"বৃহত্তর অসমিয়া সমাজের নামে বাঙালিকে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে বলছে সরকার," 'অসম বাঁচাও' অভিযানে আসা কংগ্রেস নেতৃত্বকে বলল বরাকবঙ্গ
নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের ‘আসাম বাঁচাও’ অভিযানের অংশ হিসেবে বুধবার শিলচরে শুরু হয়েছে বিশেষ শোভাযাত্রা। একটি বাস সহ বেশ কয়েকটি সাইকেল এবং অন্যান্য গাড়িতে এদিন সকালে শুরু হয় যাত্রাটি। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ক্লাব রোডের ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে থেকে শুরু করে বঙ্গভবন, শিলচর পুরসভা, জেলাশাসক কার্যালয় হয়ে ধলাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন কংগ্রেস নেতারা। মূলত এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব, সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং সহ স্থানীয় নেতারা। প্রথমদিন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে অনুরুদ্ধ সিং এতে অংশ নিয়েছেন।
ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে থেকে শুরু করে প্রথমে তারা বঙ্গভবনে উপস্থিত হন। সেখানে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সদস্যরা নিজেদের নানা অভিযোগ এবং সমস্যার কথা কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরেন। সঞ্জিব দেব লস্কর, তৈমুর রাজা চৌধুরী সহ অন্যান্য সদস্যরা বলেন, “বর্তমান সরকার চাইছে বৃহত্তর একটি অসমীয়া জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে এবং সরকারি তরফে সবধরনের সুবিধা শুধুমাত্র তাদেরই দিতে। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, যদি বাঙ্গালীদের সরকারী সহ অন্যান্য সুবিধা পেতে হয়, তাহলে নিজের অস্তিত্ব ভুলে অসমীয়া জনগোষ্ঠীর অংশ হতে হবে। এটা বরাক উপত্যকার বাঙালিরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, ফলে আমাদের বার বার বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এব্যাপারে কথা বলতে পারছেননা, তাই অন্তত শক্তপোক্ত একটা বিরোধী আওয়াজ দরকার যারা সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে।”
এরপর তারা শিলচর পুরসভায় উপস্থিত হন এবং পুরকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিশেষ করে যারা অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন সুস্মিতা দেব সহ কংগ্রেসের নেতৃত্ব। কর্মীরা জানান, বহুদিন ধরে তাদের বকেয়া বেতন আটকে রয়েছে। পাশাপাশি চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হয়নি। অতীতে এক কর্মচারী যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন, তবু সরকারের টনক নড়েনি।
সুস্মিতা দেব তাদের বলেন, “শিলচর পুরসভা আমাদের পরিবারের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এখানকার সমস্যা আমার কাছে নিজের ঘরের সমস্যার মত। হয়তো সবসময় নিজে আসতে পারি না কিন্তু পুরসভার কর্মীদের প্রত্যেক আন্দোলনে আমি পাশে রয়েছি। ”
সদরঘাট এলাকায় যেসব সবজি, ফল, চিড়া, মুড়ি ইত্যাদির বিক্রেতা রয়েছেন তাদের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতে বলেন কংগ্রেসের নেতারা। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এবং এর প্রভাব পড়েছে খুচরা ব্যবসায়ও, এমনটাই জানান কিছু কিছু সবজি এবং ফল বিক্রেতা।
প্রত্যেকের সমস্যার কথা শুনে সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সদরঘাট শনি মন্দিরে প্রণাম করে জেলাশাসক কার্যালয়ের সামনে ভীমরাও আম্বেদকরের মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তারা। এরপর শহরের বিভিন্ন মোড়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলার পর ধলাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
সুস্মিতা দেব জানান, যেখানে সীমান্ত সুরক্ষার থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থ প্রতিশ্রুতির কথা আলোচনা করবেন তারা। পাশাপাশি মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের নিখোঁজ হওয়া গাড়িচালকের বাড়িতেও যাবেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
Comments are closed.