"তরুণ গগৈ দুঃসময়ে দল ছাড়েন নি," সুস্মিতা; "আরেকবার সারা আসাম দেখতে চেয়েছিলেন বাবা, তাই অস্থি নিয়ে এসেছি," গৌরব
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর মৃত্যুর পর তার চিতাভস্ম নিয়ে রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় বিসর্জন করছেন সাংসদ গৌরব গগৈ। বুধবার শিলচর বরাক নদীতে চিতাভস্ম বিসর্জন করেছেন তিনি। এরপর শুক্রবার এবং শনিবার হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে একইভাবে চিতাভস্ম নিজের হাতে বিসর্জন করবেন গৌরব গগৈ। এদিন সকালে শিলচরে এসে পৌঁছোন তিনি, এর আগেই দলের তরফে চিতাভস্ম কংগ্রেস কার্যালয় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পার্ক রোডের কংগ্রেস কার্যালয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি অনুষ্ঠান রাখা হয় যেখানে গীতার অংশবিশেষ পাঠ হয়, এছাড়া শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন অনেকেই। অনুষ্ঠানের স্পষ্ট বাংলায় বক্তব্য রাখেন সাংসদ গৌরব গগৈ। এরপর একটি শোভাযাত্রা বের হয়, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে সেটি সদরঘাট বিসর্জন ঘাটে পৌঁছোয়। সেখানে সুসজ্জিত লঞ্চে চিতাভস্মের কলষ সহ অতিথিরা নদীর মাঝখানে গিয়ে পৌঁছান, সেখান দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিসর্জন সম্পন্ন হয়।
অস্থি বিসর্জন করার আগে শান্তি সভায় কথা বলতে গিয়ে গৌরব গগৈ বলেন, “আমার বাবা যখন অসুস্থ হয়েছেন সারা রাজ্যের মানুষ তার জন্য প্রার্থনা করেছেন। বাবা তার শেষ বার্তায় শুধু নিজের এলাকার কথা বলেননি, সারা রাজ্যের কথা সেই সময় মনে ছিল, প্রত্যেক ব্যক্তির শুভকামনা চেয়েছেন। একসময় বলেছিলেন সুস্থ হয়ে অন্তত একবার সারা আসাম সফর করতে চান, সশরীরে তাকে আমরা নিয়ে আসতে পারিনি, তবে তার মৃত্যুর পর চিতাভস্ম নিয়ে রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় বিসর্জন করছি, এতে তিনি শান্তি পাবেন। তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সারা রাজ্যের রাজনীতিতে এক বিরল ব্যক্তি ছিলেন, তার কাছে প্রত্যেক জেলার প্রত্যেক ব্যক্তি সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। দুঃসময়ে অনেকে দল ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু তাদের নিয়ে কোনও কুরুচিকর মন্তব্য করেননি। অনেকে অন্য দলে যোগ দিয়ে তরুণ গগৈকে নিয়ে নানা কুরুচিকর কথা বলেছেন, তিনি সেগুলো হেসে উত্তর দিয়েছেন কোনও প্রতিশোধের মনোভাব ছিল না। আমি তার একমাত্র ছেলে নই, সারা রাজ্যে তার হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে রয়েছে, যারা তাকে শ্রদ্ধা করেন, এর প্রমাণ হচ্ছে তার চিতাভস্ম বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রত্যেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে আমরা তার আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাব, তিনি আমাদের শিখিয়েছেন দুঃসময়ে আরও বেশি শক্তি নিয়ে দলের জন্য কাজ করা।”
প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, “তরুণ গগৈ বড়মাপের নেতা ছিলেন এর সবথেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে তিনি দুঃসময়ে দলকে ছেড়ে চলে যান নি। একসময় ৪০ জন মানুষের উপস্থিতিতে তিনি সভায় যোগ দিয়েছেন, কথা বলেছেন। আমি সেখানে তার সঙ্গে ছিলাম, আশ্চর্য হয়েছি তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে এত ছোট জনসমাবেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিতে পারেন। কংগ্রেস দল ছেড়ে যাওয়া বিজেপির এক তরুণ নেতা টুইটারে সেই ফটো দিয়ে ব্যাঙ্গ করেছিলেন। অবশ্যই সেই নেতা নিজের ক্ষমতায় কোনদিন জনসমর্থন পাননি, তার প্রয়াত বাবার নামেই পেয়েছিলেন। তবে সেদিনের সভায় আবার বুঝতে পেরেছি তরুণ গগৈ প্রত্যেক জনগণের নেতা ছিলেন, তাই ৪০ জন লোক একসঙ্গে জড়ো হয়েছে সেটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি, বরং তাদের নিয়েই লড়াই করতে শিখিয়েছেন। আমার কাছে তরুণ গগৈ শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা নন, আমার বাবার সহযোদ্ধা, পিতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তার মৃত্যু কংগ্রেসের কাছে অনেক বড় ক্ষতি, তবে তার আদর্শ আমাদের কাছে শক্তিশালী পাথেয়। তাদের মতো নেতাদের আদর্শের বলেই এখনও মাথা উঁচু করে কংগ্রেস করছি। আমার বিশ্বাস একদিন পরিবর্তন হবে এবং তরুণ গগৈ বা সন্তোষ মোহন দেবের মতো নেতাদের আশীর্বাদে আমরা সেই কাজ সফল করে দেখাবো।”
উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সহ কংগ্রেস দলের বরাক উপত্যকার বরিষ্ঠ নেতা সিদ্দেক আহমেদ, অজিত সিং ও অন্যান্যরা এদিন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ বক্তব্য রাখেন। প্রত্যেকেই শোভাযাত্রায় যোগ দেন এবং অস্থি বিসর্জন ঘাটে উপস্থিত থাকেন। সিদ্দিক আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছেন তাদের ইচ্ছে রয়েছে অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তির মতো বরাকের কোনও একটা জায়গায় প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর মূর্তি প্রতিস্থাপন করার।
Comments are closed.