'হিমন্তের জন্য করুণা হয়, রাজনীতির স্বার্থে এতটা নিচে নামতে হচ্ছে তাকে!' বললেন কমলাক্ষ
অসম রাজ্যের বাঙালিদের কোনও সমস্যা সমাধান করতে পারেনি বিজেপির সরকার। বর্তমান সরকারের অধীনে বাঙালিরা কোনও সুরক্ষাই পাননি। বাঙালি হিসেবে আমাদের কোনও প্রাপ্তিই নেই। একের পর এক সরকারি চাকরিতে বরাক উপত্যকাকে উপেক্ষা করা হয়, অথচ তারাই মাঝে মাঝে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করেন। আগামীতে নির্বাচন রয়েছে, এর আগে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে উদ্ভট মন্তব্য করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, এমনটাই মনে করেন বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। তিনি হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, “পারলে উত্তর করিমগঞ্জে এসে ভোটে লড়ুন, দেখা যাবে আপনি কতটা বাঙালি ভোট পান।”
এরপর কথা বলেন প্রস্তাবিত শ্রীমন্ত শংকরদেব কলা ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তি না পাওয়ার বিষয় নিয়ে। কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে রাজ্যের অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতি রক্ষার জন্য একটি সংগ্রহালয় গড়ে তোলার। এই সূত্র ধরেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তার মধ্যে বাকযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ কোনওভাবেই বাঙালির প্রতিনিধি নন, তাই তার দাবিকে বাঙালি সমাজের দাবি হিসেবে গণ্য করা যায় না। হিমন্ত একসময় চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, উত্তর করিমগঞ্জের এসে তিনি নির্বাচনে দাঁড়ালে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের থেকে বেশি ভোট পাবেন। চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এবং পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে উত্তর করিমগঞ্জে হিমন্তকে আমন্ত্রণ জানান।
তবে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেন এমনটা করছেন? কেন একজন বিধায়কের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন হিমন্ত? এব্যাপারে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, “আসল উদ্দেশ্য অন্য কোথাও, তারা জানেন এই পাঁচবছরে বাঙালির জন্য কোনও কিছুই করতে পারেননি। রাজ্যের একজন বাঙালিকেও সুরক্ষা দেওয়ার কথা ভাবেনি বর্তমান সরকার। এমনকি বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি রক্ষার জন্য একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলার পর্যন্ত তাদের মনোবৃত্তি নেই। আগামীতে নির্বাচন রয়েছে এবং বাঙালির ভোট তো পেতে হবে, এজন্য উল্টোপাল্টা বয়ান দিচ্ছেন। এটাই বিজেপির রাজনীতির ধরন। তবে আমি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার জন্য দুঃখিত, করুণা হয় যে তার মতো একজন নেতাকে এতটা নিচে নামতে হচ্ছে, এটা ভেবে। আমি কতটুকু বাঙালি এটা অন্তত তিনি ঠিক করে দেবেন না।”
কমলাক্ষ আগামীতে বিজেপির ব্যর্থতা পরিষ্কারভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরবেন বলে জানান। তিনি বলেন, “বাঙালির উন্নতি চায়না রাজ্য সরকার, তাদের সুরক্ষা দিতে রাজি নয় তারা। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নবায়নের সময় যেভাবে বাঙালি মানুষের নাম বাদ পড়েছে, সেটা থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় উল্টোপাল্টা বক্তব্য দিয়ে বাঙালিদের ভোট লাভ করেন হিমন্তরা। কিন্তু এবারের ভোটে হিমন্ত বিশ্ব শর্মারা বাঙালি জনগোষ্ঠীকে আর চোখে ধুলো দিয়ে সফল হবেন না। আমরা গত পাঁচ বছরের পুরো হিসেব জনগণের সামনে তুলে ধরব। অনেক কিছু বলার আছে, অনেক কিছু দেখানোর রয়েছে। শুধুমাত্র উল্টোপাল্টা বয়ান দিয়েই তারা পাশকাটিয়ে বেরিয়ে যাবেন এটা হতে দেওয়া যায় না। আপাতত আমি আমার দাবিতে অনড়।”
উল্লেখ্য, অনান্য ভাষাগোষ্ঠীর মত বাঙালি সংস্কৃতির সুরক্ষার অভিলাষায় সংগ্রহশালা স্থাপনের জন্য কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ যে দাবি করেছেন, সেই সূত্র ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “অন্তত কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ রাজ্যের হিন্দু বাঙালির প্রতিনিধিত্বই করেন না। ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে কে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা রাখেন। আমি যদি নিজে তার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াই বাঙালিরা তার থেকে বেশি আমাকে ভোট দেবেন। তাই বাঙালি সংস্কৃতির সংগ্রহশালা স্থাপন নিয়ে তাঁর কথা বলার অধিকার রয়েছে বলে আমি মনে করিনা।”
Comments are closed.