"কেন্দ্র সরকার বললে পুরো কাছাড় মিজোরামকে দিয়ে দেবো, তা না হলে এক ইঞ্চিও ছাড়বো না," শিলচরে দাঁড়িয়ে শান্তির বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
সোমবার অসম-মিজোরাম সীমান্তে মিজো দুষ্কৃতিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন অসম পুলিশের ৫ জন জওয়ান, এছাড়া অনেকে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ঘটনার ১২ ঘন্টার মাথায় বরাক উপত্যকায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি নিহত পুলিশ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানান।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “অসম এবং মিজোরামের মধ্যে সীমা নির্ধারণ নিয়ে যে বিবাদ দেখা দিয়েছে সেটা রাজনৈতিক নয়। আমরা কাল দেখতে পেয়েছি মিজোরামে সাধারণ মানুষ হাতে বন্দুক নিয়ে ভিডিও বানাচ্ছেন। অসমের পুলিশ মারা যাবার পর তারা উল্লাস করছেন, যেন কোন বিদেশের সৈনিককে হত্যা করেছেন। এটা একেবারেই সাধারণ সীমান্ত বিবাদ নয়। মায়ানমার থেকে ১০ হাজার লোক মিজোরামে ঢুকে পড়েছে যারা মূলত অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত। গত কয়েক মাসে আমরা অসমের ভেতর ড্রাগস বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি, পশুর স্মাগলিং বন্ধ হয়ে গেছে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এতে একাংশ লোকের অসুবিধা হচ্ছে এবং তারাই বারবার সীমান্তে অশান্তি ছড়ানোর কাজ করছে। যখন সীমান্তে গুলি চলছিল, সেই সময় আমি মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছি এবং তাকে বলেছি এই বিষয়গুলো নিয়ে পর্যাপ্ত তদন্ত করতে। শুধুমাত্র অসমের কথা ভেবে নয়, মিজোরামে যদি কিছু লোক হাতে বন্দুক নিয়ে সাধারণ সমাজে ঘোরাফেরা করে, তবে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। এই বিষয়গুলো কেন্দ্র সরকারের নজরে আনা হয়েছে এবং আগামীতে এর সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বন্দুকের গুলির বদলে গুলি চালাতে বিশ্বাস করিনা, এটা আমাদের ডিএনএ নয়। কোনও অবস্থাতেই ভারতীয় নাগরিকদের ওপর আমরা গুলি চালাবো না। এতে যদি আরও জমি চলে যায়, যাক। কোনও ভারতীয় আরেকজন ভারতীয়ের গায়ে গুলি চালাতে পারেনা, মিজোরামে যারা এসব কাজ করছে, তারা কতটুকু ভারতীয় এই বিষয় নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা মিজোরামের কাছ থেকে জমি নিতে চাই না, অসমের জমিতে থাকা বনাঞ্চল রক্ষা করতে চাই। আমি মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি আপনি স্যাটেলাইট ইমেজগুলো দেখুন এবং নিজেই বিশ্বাস করবেন কিভাবে মিজোরামের দিক থেকে অসমের বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। তারা যদি এসব বন্ধ না করেন, আমরা প্রয়োজনে সুপ্রিমকোর্টের কাছে আবেদন জানাবো।”
তিনি জানান, ৮ জুন দিল্লিতে এক বৈঠক চলাকালীন মিজোরামের সরকারকে একটি চুক্তিপত্রে সই করতে অনুরোধ জানিয়েছিল অসম সরকার। দুই রাজ্যের সীমানার কাছাকাছি যেসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে সেটা রক্ষার ক্ষেত্রে দুই পক্ষ সমানভাবে কাজ করবে, এমনটাই ছিল চুক্তি। তবে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী সেটা মানতে রাজি হননি বলে দাবি করেছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
তিনি বলেন, “বনাঞ্চল রক্ষার ক্ষেত্রে দুই রাজ্যের সমান মনোভাব থাকবে, এটাই আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের প্রস্তাবে রাজি হননি। গতকালকের ঘটনার পর আমি তাকে অন্তত ছয় বার ফোন করেছি এবং প্রায় প্রত্যেকবার তিনি আমাকে আইজল যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি আছেন বলেও জানিয়েছেন। তবে কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ ছাড়া আমি হঠাৎ করে মিজোরামে যেতে চাইছি না। এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে কেন্দ্র সরকার। তারা যেটুকু সীমানা অসমকে নির্ধারণ করে দেবেন, আমরা সেটুকু সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করব। যদি তারা ভবিষ্যতে বলেন পুরো কাছাড় জেলা বা গুয়াহাটি পর্যন্ত মিজোরামকে দিয়ে দিতে হবে, আমরা বাধা দেব না, কারণ এই সীমানা নির্ধারণের কাজ তাদের। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হচ্ছে, আমরা পরিস্কার বলে দিতে চাই, আর এক ইঞ্চি জমিও মিজোরাম দখল করতে পারবে না।”
কবে মিজোরামের সঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য বৈঠক আয়োজন করা হবে এই বিষয়ে কোনও ধারণা নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি একদিকে বলছেন, মিজোরামের লোকেরা হাতে বন্দুক নিয়ে হামলা করছে, আবার তাদেরকে নিরীহ সাধারণ মানুষ বলেও সম্বোধন করছেন। এতে অসম রাজ্যের বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন অবশ্যই দেখা দিয়েছে। তবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলেছেন, নিছক রাজনীতি নয়, শান্তির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করাই হচ্ছে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব, এই দায়িত্ব থেকে কোনওভাবেই অসম সরে আসবে না।
Comments are closed.