Also read in

দিল্লি পাঠিয়ে বিনা খরচায় আমার চিকিৎসা করিয়েছিলেন হিমন্তই

রাজ্যসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম তাঁকে নিয়ে। কেউ বলছেন বিশ্বাসঘাতক, বিজেপির এজেন্ট। তিনি অবশ্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। এই অবস্থায় কী হবে তাঁর রাজনীতির রোড?

বিজেপিই কি পরের স্টেশন? বরাক বুলেটিনের সমস্ত প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিলেন সিদ্দেক আহমেদ। শুনলেন তনুজ ধর।

.

প্রশ্ন: কেমন আছেন?

সিদ্দেক: ভালই। এই বসে আছি আর কী!

প্রশ্ন: রাজ্য রাজনীতিতে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে আপনি এভাবে নির্লিপ্ত?

সিদ্দেক: আমি কিন্তু জাস্ট নিজের ভোটটাই ঠিকঠাক দিয়েছিলাম। সেটাকে নিয়ে ঝামেলা তৈরি করল অন্যরা।

প্রশ্ন: কমলাক্ষ ও পৃথ্বীরাজ শাঠেকে দুষেছেন আপনি। কিন্তু কীভাবে তাঁরা আপনার ঘোর বিরোধী হয়ে উঠলেন, সেটাই তো বোঝা গেল না।

সিদ্দেক: গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে টিকিট দেওয়ার জন্য আমার কাছে পৃথ্বীরাজ শাঠে পাঁচ কোটি চেয়েছিলেন। আমি দিতে অস্বীকার করি। তারপর থেকেই ওই লোকটি কার্যত আমার পেছনে পড়ে যায়। কীভাবে আমায় সমস্যায় ফেলা যায়। এক বছর পর তা-ই করল এবার।

প্রশ্ন: আর কমলাক্ষ?

সিদ্দেক: ও তো বরাবরই আমায় প্রবল অপছন্দ করে। সেই গৌতম রায় করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসে প্রবল ক্ষমতাশালী থাকার সময় ত্থেকেই। প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি হওয়ার পরে এমনিতেই কমলাক্ষের মাথা ঘুরে গেছে। রাজ্যে পুরো কংগ্রেস দলের মালিকানা ওঁর কাছে এসে গিয়েছে বলে ভাবছে। আর তখন থেকেই আমার বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটছে সে। যদিও কী কারণে কমলাক্ষ এমনটা করে, তা আমার জানা নেই। কারণ আমি তো কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করিনি।

প্রশ্ন: গত বিধানসভা ভোটে মনোনয়নের সময় যে শোনা গেল কমলাক্ষ দক্ষিণ করিমগঞ্জ থেকে আপনাকে চেয়েছিলেন!

সিদ্দেক: একদম বাজে কথা। ও তো চাইছিল যাতে আমার নাম কাটা যায়।

প্রশ্ন: অনেকবারই বলেছেন আপনি ঠিক ভোট দিয়েছিলেন এবারের রাজ্যসভা ভোটে, তাহলে গণ্ডগোলটা লাগল কোথায়?

সিদ্দেক: ভোট মিটে যাওয়ার পর বিধানসভায় কংগ্রেস দলের অফিসে প্রায় আড়াই-তিনঘণ্টা ছিলাম। অনেকেই একসঙ্গে বসে আড্ডা মারলাম। তখন একবারও আমার ভোট দিতে ভুল হয়েছে এই কথাটাই উঠল না। রিপুন বরার দ্বিতীয় নির্বাচনী এজেন্ট নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বললেনও যে, সব কংগ্রেস বিধায়কদের ভোটই আমরা পেয়েছি, কেবল শশীকান্ত দাস ছাড়া। তাছাড়া যদি ভোট দিতে আমি ভুলই করতাম, তবে ঠিক ওই সময়ই কেউ সেটা বলতে পারত। কিন্তু তা-ও হল না। পরে আচমকাই পৃথ্বীরাজ শাঠে বলতে শুরু করলেন যে, আমি ভুল ভোট দিয়েছি।

প্রশ্ন: গোটা বিষয়ে আপনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সিদ্দেক: সেটা শুধু ফাঁকা আওয়াজ নয়। মামলা আমি করবই। তবে প্রথমে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে সবকিছু জানাচ্ছি। তারপর আদালতে যাব।

প্রশ্ন: আর কোন দলে যাবেন তা ভেবেছেন কি?

