Also read in

পুজোর নতুন এসওপি বানাচ্ছে স্বাস্থ্যবিভাগ, সেটাই মানবে কাছাড় প্রশাসন, চাপের মুখে রাজি হলেন জেলাশাসক

দুর্গাপুজোর এসওপি নিয়ে জেলার প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তি অসন্তুষ্ট। এমনকি জনপ্রতিনিধিরা কড়া ভাষায় এর প্রতিবাদ করছেন। চাপের মুখে এসওপি সংশোধন করতে রাজি হয়েছেন জেলাশাসক। তবে পুরোপুরিভাবে নিয়ম পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। কাছাড় জেলায় গত কয়েকদিন ধরে এসওপি নিয়ে যে জনরোষ দেখা দিয়েছে, এর খবর গুয়াহাটি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এবার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ দুর্গাপূজায় বিধি-নিষেধের একটি তালিকা বানিয়ে পাঠাবে। সেই অনুযায়ী কাছাড় জেলায় সংশোধিত এসওপি জারি করা হবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যে নির্দেশাবলী দেওয়া হবে সেটা রাজ্যের ৩৩টি জেলার কথা ভেবে গঠন করা হবে।

প্রথম থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এসওপির বিরোধিতা করেছেন স্থানীয় জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিরা। চাপের মুখে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের ফেইসবুক পেইজে ১৬ সেপ্টেম্বর মুখ্যসচিবের পক্ষ থেকে জারি করা একটি নির্দেশাবলীর কপি আপলোড করা হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মুখ্যসচিবের জারি করা নির্দেশকে উপেক্ষা করেই কাছাড় জেলার এসওপি গঠন করা হয়েছিল। ১৬ সেপ্টেম্বরের নির্দেশে মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণা বলেছিলেন, রাস্তা আটকে বা রাস্তা-সংলগ্ন এমন কোনও জায়গায় পুজো করা চলবে না যার ফলে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটে। অথচ জেলাশাসক তার নির্দেশনামায় বলে দিলেন, কোনওধরনের প্যান্ডেল বানানো চলবে না, শুধুমাত্র স্থায়ী মণ্ডপেই পুজো হবে। এমন আরও কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে যেগুলো পড়লে দেখা যায় জেলাশাসক সরাসরি মুখ্যসচিবের নির্দেশের অবমাননা করেছেন।

মঙ্গলবার সাংসদ রাজদীপ রায় জেলাশাসক কীর্তি জল্লির সঙ্গে সরাসরি এবিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনীতে রাজি হয়েছেন জেলাশাসক। তবে পুরো এসওপি পরিবর্তন হয়ে যাবে, এমনটা নয়। দ্বিচক্রযান চলবেনা এব্যাপারে আমরা তার সঙ্গে সহমত। শুধুমাত্র রাস্তা আটকে প্যান্ডেল বানিয়ে যেগুলো পূজা হয় সেগুলো বন্ধ করা হবে। যাদের পুজোর জন্য খালি জায়গা রয়েছে, সেটা রাস্তার পাশে হোক বা কোনও মাঠে, তারা প্যান্ডেল বানিয়ে পুজো করতে পারবেন। রাত দশটা পর্যন্ত মন্ডপ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে। মূর্তির সাইজ ৫ ফুট করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেটাও পরিবর্তন হবে। মাইক বাজানোর ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ শিথিল করা হবে। একটি নির্দিষ্ট ডেসিবেল পর্যন্ত মাইক বাজানোর অনুমতি থাকবে। এটি অমান্য করলে পূজা আয়োজকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অঞ্জলি প্রদানের ক্ষেত্রেও নিয়ম পরিবর্তন হবে, যদি প্যান্ডেলে বেশি জায়গা থাকে তাহলে একসঙ্গে বেশি মানুষ অঞ্জলি দেবেন। অঞ্জলি প্রদানের নাম করে যাতে ভিড় না হয় সেটা মনে রাখতে হবে।

