"২৫ ডিসেম্বর কোনও হিন্দু চার্চে যাবেন না," কড়া বার্তা বজরং দলের; অবাধ্য হলে পরিণাম ভুগতে হবে, প্রয়োজনে ভাঙচুর
সম্প্রতি শিলংয়ে খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী একটি উগ্র ছাত্রসংগঠন হিন্দু ধর্মের অতি পবিত্র রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল। এর পাল্টা জবাবে আমরা বলতে চাই ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে কাছাড় জেলায় কোনও হিন্দু যদি গির্জায় যায় তাহলে পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে। হয়তো পরের দিন পত্রিকায় খবর বেরোবে ওরিয়ান্টাল চার্চে ভাঙচুর করেছে বজরং দল, এতে আমরা খুব একটা ভয় পাই না। আমাদের মা-বোনদের আত্মসম্মান এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেউ আঘাত করলে আমরা এর জবাব দিতে জানি। যদি কেউ আমাদের মা-বোনের হাত ধরে টানে তার বিরুদ্ধে জবাব দিতে জানে বজরং দল, এতে কেউ আমাদের গুন্ডা বললে বলুন, এমনটাই বয়ান বজরং দলের শিলচর শাখার সদস্যদের। বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য সভায় কথাগুলো বলেন সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক মিঠুন নাথ।
বৃহস্পতিবার শিলচর বঙ্গভবনে বজরং দলের কার্যকর্তা সন্মেলন আয়োজিত হয়। বজরং দলের রাষ্ট্রীয় সংযোজক সোহান সিং সোলাঙ্কির উপস্থিতিতে কয়েক হাজার সদস্যরা এতে যোগ দেন। সোহান সিং সোলাঙ্কি বলেন, “১৩০৮ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিম থেকে শুরু করে হিন্দু সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে শত্রুতা আজও বিদ্যমান। এতে অনেক আত্মত্যাগ হয়েছে। রাম মন্দির সেইসব বলিদানের এক উজ্জ্বল প্রতীক। কেননা বাবর, ইব্রাহিম লোধি এবং রানা সাঙ্গার মধ্যে পানিপথের যুদ্ধ থেকেই ভারতবর্ষে ইসলামী জঙ্গীবাদের আগমন। সেই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সনাতন হিন্দু সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক রাম জন্মভূমি গড়ার স্বপ্ন সামনে রেখে আন্দোলনের রূপরেখা গড়তেই ১৯৮৪ সালে মাঠে নামে বজরং দল। তখন থেকেই লক্ষ্য পূরণের সাফল্যের যাত্রা শুরু।”
অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে প্রত্যেক হিন্দুর ঘর থেকে ন্যূনতম হলেও অর্থ সংগ্রহের সংকল্প নিতে বলেন সোলাঙ্কি। তার বয়ান, “৪৯২ বছরের সংঘর্ষের পর অবশেষে রাম মন্দির হচ্ছে। অযোধ্যার রাম মন্দির শুধু একটি মন্দির নয়, এটি হবে ভারতবর্ষের রাষ্ট্র মন্দির। এই মন্দিরের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারবেন সনাতন হিন্দু সংস্কৃতির পুনর্জন্ম হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি যুগের সূচনা করে দিয়েছেন এবং এবার এই মন্দির নির্মাণে দেশের সব হিন্দুদের এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বজরং দলের সদস্যদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।”
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত সভাপতি সান্তনু নায়েকের পৌরহিত্যে এদিনের সভায় বজরং দলের অখিল ভারতীয় সংযোজক বলেন, বজরং দল ভারতবর্ষের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি অখন্ডতা ফিরিয়ে আনতে দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতবর্ষ হিন্দুদের দেশ। হিন্দু হলো ভারতের শক্তি এবং আত্মা। এই দেশের মাটিতে ছত্রপতি শিবাজী, রানা প্রতাপ, গোবিন্দ সিংজির মত রাষ্ট্রপতিরা জন্ম নিয়েছিলেন। ঋকবেদ হচ্ছে বিশ্বের প্রথম পুস্তক। তক্ষশীলা হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। এদেশের ঐতিহ্য নিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রতিটি হিন্দু গর্ব করতে পারেন। অন্যদিকে উগ্রপন্থা, নারী নির্যাতন হিন্দুদের রক্তের মধ্যে নেই। এই অসভ্যতা হিন্দুরা শিখলে আজ এদেশে অন্য কোনও ধর্মের লোক থাকতে পারতেন না। কিন্তু সনাতন সংস্কৃতির প্রতিভূ শ্রীরামের জন্মই হয়নি বলে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেছিল কংগ্রেস। আজ এর পরিণতি পেয়েছে দলটি। সেই দলকে রাস্তায় নামিয়ে ছেড়েছেন জনগণ।
পূর্ব ভারতকে বিপ্লবের দুর্গ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ১৯০৫ সালে বাংলা এবং আসামকে দ্বিখণ্ডিত করার চক্রান্ত করেছিল ইংরেজ। কিন্তু এই অঞ্চলের জনগণ সেই চক্রান্ত ভেস্তে দিয়েছেন। এখন পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। আফজাল গুরুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই অবস্থায় আফজাল খান হত্যাকারী শিবাজীর জন্ম হতে হবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। বজরঙ্গি ভাইদের উদ্দেশ্যে বলেন, বজরংবলীর মতো শরীর গঠন করা জরুরি। কেননা জল দিয়ে নয়, ঘাম দিয়ে যারা স্নান করতে অভ্যস্ত, তারাই ইতিহাস পাল্টাতে সক্ষম। আর যুবসমাজ ঠিক এভাবে চললে আগামী পাঁচ বছরে ইতিহাস পাল্টে দেওয়া সম্ভব।
সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত ভাষণ রাখেন বজরং দলের জেলা সংযোজক শুভরঞ্জন দাস। সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক মিঠুন নাথ তার ভাষণে শুরুতেই লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি সম্প্রতি শিলং রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে খাসি ছাত্রদের পক্ষ থেকে তালা ঝুলানোর কড়া সমালোচনা করেন তিনি। এর পাল্টা হিসেবে তিনি হুমকির সুরে বলেন, আগামী বড়দিনে (২৫ ডিসেম্বর) কোনও হিন্দু গির্জায় গেলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।
মিঠুন বলেন, বজরং দল কারুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সাম্প্রতিক কোভিড মহামারিতে পর্যাপ্ত মাস্ক-স্যানিটাইজার সহ ব্যাপকহারে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে বজরং দল। শুধু তাই নয় পরিবেশ দিবসে এক হাজার গাছের চারাও রোপণ করা হয়েছে।
এদিনের সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উত্তর পূর্ব প্রান্ত সংগঠন মন্ত্রী পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, জেলা সভাপতি দেবাশিস সেনগুপ্ত, দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত সম্পাদক স্বপন শুক্লবৈদ্য, প্রান্ত সংযোজক বিষ্ণু ভট্টাচার্য্য প্রমূখ।
Comments are closed.