সিদ্দেক: আমি আপাতত কয়েক বছর কোনও দলে যাচ্ছি না। একজন নির্দল বিধায়ক হয়েই থাকতে চাই। অন্তত তিন বছর পর দেখা যাবে।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি বিজেপিতে যাচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন সবদিকে।

সিদ্দেক: বিজেপিতে আমি যাচ্ছি না। যাওয়া সম্ভবও নয়। আমার বিধানসভা কেন্দ্রের জনবিন্যাসের কথা ভাবলে এ কথা সহজ বোধগম্য।

প্রশ্ন: কংগ্রেসে ফেরার কোনও সম্ভাবনা আছে কি?

সিদ্দেক: কোনও চান্স নেই। ওই দলে আমার দিন শেষ।

প্রশ্ন: আপনার পুরনো সতীর্থ সুস্মিতা এখন তৃণমূল করছেন। ওই পথের কথাও তো ভাবতে পারেন।

সিদ্দেক: তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই।

প্রশ্ন: তাহলে সিদ্দেক আহমেদ এখন কেবল একজন দলহীন বিধায়ক। অসুবিধে হবে না?
সিদ্দেক: একদম না। বরং কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। কংগ্রেসে থাকলে এলাকার উন্নয়নের কোনও কাজ নিয়ে বিজেপি নেতাদের কাছে গেলে সমস্যা হত। এখন আর সেটা নেই। খোলামনে সবার কাছে যেতে পারব।

প্রশ্ন: কমলাক্ষরা তো সেটাই বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদে আপনি রাজ্যসভা ভোটে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।

সিদ্দেক: দেখুন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার যে ব্যক্তিগত নৈকট্য রয়েছে, তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু এর সঙ্গে দলীয় রাজনীতর কোনও যোগাযোগ নেই। এ কেবল দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক। আর এটা তো আজ নয়। দু’দশক ধরে রয়েছে। আমার যখন হার্ট অ্যাটাক হল, হিমন্ত বিশ্ব শর্মাই দিল্লি পাঠিয়ে বিনা খরচায় চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। গত পাঁচ বছর বিধায়ক না থাকার সময়ও তাঁর আর আমার সম্পর্ক একই রকম ছিল। বহু বিষয়ে তখনও আমায় সাহায্য করেছেন তিনি।

প্রশ্ন: এই ব্যক্তিগত সম্পর্কের রেশ ধরেই আপনি বিজেপিতে যাওয়ার গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। এতে আপনার ভোটাররা দূরে সরতে পারে।

সিদ্দেক: এটা ঠিক, কিছু লোক ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। তবে আমি নিশ্চিত, দক্ষিণ করিমগঞ্জের ভোটদাতারা এসব প্ররোচনায় পাঁ দেবেন না। আর দেখুন না, অনেক জায়গায় কমলাক্ষ, ভূপেন বরাদেরই কুশপুতুল পুড়ছে। কই, দক্ষিণ করিমগঞ্জে কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনও বিক্ষোভ নেই।

প্রশ্ন: কংগ্রেসের কারও সঙ্গে এর পরে কথা হয়েছে কি?

সিদ্দেক: হ্যাঁ। অনেকেই ফোন করেছেন।

প্রশ্ন: কাল ভূপেন বরা ফোন করলে ফিরতে পারেন কি কংগ্রেসে?

সিদ্দেক: নাহ্‌। কংগ্রেসের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। দেখলেন তো শিলচর জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে কী ঘটল। আমি আজই বলে দিচ্ছি, অসমে আর কোনওদিন কংগ্রেস ফিরতে পারবে না ক্ষমতায়।

Comments are closed.

error: Content is protected !!