বে মঙ্গলবার জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়ে কংগ্রেসের সদস্যরা গান্ধীবাগে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সহ মার্কেটিং কমপ্লেক্স বানানোর পুরসভার উদ্যোগকে ‘স্ক্যাম’ হিসেবে আখ্যা দেন। তারা বলেন, ‌গান্ধীবাগে সরকারি অম্রুত প্রকল্পের জন্য পুরসভা সরকারের কাছ থেকে ১৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা নিচ্ছে অথচ বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে লিজ বাবত মাত্র ১০ লক্ষ টাকা নিচ্ছে। গান্ধীবাগের জমির মূল্য অনেক বেশি কিন্তু পুরসভা সরকারি কোম্পানিগুলোর কাছে অনেক কম টাকায় জমিটি তুলে দিয়েছে। এদিকে শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেও তাদের কোনো কথা শোনা হয়নি। উপরন্তু তারা উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর শহরের নাগরিকদের রীতিমত অপমান করলেন।

শহরের প্রতিবাদী নাগরিকদের উদ্দেশ্য সাংসদ রাজদীপ রায় বলেছেন, “গান্ধীবাগে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সহ পাঁচতারা হোটেল ও কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স প্রকল্পটি নিয়ে যদি শহরের মানুষের কোনও অসুবিধা থাকে, তাহলে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। এভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে না।” এধরনের উদ্যণ্ড মনোবৃত্তির কথাবার্তা আমরা আগে শুনিনি। কেন্দ্র সরকারের অম্রুত প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনও প্রকল্প চূড়ান্ত করার আগে শহরের নাগরিকদের অভিমত নিতে হয়। শিলচর পুরসভার তরফে জনগণের অভিমত নেওয়া তো দূরের কথা, শহরের মানুষ যে প্রকল্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন, সেই প্রকল্পের উদ্বোধনে দাম্ভিক কথাবার্তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত, শুধুমাত্র গান্ধীবাগকে সুন্দর করার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা কোনো কাজ করছেন না। এর পিছনে রয়েছে কোনও অন্য উদ্দেশ্য। শহরের মানুষ শিক্ষিত। তাদের এটা বুঝতে কারো অসুবিধা হচ্ছে না যে পুরসভার আসল উদ্দেশ্যটা কি।

সুস্মিতা দেব এদিন বলেন, শুধুমাত্র তিনজন ব্যক্তি মিলে শিলচর পৌরসভা চালাচ্ছেন এবং বাকিরা দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। প্রকল্প উন্মোচন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পিযুষ হাজারিকা সহ বিজেপির নেতারা যোগ দিলেও অনুপস্থিত থাকলেন জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি, শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল এবং বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এতে প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা এবং পুরসভার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। শুনেছি অনুষ্ঠানে রাজদীপ রায় বেশ বড় বড় কথা বলেছেন, আমি তাকে বলতে চাই, আপনি সদ্য সাংসদ হয়েছেন, রাজনীতির মাঠে আপনি নতুন। যখন ধীরে ধীরে শিলচর পুরসভার আসল রূপ দেখবেন, তখন নিজেই সরে যাবেন। পিযূষ হাজারিকা নাকি বলেছেন, আমাদের চোখ লাল, আমি তাকে বলছি, আমাদের চোখ লাল না নীল এটা থেকে বড় বিষয় হচ্ছে আপনার চোখ সবুজ হয়ে যায়নি তো? টাকার সবুজ রং দেখে আপনিও ভুল মানুষের সঙ্গ দিচ্ছেন না তো? শহরের মানুষের উত্তাল প্রতিবাদের মুখে সেনা জওয়ান এবং পুলিশের পাহারায়, শহরের নাগরিকদের অনুপস্থিতিতেই তিনি উদ্বোধন করলেন অ্যামিউজমেন্ট পার্ক প্রকল্পটি। এদিকে তাকে কালো পতাকা দেখানোয় গ্রেফতার হন ২৮ জন যুবক। এতোটা বেপরোয়া হওয়ার পেছনে কী কারণ তা আমরা তার কাছে জানতে চাই।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সুস্মিতা দেবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং, কংগ্রেস দলের পুরকমিশনার তমাল বণিক সহ অন্যান্যরা।

Comments are closed.