দূর্গাপুজোর ব্যাপারে প্রশাসনের নির্দেশাবলীর বিরোধিতা করছেন প্রায় প্রত্যেক সাধারণ মানুষ। জেলা বিজেপি থেকে শুরু করে বজরং দল সহ নানান সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকেই নিয়মাবলীর পরিবর্তন চেয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে চিঠি লিখে নির্দেশনামার সংশোধন চাওয়া হয়েছে, সঙ্গে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল জেলাশাসকের জারি করা নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেন। সোমবার একটি সরকারি অনুষ্ঠানে জেলাশাসককে সরাসরি প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, “সম্প্রতি পুজো এসওপি প্রকাশ করা হলো, এতে বেশ কিছু বিধিনিষেধের উল্লেখ রয়েছে যার কোনও সম্পর্ক করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে নেই। যেমন মাইক বাজানো যাবে না, আলোকসজ্জা করা যাবে না, ইত্যাদি। মাইক বাজালে বা আলোকসজ্জা সাজালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কোনোভাবেই বৃদ্ধি পেতে পারে না। জেলাশাসক মূর্তির সাইজ ঠিক করে দিলেন, বললেন পাঁচ ফুটের বেশি হবে না এবং এক কাঠামো হতে হবে। আমরা মানছি বড় মূর্তি হলে বেশি মানুষকে বিসর্জনে যেতে হবে, তবে সেটা অন্তত পুজোর দুমাস আগে জানানোর কথা ছিল। পুজোর কুড়ি দিন আগের পরিস্থিতি দেখলে জেলাশাসক জানতে পারতেন, প্রায় প্রত্যেকেই মূর্তি বানিয়ে নিয়েছেন। এখন কিভাবে ভেঙ্গে ছোট করবেন?

পাশাপাশি জেলাশাসক বলেছেন রাত দশটার মধ্যে পূজোর মন্ডপ বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি শিলচরের পুজো আগে দেখলে বুঝতে পারতেন মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে থাকেন। নিয়মাবলী বানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসমাগম কম করা। যদি পুজোর সময় কমিয়ে দেওয়া হয়, এক সময় একসঙ্গে অনেক বেশি মানুষ জড়ো হবেন, যেটা কাম্য নয়। তাই এক্ষেত্রেও আরও স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন। দুর্গাপুজো একটি বিশ্বজনীন উৎসব, সাধারণ মানুষকে সচেতন ও শিক্ষা দেওয়া ভালো, তবে জোর করে নিয়ম চাপিয়ে দিলে এর ফল উল্টো হতে পারে। তাই প্রয়োজনে আবার বৈঠক হোক এবং একটি এমন ছবি তৈরি হোক যাতে দুই দিক বজায় থাকে।

এই পরিস্থিতিতে উৎসবের নামে জনসমাগম হোক এটা কেউ চান না। গত ছয় মাসে যেমন ভাবে সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি সামাল দিতে লড়াই করেছে সাধারণ মানুষ নিজের সচেতনতার মাধ্যমে তাদের সাহায্য করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপুজো শুধুমাত্র একটি পুজো নয়, অত্যন্ত প্রিয় একটি অনুষ্ঠান, যার জন্য প্রত্যেক মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করেন। কেন সরকার আনলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একের পর এক ছাড় দিচ্ছেন। তারা রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কিছু ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। তবে এই ক্ষমতার অপব্যবহার হোক এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।

পুজো কমিটিগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “প্রত্যেক আয়োজকদের মনে রাখতে হবে যাতে কোনোভাবেই জনসমাগম না হয়। মণ্ডপে একসঙ্গে বেশি মানুষ ঢুকবেন না, মন্ডপের গেটে সেনিটাইজার রাখতে হবে। আয়োজকদের নজর রাখতে হবে কেউ যেন মাস্ক ছাড়া মণ্ডপে প্রবেশ করতে না পারেন।”

Comments are closed.