Also read in

ফলক ভাঙ্গা ! করিমগঞ্জ ডিসি'কে শোকজ করলেন মিজোরামের মামিত জেলার মনরেগা প্রকল্পের ডিপিও

বরাক উপত্যকার তিন জেলার সঙ্গেই মিজোরামের সীমান্ত রয়েছে এবং তিন জায়গাতেই সীমানা সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে। কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় অসম এবং মিজোরামের মুখোমুখি বৈঠকে অসমের জমি থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার কথা দিলেও এখনও লায়লাপুর থেকে নিজেদের বাহিনীর সরায়নি মিজোরাম। এবার করিমগঞ্জের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে জমি দখল এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ এনে তাকে শোকজ করেছেন মিজোরামের সীমান্ত জেলা মামিতের ডিপিও এইচডি লালপেকমাওয়িয়া। মঙ্গলবার করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবামুথান এমপির উদ্দেশ্যে এই নোটিশ পাঠান তিনি।

তিনি তার শোকজ নোটিশে লিখেছেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি ৯ অক্টোবর মামিত জেলার থিংঘলুন এলাকায় অসমের পুলিশ বাহিনী চড়াও হয় এবং সেখান মিজোরামের সম্পত্তি ধ্বংস করে। এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবামুথান এমপি। তাদের সাহায্য করেছেন অসম রাজ্যের বন বিভাগের আধিকারিকরা। এই প্রক্রিয়ায় মিজোরামের বেশকিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। তবে তার থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে, কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের অধীনে নির্মিত বিভিন্ন কাজ ধ্বংস করা হয়েছে, যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

এমজিএনরেগা প্রকল্পের অধীনে নির্মিত কাজ ধ্বংস করার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে করিমগঞ্জের জেলাশাসককে, এমনটাই হুমকি দিয়েছেন মামিতের এই আধিকারিক। আনবামুথান এমপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “অসম রাজ্যের সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনি যেভাবে কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পে বানানো কাজ ধ্বংস করেছেন, এর জবাবদিহি আপনাকে করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে এব্যাপারে কেন্দ্র সরকারের দ্বারস্থ হব। আমরা চাই আপনারা এলাকা থেকে সরে যান এবং যেগুলো সম্প্রতি ধ্বংস করেছেন সেগুলো অতিসত্বর পুনরায় বানিয়ে দিন। অন্যথায় আমরা আপনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”

এবার কথা হচ্ছে কেন মিজোরামের এক আধিকারিক অসমের এক জেলাশাসককে কেন্দ্র সরকারের দোহাই দিয়ে এত হুমকি দিচ্ছেন? লায়লাপুর সীমান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার জমি দখল করেছে মিজোরামের পুলিশ বাহিনী। কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধির সামনে মিজোরামের গৃহসচিব কথা দিয়েছিলেন তারা পুলিশ বাহিনীর সরিয়ে নেবেন, কিন্তু সেটা হয়নি। বরং এখনও সেই এলাকায় অসমের কোনও আধিকারিক প্রবেশ করতে পারছেন না। মঙ্গলবার কাছাড়ের বন বিভাগের ডিএফও সানিদেও চৌধুরীকে প্রবেশ করতে দেয়নি মিজো বাহিনী। অবশ্যই এটি কেন্দ্র সরকারের নির্দেশের অবমাননা। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরেও মিজোরামের বাহিনী অসমের জমি থাকা একটি সরকারি বিদ্যালয় বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল। বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজে বয়ান দিয়েছিলেন কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিক। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অসম এবং মিজোরামের গৃহসচিব। অথচ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে উল্টো প্রচার করছে মিজোরাম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরাম থাঙ্গা টুইট করে বলেন এসব তথ্য ভুল, তারা এই কথাগুলো মানেননা। অসমের পক্ষ থেকে কথা দেওয়া হয়েছিল পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হবে, সেই কথা রাখা হয়েছে। তবে মিজোরামের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর সরিয়ে নেওয়ার কথা রাখা হয়নি।

কাছাড়ের পুলিশ সুপার এব্যাপারে বলেছিলেন, “মিজোরামের পুলিশ কবে পিছু হটবে বা তারা আদৌ যাবে কিনা, এটা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্র সরকারের। তারা আমাদের আগামীতে যেসব নির্দেশ দেবেন আমরা সেটা পালন করবো।”

কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী অসমের জমি থেকে মিজোরাম যদি তাদের পুলিশবাহিনী না হঠায় তাহলে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারের দোহাই দিয়ে করিমগঞ্জের জেলাশাসককে শোকজ করা একটি চক্রান্ত মাত্র, বলে মনে করছেন অনেকেই।

Comments are closed.