বরাকের সন্তান নীলোৎপল এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট, প্রথম পোস্টিং উড়িষ্যায়
বরাক উপত্যকার প্রথম যুবক হিসেবে ২০১৬ সালে আর্মি কেডেট কলেজে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন উধারবন্দের নীলোৎপল চক্রবর্তী। এবার সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট স্তরের সাফল্য পেয়ে উপত্যকাকে আমার গর্বিত করেছেন তিনি। প্রথম পোস্টিং হিসেবে উড়িষ্যা যাচ্ছেন তিনি, সেনাবাহিনীর এয়ার ফোর্স স্তরে নিযুক্তি হচ্ছে তার। এছাড়া লক্ষীপুরের কাপ্তানপুর এলাকার খোমবাম ওমপ্রকাশ সিংহ এদিন ন্যাশনাল মিলিটারি একাডেমী থেকে মেডেল পেয়েছেন। শনিবার বিকেলে দুজনকেই আনুষ্ঠানিকভাবে মেডেল প্রদান করা হয়। সেই মুহূর্তে তাদের পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
মেডেল সংগ্রহ করার ফাঁকে বরাক বুলেটিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি। ২০১২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন কাটিগড়ার কাতিরাইল এলাকার বাসিন্দা নীলোৎপল চক্রবর্তী। তার বাবা সেখানে চা-বাগানে উচ্চপদস্থ কর্মী। বাবার কাজের খাতিরে পরবর্তীতে তারা চলে আসেন উধারবন্দে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর তিনি জানতে পারেন পরীক্ষা দিয়ে আর্মি ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুরু করলেন নিজেকে তৈরি করা। ২০১৬ সালে উপত্যকার প্রথম যুবক হিসেবে সুযোগ পেলেন আর্মি ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার। প্রায় চার বছর সেখানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অত্যন্ত ভাল রেজাল্ট করেছেন এবং সরাসরি লেফটেন্যান্ট পদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। শনিবার তাকে যখন ম্যাডেল তুলে দেওয়া হচ্ছিল তিনি মুহূর্তকে স্মরণীয় করে তুলতে তার মা-বাবাকে সেখানে নিয়ে যান। চোখের সামনে ছেলেকে এত বড় উপাধি পেতে দেখে তারা আবেগিক হয়ে পড়েন।
নীলোৎপল চক্রবর্তী বলেন, “যখন স্কুলে ছিলাম স্বপ্ন ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করব কিন্তু এমন সুযোগ রয়েছে সেটা জানতাম না। পরে যখন সেনাবাহিনীতে সাধারণ একটি পদে যোগ দেই, আমার স্বপ্ন আরও বড় হয়। এরপর নিজেকে তৈরি করি এবং একসময় আর্মি ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুযোগ পাই। আজকালকার যুবসমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের দেশপ্রেম প্রচার করলেও আদতে সৈনিকদের জীবন কি হয় সেটা তারা চোখের সামনে দেখতে পান না। আমিও জানতাম না তবে এখন বুঝি কতটুকু পরিশ্রম করতে হয়। আমি চাই বরাক উপত্যকার প্রত্যেক যুবক-যুবতী সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করুক। এই স্বপ্ন অবশ্যই অসম্ভব নয় তবে কঠিন। আগামীতে শিলচরে এসে আমি এলাকার যুবক যুবতীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই।”
নিজের জীবনের সবথেকে সফল মুহূর্তে মা-বাবাকে সঙ্গে পাওয়ার অনুভূতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন সৎ কর্মী এবং সারা জীবন আমাদের শিখিয়েছেন কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে গড়ে তুলতে। তাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি জীবনে সফল হতে পেরেছি। এই যাত্রা অবশ্য সহজ ছিল না, কতটুকু কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেতে হয়েছে সেটা হয়তো পুরোপুরি বলতে পারবো না কিন্তু কিছুটা অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া সম্ভব। তারা যখন আমার সামনে ছিলেন এবং দেশের সবথেকে সম্মানীয় ম্যাডেল পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল জীবন সার্থক হয়েছে। আগামীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করে আমি বরাক উপত্যকাকে আরও গৌরবান্বিত করতে চাই। পাশাপাশি চাই আমার এলাকার যুবক-যুবতীরা অনেকেই এই সাফল্য উপভোগ করুক।’
২০১২ সালেই লক্ষীপুরের কাপ্তানপুর এলাকার খোমবকাম ওমপ্রকাশ সিংহ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। গোয়ালপাড়ার সৈনিক স্কুল থেকে প্রথমে স্নাতক হন তিনি। নীলোৎপল চক্রবর্তীর সঙ্গেই তিনিও ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমীতে সুযোগ পান। পরে দেরাদুনের ন্যাশনাল মিলিটারি একাডেমিতে পড়াশোনার সুযোগ পান। শনিবার তাকেও মেডেল প্রদান করা হয়েছে।
Comments are closed.