Also read in

শিলচরে ভূমি মাফিয়ারা একজন জীবিত ব্যক্তির মৃত্যুর শংসাপত্র জাল করে তার জমি বিক্রি করে দিল

কুটি মিয়া বড়ভুইয়া ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। মেহেরপুর বাসী এই ব্যক্তির তিন ছেলে শাহজাহান হুসেন বড়ভুইয়া, সমিরুল হক বড়ভুইয়া, জাইরুল হুসেইন বড়ভুইয়া এবং এক মেয়ে রোজমিন সুলতানা বড়ভুইয়া। চিকিৎসার প্রয়োজন যখনই তাকে কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, ছেলেমেয়েরা সাথে থাকতো। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জীবন যুদ্ধে হেরে যান তিনি। তার সন্তানেরা ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাবা কুটি মিয়া বড়ভুইয়ার মালিকানাধীন জমির প্লট তাদের নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করতে শিলচর সেটেলমেন্ট অফিসে যায়। শাহজাহান হুসেন বড়ভুইয়া বলেন, “আমরা জেনে হতবাক হয়েছি যে, আমার বাবা আর ৩ বিঘা (৬০ কাঠা) কৃষি জমির মালিক নন।” তার ভাই বোন এবং মা জামিলা খাতুন বড়ভুইয়া, প্রত্যেকেই বলেছিলেন যে তারা সমানভাবে হতবাক।

“যখন আমরা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে নথি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, তখন আমরা জানতে পারি আইনুল হক লস্কর নামক এক ব্যক্তিকে কুটি মিয়া বড়ভুইয়ার ছেলে হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল এবং সেই আইনুল হরিদাস সিনহা নামের একজনকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেওয়ার দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই হরিদাস সিনহা তারাপুরের বাসিন্দা রাকেশ শর্মার কাছে ১৭ কাঠা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। আমরা যা আরো আশ্চর্যজনক মনে করি তা হল, সেটেলমেন্ট অফিসের নথি অনুসারে, আমার বাবা ২০১৮ সালে মারা যান। বাস্তবে সেই সময়ে তিনি জীবিত ছিলেন এবং কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি প্রেসক্রিপশন এবং ডিসচার্জ স্লিপ রয়েছে যা প্রমাণ করে যে তিনি ২০১৮ সালে জীবিত ছিলেন এবং ২০২০ সালে মারা গিয়েছিলেন, ” বলেন কুটি মিয়ার ছেলেরা।

 

 

তাদের মতে, তাদের পরিবারে আইনুল হক লস্কর নামে কেউ নেই। আইনুল হক লস্কর কিভাবে বড়ভুইয়ার ছেলে হতে পারেন? ভয় করছি, হয়ত পুরো জমিই আমার এই ভুয়া-অস্তিত্বহীন ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে,” শাহজাহান আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

হরিদাস সিনহা আইনুল হক লস্করের কাছ থেকে ২০১৮ সালের মে মাসে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি পেয়েছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এটি রাকেশ শর্মার কাছে বিক্রি করেছিলেন। অসঙ্গতি সম্পর্কে জানার পর, বড়ভুইয়া পরিবার শিলচর সদর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করে। তারা কাছাড়ের জেলা শাসক কীর্তি জল্লি এবং সেটেলমেন্ট অফিসার জেসিকা রোজ লালসিমের কাছে একটি অভিযোগও জমা দিয়েছেন।

“এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। সেটেলমেন্ট অফিসের একজন কর্মী দিলীপ ভট্টাচার্য জানান, প্লটটি দেখার জন্য ৫০০০ টাকা চার্জ লাগবে। তারা কিছু জাল নথির উপর ভিত্তি করে আমাদের জমি অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করেছে এবং এখন তারা এই জমি পরিদর্শনে আসার জন্য এবং দেখার জন্য টাকা চাইছে। আমরা পুলিশের কাছ থেকে খুব কমই সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের চোখের সামনে, আমরা নথিপত্রে দেখতে পাচ্ছি যে আমার বাবা আর প্লটের মালিক নন এবং এটি অন্য কারও কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আমরা অসহায় এবং আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমরা যা চাই তা হল, একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং জমি আমাদের কাছে হস্তান্তর,” কুটি মিয়া বড়ভুইয়ার ছেলে বলেন।

 

জমির প্লট কাঠাল রোডের কাছে অবস্থিত। এই তিন বিঘা প্লটের মূল্য কোটি টাকার উপরে হবে কারণ এটি নতুন বাইপাস সংলগ্ন। যদি প্রয়াত কুটি মিয়া বড়ভুইয়ার ছেলেদের দেখানো নথিগুলি ঠিকঠাক হয়ে থাকে, তাহলে এটি কাছাড় প্রশাসনের নাকের ডগায় এক বিশাল জমি কেলেঙ্কারি। তাছাড়া, এই ধরনের একটি কেলেঙ্কারি কেবল দালালরা মিলে করতে পারবে না। এই জমি কেলেঙ্কারিকে বাস্তব রূপ দিতে অফিসের ভিতরে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের চক্রকেই উৎপাটনের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে প্রশ্ন হল, পুলিশ কি এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বঞ্চিতদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করবে !

Comments are closed.