Also read in

করিমগঞ্জ থেকে লাডাক , পাহাড়প্রেমী গৌতম দের অসাধারণ সফরনামা।

ভ্রমণপিপাসু পাহাড় প্রেমিকদের মধ্যে অনেকেই আজকাল উড়ুউড়ু মন নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাইক নিয়ে শৈলসফরে। ঠিক এই কারণেই মোটর কোম্পানিগুলো বেশি ক্ষমতার বাইক নিয়ে আসছে, সে সবার ক্রেজ রয়্যাল এনফিল্ড-ই হোক অথবা সাহসী ভারতীয় বাইকার্সদের বাজাজ পালসার। উত্তর ভারতের পাহাড়ে বাইকে চড়ে উঠতে অনেকবারই দেখা গেছে। কিন্তু এমন ভ্রমণকাহিনী যদি হয় যেখানে স্কুটিতে করে লাদাখ ভ্রমণ সম্পন্ন হয়! চমকে উঠবেন, তাই তো? তবে এটাই সত্যি। করিমগঞ্জের গৌতম দে ৪৫ দিনে লাদাখ পৌঁছে গেছে স্কুটারে করে। তাও এই অতিমারী ও বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও।

গৌতম দে তার এই ভ্রমণ শুরু করে করিমগঞ্জ শহর থেকে একটি হোন্ডা এক্টিভা ১২৫ সি.সি. স্কুটারে। এপ্রিলের ১৩ তারিখে শুরু হয় তার এই রোমাঞ্চকর সফর। প্রথমে গুয়াহাটি, গুয়াহাটি থেকে শিলিগুড়ি, এরপর বিহারের মুজফফরপুর, সেখান থেকে উত্তর প্রদেশের লখনৌ। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আবার শুরু হয় পথচলা। গ্রেটার নয়ডা হয়ে চন্ডিগড়, আবার চন্ডিগড় থেকে ক্রমে জম্মু হয়ে শ্রীনগর। লকডাউনের জন্য সেখানে কিছুদিন থাকতে হয় তাকে। লকডাউন শিথিল হওয়া মাত্রই সে শুরু করে দেয় আবার তার স্কুটি যাত্রা। শ্রীনগর থেকে গৌতম পৌঁছে যায় সোনামার্গ এবং সেখান থেকেই বিখ্যাত যোজিলা পাস। এরপর কার্গিল, লে ছাড়াও সব বিখ্যাত জায়গাগুলো ভ্রমণ করে সে। ভাবতে অবাক কান্ড মনে হলেও একথা সত্যি যে গৌতম এই পুরো শহর সেরেছে শুধুমাত্র ৪৫ দিনে। ৪৫ দিনেই সে তার সফর সেরে করিমগঞ্জের বাড়িতে ফিরে এসেছে।

গৌতম জানায় যে সে ঘুরতে প্রচন্ড ভালোবাসে। তার কথায় “রোড ট্রিপগুলো আমার বেঁচে থাকার শক্তি।” গত চার বছরে এই সফর নাকি তার তৃতীয়। প্রথমবার নর্থ-ইস্টের ৬টি রাজ্য ঘুরে বেরিয়েছে সে ২০১৯ সালে। তারপর সে ছুটে যায় ভুটান। পরবর্তীতে ভারতের ১৩টি রাজ্যর রাস্তায় ভ্রমণ। এই সব কথা খুব আগ্রহের সাথে বরাক বুল্যিটিনকে জানায় দুই সন্তানের পিতা গৌতম।

পেশাগতভাবে গৌহাটি হাইকোর্টে কর্মরত গৌতম দেকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে কি কারণে সে লেহ-লাদাখের পরিকল্পনা করে, সে জানায়, “আমার স্বপ্ন ছিল স্কুটারে করে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো। অনেকগুলো জায়গা আগে ঘুরেছি এভাবে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে এবারে পাহাড় ঘুরব ঠিক একইভাবে। প্রকৃতি আমায় চিরকালই খুব টানে। তাই এই পাহাড়ি রাস্তা ধরে বেয়ে চলা যেকোনো ভ্রমণপ্রেমীর স্বপ্ন। তা সে স্কুটার দিয়েই হোক বা মোটরবাইক।”

কোরনার জন্য এইবারের সবকিছুতে কতটুকু ফারাক পড়েছে তা জিজ্ঞেস করায় সে জানায় যে অনেকটাই অন্যরকম ছিল। অনেক রাজ্যের লকডাউন থাকার সমস্যা তো রয়েছেই, তার সাথে আরও কিছু পার্থক্য অনুভব করেছে সে এবার। “এই যেমন অন্যবারের মতো এইবার নানা জায়গার রকমারি খাবার খেতে পারলাম না। মহামারীর কৃপায় পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম, নেই বললেই চলে।” কিন্তু এত কঠিন সময়ের মধ্যেও সে পিছিয়ে যায় নি। শেষে গৌতমের কথায়, “এই পর্যটন আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে। স্কুটার দিয়ে এত উঁচু পাহাড় চড়ার এই অভিজ্ঞতার স্মৃতি আমার কাছে আজীবন সম্পদ হয়ে থাকবে”।

Comments are closed.