Also read in

নাচের অনুপ্রেরণাই হৃত্বিক রোশন, তার সাধুবাদে জীবন সার্থক, বললেন ডাঃ অরুপ সেনাপতি

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইএনটি বিভাগের জুনিয়র ডাক্তার অরুপ সেনাপতি এখন ন্যাশনাল সেন্সেশন। সেটা তার নাচের ভিডিওর জন্য। টুইটারে শেয়ার করা তার ভিডিও প্রায় দুই মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে। ১৫ হাজারের ওপর রিটুইট, লাখের কাছাকাছি লাইক, যাকে ইন্টারনেটের ভাষায় বলা হয় ‘ভাইরাল’। ছোটবেলা থেকে হৃত্বিক রোশনের ভিডিও দেখে দেখে নাচ শিখেছেন। আর সেই হৃত্বিক রোশনই সোমবার তার ভিডিও টুইটারের শেয়ার করে লিখেছেন, “তোমার কাছ থেকে স্টেপগুলো শিখতে চাই।” এতে যারপরনাই আনন্দিত এবং উচ্ছ্বসিত গুয়াহাটির ছেলে অরুপ সেনাপতি। শুধুমাত্র হৃত্বিক রোশন নয়, বলিউডের প্রায় সব তারকারাই তার প্রশংসা করছেন। তারা ঘোষণা করেছেন, “আজকের দিনে ইন্টারনেটে এটিই সেরা ভিডিও।”

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। সেখান থেকেই আমাদের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বলেন, “আমার মা একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী। বাড়িতে নাচের চর্চা বরাবরই ছিল। দিদি এবং তার ছোট্ট সন্তান, তারাও নাচের প্রতি আকৃষ্ট। তবে ক্যারিয়ার হিসেবে নাচকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি, ডাক্তার হয়েছি। জীবনের বিষন্ন মুহূর্তগুলোয় সবথেকে ভালো বন্ধু হচ্ছে নাচ। আবার সবথেকে আনন্দের মুহূর্তগুলোও নাচের সঙ্গে কাটাই। বলা যায় নাচ আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধু। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং একান্ত। এই নাচের প্রেরণা প্রথমে মা, এরপর হৃত্বিক রোশন এবং মাইকেল জ্যাকসন। অবশ্যই জীবনে কখনও সামনাসামনি তাদের দেখতে পাবো এই স্বপ্ন ছিলনা। মাইকেল জ্যাকসন পৃথিবীতে নেই, তবে তার নাচের ভিডিও আমার চিরসঙ্গী। একইভাবে হৃত্বিক রোশনের ভিডিও গুলো আমার সবসময়ের সঙ্গী।

ভারতীয় হিসেবে বলিউডের সিনেমা দেখেনা এমন মানুষ খুব কম। সেখানে আজকের যুগে যদি কারও নাচ ভালো লাগে, সেটা হচ্ছে হৃত্বিক রোশনের নাচ। যেহেতু নাচকে আমার ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিইনি, তাই এটা নিয়ে খুব বড় স্বপ্ন দেখতাম না। একান্ত ভালো লাগার জায়গায় রেখে দিয়েছিলাম। তবে আমার এই ভিডিও দেখে একদিন স্বয়ং হৃত্বিক রোশন এমন মূল্যবান দুটো কথা বলবেন, এখনও বিশ্বাস করতেই পারছি না। তার নাচ দেখে দেখে কত ভিডিও বানিয়েছি তার শেষ নেই। অবশ্যই সেগুলো অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করা হয়নি, কারণ নাচ আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।”

ডাঃ অরূপ সেনাপতির বাবা গুয়াহাটিতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কর্মী ছিলেন। এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত এবং সেখানেই থাকেন। তার বোনও একজন সরকারি কর্মী হওয়ার পাশাপাশি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী। দুজনেই নাচের শিক্ষা পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। বোনের ছোট্ট ছেলে সম্প্রতি একটি জাতীয় স্তরের নাচের কম্পিটিশনে অডিশন দিয়েছিল এবং অনেকটা দূরে এগিয়ে গেছিল। বাড়িতে নাচের জন্য একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে। এই অভ্যাস থেকেই ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করেছিলেন এবং আজ তিনি জাতীয় স্তরের সেন্সেশন হয়ে উঠেছেন।

 

 

হৃত্বিক রোশনের পর বলিউডের একঝাঁক তারকা প্রশংসায় এগিয়ে আসেন। অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা, অভিনেতা অনুপ সোনি, রোহিত রয়, জাসিন আইউব, বীর দাস, সাংবাদিক ফই ডিসুজা সহ অনেকেই বলেছেন ইন্টারনেটে আজকের দিনে এটাই সেরা ভিডিও। অবশ্যই তারা কোভিড যোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার প্রতি কথাগুলো লিখেছেন।

এদিকে জাতীয় স্তরের সংবাদ মাধ্যম একের পর এক ইন্টারভিউ নিচ্ছে তার। রাতারাতি একজন জাতীয় স্তরের নৃত্যশিল্পীর মত ব্যবহার পাচ্ছেন। তবে এর পিছনে অন্যতম কারণ বর্তমান পরিস্থিতি। পিপিই কিট লাগিয়ে কোভিড ওয়ার্ডে নাচটি করেছেন বলেই এতো ভালোবাসা পাচ্ছেন। এব্যাপারে তিনি বলেন, গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস শেষ করার পর পোস্ট গ্রাজুয়েশন স্তরে থাকাকালীন করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগে তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। প্রায় টানা একমাস কাজ করার পর বেরিয়ে আসার সুযোগ পাই। কাজের শেষদিনকে বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে মনে রাখার জন্য কিছু একটা করতে চাইছিলাম, ভাবলাম একটা ভিডিও বানাই। হৃত্বিক রোশনের ওয়ার সিনেমার ঘুঙরু গানের অপর একটি ভিডিও তৈরি করি এবং সেটা সাধারণভাবেই ফেসবুকে আপলোড করি। ফেইসবুকে অনেকেই ভিডিওটি দেখছিলেন এবং প্রথমদিকে এটা উপভোগ করেছি। তবে সাক্ষাৎ হৃত্বিক রোশন এই ভিডিও শেয়ার করবেন এটা কখনোই ভাবিনি।”

এবার কি তবে নাচের দিকে আরেকটু বেশি মন দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পড়াশুনা করে ডাক্তার হয়েছি এটাই আমার পেশা। জানিনা আগামীতে নাচকে পেশা হিসেবে নেবো কিনা, তবে আজকের ঘটনা আমাকে নাচ নিয়ে আরও অনেক বেশি ভাবতে সাহায্য করবে। সত্যিই যদি আমার নাচে হৃত্বিক রোশনের মত তারকা খুশি হয়ে থাকেন তাহলে আরেকটু বেশি পরিশ্রম করাই যায়।”

Comments are closed.