শেষ রক্ষা হলোনা, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেলেন ইসতাক রসূল, শোক প্রকাশ আমিনুলের
চিকিৎসার জন্য তার কাছে সময় কম ছিল, ডাক্তারদের পরামর্শে বুধবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয় মধুরবন্দ এলাকার বাসিন্দা ৩৩ বছরের ইসতাক রসূল মজুমদারকে। সময়মত চিকিৎসা পাইয়ে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার যাওয়ার রাস্তায় গ্রিন করিডোর করে দেওয়া হয়। আধঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে কুম্ভিরগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দ্রুতগতিতে কলকাতা গিয়ে পৌঁছলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি, এর আগেই ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে শোক ব্যক্ত করেছেন উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর সহ অনেকেই।
হাইলাকান্দির প্রাক্তন যুগ্ম স্বাস্থ্য-সঞ্চালক আবেদ রসুল মজুমদারের ছেলে ইসতাক রসূল মজুমদার করোনা ভাইরাস সহ আরও কয়েকটি সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি শিলচরের গ্রীন হিলস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তার স্বাস্থ্যের ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে, ফলে ঠিক করা হয় বাইরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিলেও ডাক্তাররা বলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে নিয়ে যেতে হবে। আবেদ রসুল মজুমদারের ছোট ভাই আনিস রসূল মজুমদার কাছাড় জেলার প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক, তিনি এবং পরিবারের সদস্যরা মিলে সঙ্গে সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়।
জেলা দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভাগের পক্ষ থেকে জেসিকা রোজ লালসিম এক নির্দেশে পুলিশকে বলেন, যখন এম্বুলেন্স শহরের রাস্তা দিয়ে যাবে তখন গ্রিন করিডোর গড়ে তুলতে। অর্থাৎ রাস্তায় চলাচলকারী প্রত্যেক যান-বাহনকে সরিয়ে পরিষ্কার রাস্তা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তৈরি করতে। গ্রীন হিলস হাসপাতাল থেকে শুরু করে শিলচর শহর হয়ে বিমানবন্দর যাওয়ার রাস্তাকে কিছু সময়ের জন্য গ্রিন করিডোরে পরিণত করা হয়। বরাক উপত্যকার ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রোগীকে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে শহরের ব্যস্ততম এলাকাকে গ্রীন করিডোরে পরিণত করা হয়েছিল।
এক অ্যাম্বুলেন্সকে এত সুরক্ষা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেখে রাস্তায় চলাচলকারী প্রত্যেক যাত্রী আশ্চর্য হয়ে দেখেন দৃশ্যটি। কেউ কেউ ভাবেন হয়ত কোনও বড় ব্যক্তিত্ব যাচ্ছেন তাই রাস্তার এই অবস্থা। আবার কেউ কেউ বলেন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এটা করেছে প্রশাসন। তবে পরে যখন তারা জানতে পারেন এক মুমূর্ষ রোগীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্যই শিলচর শহরকে গ্রিন করিডোর করা হয়েছিল, প্রত্যেকে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
এতকিছুর পরেও যখন যুবকটিকে বাঁচানো যায়নি অনেকেই শোক প্রকাশ করেন। উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর বলেন, “একজন প্রতিভাবান যুবক অল্প বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের। তার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। পাশাপাশি কাছাড় জেলা প্রশাসনকে বিশেষ করে ধন্যবাদ দিতে চাই তারা আজ যে নজির স্থাপন করেছেন তার জন্য। যেহেতু যুবকটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল তাই তার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু প্রটোকল রয়েছে। আমরা সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং কিভাবে তার মৃতদেহ শিলচরে ফিরিয়ে আনা যায় সেটা দেখব। বিমানে আনতে না পারলে প্রয়োজনে বিশেষ গাড়িতে করে সড়কপথে তাকে নিয়ে আসা হবে।”
Comments are closed.