Also read in

বরাকের জল শিলচরে এখনও বেড়ে চলেছে: বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি।

বরাক সহ অন্যান্য উপনদীগুলির জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় জল কমিশন সূত্রে জানা গেছে যে বরাক এবং তার উপনদী গুলির জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বর্তমানে কিছু কিছু স্থানে প্রায় স্থিতাবস্থায় রয়েছে। কোন কোন স্থানে নদীর জল সামান্য কমছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আজ রাত নয়টায় স্থানীয় অন্নপূর্ণা ঘাটে বরাক নদীর জলসীমা ছিল ২১.২৬ মি ওই স্থানে বরাক নদীর বিপদ সূচক চিহ্ন ১৯.৮৩ মিটার; ওই স্থানে জল বাড়ছে। বদরপুর ঘাটে আজ সন্ধ্যা ছটায় বরাক নদীর জলসীমা ছিল ১৭.৯৫ মিটার, এই স্থানে নদীর বিপদ সূচক চিহ্ন হল ১৬.৮৫ মি। এখানে জল সামান্য কমছে বলে জানা গেছে। করিমগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর জলসীমা আজ সন্ধ্যা ছটায় ছিল ১৬.৩৯ মিটার। এখানে বিপদ সূচক চিহ্ন হচ্ছে ১৪.৯৪ মি । আগামীকাল সকালে জল কমে ১৬.৩৭ মিটারে দাঁড়াতে পারে। এদিকে মাটিজুড়িতে কাটাখাল নদীর আজ সন্ধ্যা ছটায় জল স্তর ছিল ২২.৪৩ মিটার। এখানে জলের বিপদ সূচক চিহ্ন হচ্ছে ২০.২৭ মিটার। এখানেও জল কমার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।

শিলচর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকে পড়ায় সাধারণ মানুষকে ব্যাপক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিলচর শহরের নিউ কলোনি, রংপুর,ইটখলা, কালীবাড়িচর বেতুকান্দি, সিঙ্গারি ইত্যাদি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
শিলচর শহরে অনেকগুলি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। শিবিরগুলো হচ্ছে যথাক্রমে নর্মাল স্কুল বোর্ডিং, ল’কলেজ, অসম সাহিত্য সভা স্কুল, তরুন রাম ফুকন স্কুল, একে নন্দী পাঠশালা, নৃত্যময়ী স্কুল, মক্তব স্কুল, মালিনী বিল মার্কেট কমপ্লেক্স, শিলচর সরকারি উচ্চতর বিদ্যালয় প্রভৃতি। রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। সাতটি নৌকা উদ্ধার-কাজে লাগানো হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ২৭১ জন লোককে উদ্ধার করা হয়েছে, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে।
বরাক উপত্যকার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে জল সম্পদ, বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী কেশব মোহন্তআগামী রবিবার বরাক উপত্যকায় আসছেন । মন্ত্রী শ্রীমহন্ত পাথারকান্দি, হাইলাকান্দি ইত্যাদি অঞ্চল ভ্রমণ করে রাত আটটায় শিলচর আবর্ত ভবনে তিন জেলা প্রশাসন এবং জল সম্পদ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হবেন।

এদিকে হাইলাকান্দি পূর্ত বিভাগের সহকারি বাস্তুকার এক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানিয়েছেন যে ৫৩ নম্বর জাতীয় সড়কের শিলচর বদরপুর অংশের ১৭ থেকে ১৮ কিলোমিটার অংশ জলে প্লাবিত হওয়ায় ওই অংশে আজ থেকে সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। শিলচর কালাইন সড়কের হিয়ারপার এলাকায় একটি কালভার্ট ধসে যাওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বন্যায় হাইলাকান্দিতে আশি হাজার লোক আক্রান্ত, জল কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যার্তদের ।
ধলেশ্বরী ও কাটাখাল নদীর জল ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় শুক্রবার থেকে হাইলাকান্দির বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বাস্তবে বন্যাক্রান্ত এলাকায় জনতার দুর্ভোগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা মারাত্মক হারে দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্যের আকাল দেখা দেওয়ায় গৃহপালিত পশুর মালিক, গৃহস্থরা বিপাকে পড়েছেন। জেলার অধিকাংশ এলাকার
রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যাবস্থা এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। শাক শব্জী থেকে শুরু করে খাদ্য সামগ্রীর সংকট দেখা দেওয়ায় এক হাহাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আলগাপুর রাজস্ব চক্রে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখন পর্যন্ত শত শত ঘর বাড়ি, রাস্তাঘাট জলের তলায় রয়েছে।
যদিও জেলা তথ্য ও জনসংযোগ আধিকারিক সাবির নিষাদ জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে চাল, ডাল,লবন সহ ত্রাণসামগ্রী বন্টন করা হচ্ছে। পানীয় জল পরিশোধক সামগ্রীও বিতরন করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই বন্যায় জেলার লালা,কাটলিছড়া,হাইলাকান্দি ও আলগাপুর রাজস্ব চক্র এলাকার ১২৩ একশো তেইশ টি গ্রামের প্রায় আশি হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন। । ১৬৪২ হেক্টর কৃষিজমির ফসল নষ্ট হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৫৫ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি শিবিরে চাল, ডাল, লবন দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে এন ডি আর এফ ও এস ডি আর এফ বাহিনী বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা থেকে ২৭১ জন লোককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌছে দেয়। বন্যায় জেলার এগারটি সড়ক কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় থাকা নয়টি এন আর সি সেবাকেন্দ্রের নথিপত্র নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে ।

Comments are closed.