মোমবাতি মিছিলের লিখিত অনুমতি দিয়েও প্রত্যাহার : কাগজ কল কর্মচারীদের ক্ষোভ তুঙ্গে, জেলা উপায়ুক্তের সাফাই 'ক্লারিক্যাল অভারসাইট'
কাছাড় ও নগাও কাগজ কলের প্রায় ৮০ জন মৃত কর্মচারীদের স্মরণ করে আজ শিলচরে এক মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করেছিল কাছাড় ও নগাও কাগজ কলের জয়েন্ট একশন কমিটি অব রিকগনাইসড্ ইউনিয়ন । উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যতোচিত অনুমতি পত্র ও পেয়েছিলেন কাগজ কলের কর্মচারীরা। কথা ছিল ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু করে রাঙ্গিরখাড়ি পর্যন্ত যাবে এই মিছিল।
কিন্তু মিছিল শুরু করার আগেই এক বিশাল পুলিশবাহিনী উপস্থিত হয়ে কর্মচারীবৃন্দকে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে রুখে দেয়! আন্দোলনকারীরা তাদের অনুমতি পত্র দেখালে প্রশাসনের তরফ থেকে মিছিল বাতিলের ব্যাপারে অন্য একটি পত্র দেখিয়ে দেওয়া হয়। দুটো চিঠিই আজকের দিনে ইস্যু করা অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি তারিখের। অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের দুটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন একই ম্যাজিস্ট্রেট। এমনতর ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ চরমে ওঠে ।
সংস্থার তরফে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী টালমাতাল পরিস্থিতির মধ্যেই এই নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, “আমরা সরকারিভাবে জেলা উপায়ুক্ত এবং পুলিশ প্রশাসনকে এই মোমবাতি মিছিলের লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম গত পরশুদিন। এই নিয়ে পুলিশ অধীক্ষকের সাথে এক মিটিং ও হয়। আজ তারা এক লিখিত পত্রে এই মিছিলের অনুমতি প্রদান করেন। এখন তারা পুলিশ পাঠিয়ে আমাদেরকে রুখে দিচ্ছেন। সরকারের অত্যাচারে যে লোক গুলো মারা গেল তাদের প্রতি প্রশাসন কি মনোভাব প্রদর্শন করছেন ! আমরা জানতে চাই, সরকার কি জনগণের মৌলিক অধিকার তথা সংবিধান নিয়ে কি করছেন!”
মানবেন্দ্র চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘কাগজ কল বন্ধ হওয়ার পর থেকে মোট ৮০ জন ব্যক্তি বিভিন্ন কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা মনে করি কেন্দ্র সরকার এই মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। আমরা দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদিকে এর জন্য দায়ী করছি এবং এই মৃত্যু গুলোকে হত্যা বলে আখ্যা দিচ্ছি। আমরা তাদের বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতেই মোমবাতি মিছিল বের করেছি, আগামীকাল সকালে অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে চলেছি। এর মাধ্যমে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরা বুঝিয়ে দিতে চাইছি, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাগজ কল গুলো বন্ধ করে আমাদের কতটুকু ক্ষতি করেছেন। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার আসার পরেই ধীরে ধীরে কাগজ-কলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে ভারতের কাগজ উৎপাদন বন্ধ করে বাংলাদেশ এবং চীন থেকে বেশি দামে আমদানি করছেন। এতে গুজরাটি ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে, বলাই বাহুল্য প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী তাদের কথায় চলেন। যেখানে টিভির পর্দায় প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারতের ঢাক পেটান, তার কর্মকাণ্ড কোনভাবেই আত্মনির্ভরতার পক্ষে নয়। সরকার ন্যূনতম কাগজ কল বাঁচানোর রিভিইভ্যাল প্ল্যান জমা করতে পারছে না, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে না। যেটাই হোক আমরা তাদের বলতে চাইছি যদি আগামী নির্বাচনের আগে তারা কথা রাখতে না পারেন, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে যে কোন নেতা বরাকে এলে আমরা তাদের সামনে প্রতিবাদ দেখাবো। প্রতিবাদ করা আমাদের অধিকার এবং নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে আমরা এটা চালিয়ে যাব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে মোমবাতি হাতে নিয়ে পুলিশ এবং সিআরপিএফ বাহিনীর বেষ্টনীতে থেকে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়ে ফিরে যান কাগজ কল কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জেলা উপায়ুক্ত কীর্তি জাল্লি বরাক বুলেটিনকে স্পষ্টীকরণ দিয়ে জানান, “এটা ‘ক্লারিক্যাল অভারসাইট’ তথা ‘হিউম্যান এরর’ , টাইপ করতে গিয়ে গন্ডগোল। পুলিশের রিপোর্ট ও নাকারাত্মক ছিল। এখানে কোন দিক থেকেই কোন ধরনের রাজনৈতিক চাপ ছিল না । সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
Comments are closed.