১৯শে মে বাংলা পরীক্ষা, প্রতিবাদে ২৬ এপ্রিল বরাক বনধের ডাক বিভিন্ন সংগঠনের
অসম উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ এই বছরের পরীক্ষার সূচিতে মাতৃভাষার পরীক্ষা রেখেছে ১৯শে মে। পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা হওয়ার পর বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন সহ বিভিন্ন সংগঠন রাজ্য সরকারের কাছে পরীক্ষার দিনটি পরিবর্তন করতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন এবং দেখাও করেছিলেন। কিছু কিছু আধিকারিক তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন এমনটা হবে। নির্বাচনের আগে সরকার পক্ষের কিছু কিছু নেতারাও আশ্বাস দিয়েছিলেন দিনটি পরিবর্তিত হবে, কিন্তু নির্বাচনের পরেই চূড়ান্ত রুটিন ঘোষণা হয়েছে এবং পরীক্ষার দিন অপরিবর্তিত রয়েছে। এবার এর বিরুদ্ধে বনধ ডাকা হয়েছে।
রাজনৈতিক সংগঠন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও এসইএসিআই, ছাত্র সংগঠন আকসা সহ রুপম সাংস্কৃতিক সংস্থা, গণসুর থিয়েটার গ্রুপ, ভাষা শহীদ স্টেশন স্মরণ সমিতি, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ যৌথভাবে ২৬ এপ্রিল বরাক বনধ ডেকেছে। শুক্রবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে কথাগুলো জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের তরফে প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, “অসম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ উচ্চমাধ্যমিক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার ঘোষিত কার্যসূচিতে ১৯ মে তারিখে অ্যাডভান্স মনিপুরী এবং বাংলা পরীক্ষার দিন ধার্য্য করেছে। দিনটি বরাক উপত্যকার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমরা এদিন ভাষা শহীদদের বলিদান-দিবস উদযাপন করি। যখন প্রথমবার আমরা জানতে পারি পরীক্ষার দিন এভাবে ধার্য করা হয়েছে, অনেকেই সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন এটা পরিবর্তন করতে। কিন্তু তারা শেষমেষ নির্বাচনের পর দিনটি ঘোষণা করেছেন এবং আগের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্যই এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলতে আমরা বরাক উপত্যকার তিন জেলায় বনধ পালন করতে চলেছি। এদিন সকাল ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, পাশাপাশি বন্ধ থাকবে সব ধরনের যান চলাচলও। এর মাধ্যমে সরকার পক্ষ এবং শিক্ষা পর্ষদকে আমরা একটা বার্তা দিতে চাইছি। আমরা উপত্যকার প্রত্যেক ব্যক্তিকে বলতে চাই, আপনারা এগিয়ে এসে আমাদের বনধকে সমর্থন করুন, কারণ এটা শুধুমাত্র একটা পরীক্ষার ব্যাপার নয় আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।”
ইলোরা হেরিটেজ হোটেলে শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদীপ দত্তরায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গৌতম প্রসাদ দত্ত, সুব্রত ভট্টাচার্য, রূপম নন্দী পুরকায়স্থ, নিখিল পাল, ডাঃ রাজীব কর, সুব্যসাচী পুরকায়স্থ, কমল চক্রবর্তী, হিল্লোল ভট্টাচার্য, জয়দীপ ভট্টাচার্য, অরিন্দম দেব, পরিতোষ চক্রবর্তী, দীপঙ্কর চন্দ সহ অন্যান্যরা।
১৯ মে তারিখে পরীক্ষা আয়োজনের ঘটনা এই প্রথমবার নয় অতীতে বহুবার হয়েছে এবং অনেকে এর প্রতিবাদ করেছেন। তবে বারবার একই ঘটনা ঘটে এবং বরাক উপত্যকার মানুষকে এইজন্য প্রতিবাদ করতে হয়। এই সমস্যা মেটাতে হলে বরাক উপত্যকার জন্য শিক্ষা পর্ষদের আলাদা একটি শাখা গড়ে তুলতে হবে। এই শাখা স্থানীয় সমস্যাগুলো মাথায় রেখে পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করবে, এমনটা অভিমত ব্যক্ত করেন উপস্থিত প্রত্যেকেই। তারা বলেন, “প্রত্যেক বছর এভাবেই আমাদের প্রতিবাদ করতে হয়, অথচ তারা জেনেশুনে বারবার ১৯ মে তারিখে কোনও না কোনও পরীক্ষা রেখে দেন। এটা সমাধান করতে হলে বরাক উপত্যকার জন্য নিজস্ব শাখা থাকা দরকার যারা আগে থেকে পরিস্থিতি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবে।”
Comments are closed.