বিকাশের নামে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা
ধর্মের নামে, সম্প্রদায়ের নামে ভোট নয়, বরং বিকাশের নামে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। আজ শিলচর ইটখলাতে অনুষ্ঠিত বিজেপি প্রার্থী রাজদীপ রায়ের হয়ে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, কংগ্রেস আমাদের দেশকে কাপুরুষ বানাচ্ছে। ওদের মতে ভারত বর্ষ কিছুই করতে পারবে না পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অথচ পুলওয়ামা কাণ্ডের পর মোদি সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে গিয়ে যোগ্য জবাব দিয়ে এসেছে। তাই ভারতের জন্য সবসময়ই যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। যা মোদীজি খুব ভালোভাবেই দিচ্ছেন।
তিনি বিজেপি সরকার কর্তৃক দেশের উন্নয়নমূলক দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে অষ্টম শ্রেণী থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যন্ত বিনামূল্যে ভর্তি করা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণী এমনকি একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে এ বছর থেকে স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদেরও বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করা হবে। হোস্টেলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক ৭০০ টাকা করে হোস্টেল খরচ দেওয়া হবে।
তিনি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর অধীনে বর্তমানে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ, গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি সহ বিভিন্ন রোগের দু লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা করানোর সুযোগ পাচ্ছেন জনগণ। এ বছর থেকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পথ দুর্ঘটনা, আই সি ইউ’তে রোগীকে রাখার জন্য কিংবা ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের যে কোনো অপারেশনের জন্য এ প্রকল্পের অধীনে দু লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা করানো যাবে।
তিনি আরো বলেন, এতদিন পর্যন্ত চালের মূল্য তিন টাকা ছিল, বর্তমান সরকার তার দাম দুই টাকা করে দিয়েছে। তাছাড়াও আগামীতে রেশন কার্ডের মাধ্যমে ১৫ টাকা কিলো মূল্যে চিনি পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে কুড়ি টাকা করে কেরোসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে।
সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন, ষাটোর্ধ্ব সবাইকে পেনশন প্রদান করা হবে। তাছাড়া এ বছর থেকেই সব বিধবারাও পেনশন পাবেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর বিধবারা যেমন পেনশন পাবেন, ঠিক তেমনি মা বাবা মারা যাওয়ার পর সারা জীবনের জন্য তাদের মেয়েও পেনশন পাবেন। সেইসঙ্গে স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রত্যেক বিধবাকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে। মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার হাতে সরকারের পক্ষ থেকে এক তোলা সোনা বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
মোদি সরকারের আমলে আসামে কি কি কাজ হয়েছে সেটার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, শিলচরে ব্রডগেজের ব্যবস্থা মোদি সরকারের আমলেই হয়েছে। উত্তর-পূর্বের প্রত্যেকটা রাজ্যে ব্রডগেজ পৌঁছে গেছে। একইভাবে ব্রম্মপুত্রের উপর তিনটি সেতু নির্মাণ হয়েছে। ইন্দিরা আবাসের অধীনে ৭৫ হাজার টাকায় গৃহ নির্মাণ করা হত, সেখানে মোদি সরকার দেড় লাখ টাকা খরচ করে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে। মোদি সরকার এও ঘোষণা করেছে যে ২০২২ সাল পর্যন্ত একটি ঘরও কাঁচা থাকবে না। সবাইকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
তিনি বিশেষভাবে চা বাগানের কথা উল্লেখ করে বলেন, উধারবন্দ সমষ্টিতে প্রচুর চা বাগান কর্মীরা রয়েছেন। চা বাগানের কর্মীদের কারো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না, তাই মোদি সরকারের আদেশ অনুসারে ৭ লক্ষ ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে আড়াই হাজার আড়াই হাজার করে মোট ৫ হাজার টাকা জমা করা হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, গত পাঁচ বছরে সুস্মিতা দেব কি করেছেন? দেশে মোদিজি ইঞ্জিন চালাচ্ছেন, আর সুস্মিতা দেব সেই ট্রেনের পেছনে নিজের ইঞ্জিনকে যদি উল্টো দিকে নিয়ে যান তাহলে কি করে শিলচরের উন্নতি হতে পারে? তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চিন্তা করে নিতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে ধর্ম কিংবা সম্প্রদায়কে নিয়ে আসা উচিত নয়। রাম নবমীর দিনে পুণ্য তিথিতে তিনি মোদি সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন এবং শিলচরে বিজেপি প্রার্থী ড: রাজদীপ রায়কে জয়ী করে উন্নয়নের পথ প্রসারিত করতে সবাইকে আহ্বান জানান। সভা শেষে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপস্থিত জনগণ ‘আবার একবার মোদি সরকার’ বলে ধ্বনি তোলেন।
সভা শেষে মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক বিশাল সংখ্যক অনুগামী এবং শিলচর কেন্দ্রের প্রার্থী রাজদীপ রায় সহ অন্যান্য বিজেপি নেতৃবৃন্দদের নিয়ে খোশ মেজাজে শিলচরের প্রধান সড়কগুলোতে রোড শো-য়ে অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে কালাইন ফুটবল ময়দানে এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এত বৃহৎ জনসমাগম কালাইন এলাকায় এর আগে আর হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।
Comments are closed.