যোগাচার্য স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি
স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো ভাষণের একশ পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হলো আজ শিলচরেও। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে স্বামী বিবেকানন্দের আমেরিকার শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বমহাধর্ম সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতা সমগ্র বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছিল। এই উপলক্ষে আজ সদরঘাটের স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিমূর্তি থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর পরিক্রমা করে রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে শেষ হয়। শোভা যাত্রায় কাছাড় জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সহ অসংখ্য ভক্ত-অনুগামী যোগদান করেন। রামকৃষ্ণ মিশন এবং বিবেক বাহিনী,শিলচর এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা । রামকৃষ্ণ মিশনের বৈকুন্ঠানন্দজি মহারাজ ও এই শোভাযাত্রায় সামিল হন।
বিকেল ৩-৩০ মিনিটে শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে সেই মুহূর্তকে স্মরণ করা হয়। এই উপলক্ষে এক মাসব্যাপী বিভিন্ন জনসেবামূলক কার্যসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল মইনগরের সাঁওতাল বস্তিতে, ১৩ই সেপ্টেম্বর ধলাইয়ে, ১৭ ই সেপ্টেম্বর কাটাখালে এবং ১৯শেসেপ্টম্বর আয়না খালে বস্ত্র বিতরণ করা হবে। আগামী একুশে সেপ্টেম্বর বদরপুর রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের কার্যসূচি শেষ হবে।
আগামী ৬ ও ৭ অক্টোবর যুব সম্মেলন এবং ৮ই অক্টোবর ভক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
আসুন আমরা সেই বিখ্যাত বক্তৃতা সম্বন্ধে একটু জেনে নেই।
স্বামীজি সেই বিখ্যাত বক্তৃতা শুরু করেন ‘সিস্টারস অ্যান্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা’ সম্বোধন করে। সাত হাজার দর্শক-শ্রোতা দাঁড়িয়ে উঠে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন সেই তরুণ সন্ন্যাসীকে। দু’ মিনিট ধরে চলল হাততালি। ফলে সেই সন্ন্যাসীর জন্য বরাদ্দ সময় বাড়াতে বাধ্য হলেন উদ্যোক্তারা। আমেরিকা-সহ বিদেশ জয় শুরু হল স্বামী বিবেকানন্দের।
কী বলেছিলেন সেদিন,
“সংকীর্ণ ভাবনাই আমাদের মধ্যে এত ঝগড়াঝাঁটির কারণ। আমি একজন হিন্দু – আমি আমার ছোট্টো কুয়োর মধ্যে বসে আছি আর সেটাকেই গোঁটা পৃথিবী ভাবছি। খ্রিস্টান ধর্মে যিনি বিশ্বাসী, তিনি তাঁর নিজের ছোট্টো কুয়োয় আর সেটাকেই গোটা দুনিয়া মনে করছেন। মুসলমানও নিজের ছোট্টো কুয়োয় বসে আছেন আর সেটাকেই গোটা জগৎ মনে করছেন।
… যতই মিলমিশের কথা বলো, তার মধ্যে কিছু লোক এমন কথা বলবেই যাতে সেই মিলনের সুরটা কেটে যাবে। আমি সেই কথাগুলোকেও বিশেষ ধন্যবাদ দিই, কারণ তারা জোরালো বিরোধ দেখিয়েছে বলেই তো আমাদের এই সামগ্রিক মিলন গানের সুর আরও বলিষ্ঠ ও দৃঢ় হয়ে উঠছে।”
…বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সাধারণ ঐক্যের ভিত্তি ঠিক কোন্ জায়গাটায়, তা নিয়ে অনেক বলা-কওয়া হয়ে গেছে। এই কথাটা বলা জরুরি মনে করি; কেউ যদি মনে করে একটা নির্দিষ্ট ধর্ম জিতে যাবে, আর বাকি সব ধর্ম খতম হয়ে যাবে, আর সেই ভাবে ঐক্য আসবে, তবে তাকে একটাই কথা বলার – এই আশা বাস্তবে মোটেও ফলবে না। প্রত্যেককে অন্যের ধর্মের সারটুকু নিতে হবে, অন্য ধর্মের প্রতি মর্যাদা দিতে হবে। আবার নিজের ধর্মের নিজস্বতাকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পবিত্রতা, ঔদার্য — এগুলো কোনো বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়ের সম্পত্তি নয়। সব ধর্মসম্প্রদায়ই যুগেযুগে খুব উঁচু চরিত্রের মানুষের জন্ম দিয়েছে।
…চোখের সামনে এত সব তথ্যপ্রমাণ সত্ত্বেও, কেউ যদি স্বপ্ন দেখে, তার নিজের ধর্মটি, একলা বিরাট হয়ে বেঁচে থাকবে, আর অন্যগুলি নিপাত যাবে, সেটা ভুল। তাকে জানতে হবে, যতই বাধা আসুক না কেন, সব ধর্মের পতাকায় খুব শীঘ্রই লেখা থাকবে, ‘বিবাদ নয়, সহায়তা। বিনাশ নয়, আত্মস্থ করা। মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি’।”
Comments are closed.