শিলচরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় কর্মচারি সংস্থার রাজ্যিক অধিবেশন, আসছেন হিমন্ত-পীযূষ
সারা আসাম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল কর্মচারি সংস্থার ষষ্ঠ দ্বিবার্ষিক সাধারণ অধিবেশন প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বরাক উপত্যকায়। ২৯ এবং ৩০ জানুয়ারি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অধিবেশনটি। এতে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, মন্ত্রী পীযুষ হাজারিকা, শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়, উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর, সারা আসাম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল কর্মচারি সংস্থার সভাপতি দিগন্ত হাজারিকা সহ অন্যান্য অতিথিরা। সোমবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে অধিবেশনের কথা তুলে ধরেন আয়োজকরা। তবে হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে পরিষ্কার কোনও বক্তব্য তুলে ধরতে পারেননি সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেওয়া আয়োজকরা।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সম্পাদক ইব্রাহিম আলি লস্কর, সারা আসাম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল কর্মচারি সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সাংমা, কার্যকরী সভাপতি সুধাংশু আচার্য সহ অন্যান্যরা। তারা বলেন, “এই প্রথমবারের মতো এত বড় অনুষ্ঠান শিলচরে আয়োজিত হচ্ছে। এতে অংশ নেবেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সহ বিভিন্ন মন্ত্রী এবং উচ্চস্তরের সরকারি আধিকারিকরা। ২৯ এবং ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠান রয়েছে, অনুষ্ঠানের প্রথম দিন কর্মচারিদের নিজস্ব অনুষ্ঠান রয়েছে, এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। দ্বিতীয় দিন প্রকাশ্য সভা রয়েছে যা উদ্বোধন করবেন উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এদিন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এছাড়া যোগ দেবেন অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিশিষ্ট অতিথি মন্ত্রী পীযুষ হাজারিকা, শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়, স্বাস্থ্যবিভাগের ডিএমপি ডাঃ অনুপ কুমার বর্মন সহ অন্যান্য অতিথিরা। মহাবিদ্যালয় কর্মচারি সংস্থার একটি স্মৃতিগ্রন্থ অনুষ্ঠানে উন্মোচন করা হবে। কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি, সাংবাদিক তৈমুর রাজা চৌধুরী, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া, অধীক্ষক ডাঃ অভিজিৎ স্বামী, হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত, সারা আসাম কর্মচারি পরিষদের সভাপতি প্রদীপ দত্ত এবং সম্পাদক মৃণাল দাস সহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।”
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালে এখন একজন ব্যক্তিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন নেই। বরাক উপত্যকা সহ ভারতবর্ষের এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ভরসাযোগ্য প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতালটি। তবে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে নিয়োগ বন্ধ, অস্থায়ী কর্মীদের সহায়তা নিয়েই কাজ চলছে। বহুবার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যায় স্থায়ী কর্মচারি নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু স্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ করা হয়নি এবং অস্থায়ী কর্মীদেরও বিভিন্নভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এবার যখন কর্মচারিদের রাজ্য অধিবেশন শিলচরে হচ্ছে এবং এতে অংশ নিচ্ছেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী, এই সময়ে কি কি দাবি উত্থাপন করা হবে? এই প্রশ্ন করলে আয়োজকরা বলেন, “আমরা অতীতেও এই দাবিগুলো অধিবেশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এবারও একইভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে, কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা খুব একটা দাবি আদায় করতে পারব না।”
হাসপাতালে শুধু কর্মচারির অভাব নয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ একেবারেই অকেজো। এর মধ্যে সবথেকে বেশি যেসব বিভাগ নিয়ে কথা উঠে সেগুলো হচ্ছে, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি এবং নেফ্রোলজি। অতীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করার সময় বারবার আশ্বাস দিয়েছেন এসব বিভাগকে চালু করা হবে, তবে আশ্বাসের পর কোনও ঘোষণা হয়নি বা কাজ শুরু হয়নি। অধিবেশনে এসব ব্যাপারে আলোচনা হবে কি না, এই প্রশ্ন করলে পাল্টা সংবাদমাধ্যমকে জ্ঞান দিতে শুরু করেন ডাঃ প্রসেনজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “আমরা অনেক ভালো ভালো কাজ করছি, একদিনে এত বড় হাসপাতালের পরিবর্তন হয় না, সংবাদমাধ্যম শুধুমাত্র আমাদের দোষগুলো দেখে, আমরা কতটুকু ভালো কাজ করছি সেটা জানতে হলে হাসপাতালের ফেইসবুক পেইজে যান, সেখানে অনেক তথ্য রয়েছে।” তবে এসব বয়ানবাজি করলেও অধিবেশনে কোন্ কোন্ বিভাগ নিয়ে কথা উঠবে সেটা বলতে পারেননি ডাঃ প্রসেনজিৎ ঘোষ। এছাড়া হাসপাতালে ঠিক কতজন স্থায়ী কর্মচারির থাকা প্রয়োজন, কোন্ কোন্ বিভাগে কর্মচারি কম রয়েছেন, এব্যাপারেও তিনি জানেন না। কোন কোন বিভাগে এক শয্যায় দুই রোগীকে রাখা হচ্ছে, এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কোনো পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি থাকলে এবং থাকার জায়গা ছোট হলে আমরা অনেকেই এভাবে এক বিছানায় দুইজন ঘুমাই। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি এবং শয্যা কম, ফলে এমনটা হচ্ছে। আগামীতে যখন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবে নতুন নতুন ভবন গড়ে উঠবে এসব সমস্যা মিটে যাবে।”
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ইব্রাহিম আলি লস্কর বলেন, “আমরা এসব ব্যাপারে সুযোগ পেলে কথা বলব, তবে এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এত বড় অধিবেশনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। প্রায় হাজারখানেক ডেলিগেট অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব ধরনের প্রটোকল মেনে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে হবে। আমরা আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনেক কিছু ঘোষণা হবে।”
Comments are closed.