
প্রয়াত বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শিশুতোষ বসাক, শোকস্তব্ধ বরাকের ক্রীড়াঙ্গন
না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন শিলচরের ক্রীড়া সংগঠক শিশুতোষ বসাক। সবার কাছে শিশুদা নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। বেশ কিছুদিন থেকে বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। শিলচরের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা চলছিল তার। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েন শিশুতোষ বসাক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ক্রীড়াঙ্গন। এই অঞ্চলের খেলাধূলার শেকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন মাঠ-অন্তপ্রাণ এই সংগঠক। গোটা উপত্যকার খেলাধূলার জন্য তাঁর এই প্রয়াণ এক ভীষণ ক্ষতি।
শিশুতোষ বসাকের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৭ জানুয়ারি। বাবা প্রয়াত দৈবকিলাল বসাক। সেন্ট্রাল রোডে তাঁদের বাড়ি। সেই ছোট্ট বয়স থেকে খেলাকে তিনি মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। অল্পবিস্তর খেলেছেনও। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে স্কুল প্রতিযোগিতা দিয়ে তাঁর খেলোয়াড় জীবন শুরু। এরপর তরুণ সংঘ, শিলচর স্পোটিং এবং টাউন ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন।
ধীরে ধীরে তিনি চলে আসেন ক্রীড়া সংগঠনে। সাংগঠনিক জীবনের শুরুতেই তিনি অনুভব করেন প্রকৃতার্থে খেলাধূলার উন্নতি করতে হলে তাঁকে ঢুকে পড়তে হবে গ্রামে। গ্রাম থেকে বের করে আনতে হবে খেলোয়াড়। ১৯৬৪ সালে ১৯৬৬ দুই বছর তরুণ সংঘের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তরুণ সংঘের সম্পাদক হওয়ার পর শুরু হয় গ্রামে গঞ্জের পথে প্রান্তরে খেলোয়াড়ের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো। তিনি তাঁর সাংগঠনিক জীবনে উপত্যকার প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে ছুটে গেছেন খেলোয়াড়ের সন্ধানে। ছুটে গেছেন দেওয়ান, লাবক , কুম্ভা, কুম্ভীরগ্রাম, শালগঙ্গা, লেবুরবন্দ, লালবাগ, ডলু , ময়নাগড়, হাতিমারা, জালালপুর, জারইলতলা, কাটাখাল, শালচাপড়া, বক্রিহাওর, পলারপার , চড়িলাম, পাঁচগ্রাম। বরাকের এরকম কোনও স্থান নেই , যেখানে গ্রামীণ প্রতিযোগিতা হয়েছে, অথচ তিনি যাননি। তরুণ সংঘের সম্পাদক থাকাকালীন শিলচর ফুটবলে প্রথমে রংমাইদের মাঠে আনেন। চেংকুনকাবুই, নেপাল কাবুইদের শিলচরের মাঠে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর একটা ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে রংমাই সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেরাই ক্লাব গঠন করেছে। তরুণ সংঘের পর খেলা পাগল শিশুতোষ বসাক শিলচর স্পোর্টিং ক্লাব এবং টাউন ক্লাবের হয়ে কাজ করেন। রিক্রুটার হিসেবে নিজের পরিচিতি বাড়িয়েছেন।
১৯৮৩ সালে শান্তনু চৌধুরী , আশুতোষ দেবনাথ , উত্তম পালরা শিশুতোষ বসাককে গ্রিন হনেট ক্লাবের হয়ে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। যোগ দিলেন গ্রিন হর্নেটে। সেই থেকে গ্রিন হর্নেটের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বহু বছর ছিলেন সচিব। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিলেন ক্লাবের সভাপতি।
ছয়ের দশক থেকে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। যখন যে কাজ দেওয়া হয়েছে, সেই কাজ করেছেন হাসিমুখে। কাউকে কোনও সময় ‘না’ করেননি। এমনকি ফুটবল মাঠে সহকারি রেফারি হিসেবেও দেখা গেছে তাঁকে। তবে কোনও ব্রাঞ্চ সচিব হতে পারেননি। বলস বিভাগের সহ-সচিব হয়ে কাটালেন কিছুদিন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে এই অবদানের জন্য ২০১১ সালে ক্রীড়া পেনশন পেয়েছিলেন।
Comments are closed.