"আমাকে টার্গেট করা হয়েছে, স্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই," দাবি এডিসি এআর মজুমদারের
সম্প্রতি কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক আনিস রসুল মজুমদারের স্ত্রী মরিয়ম তাহেরা লস্কর দাবি করেছিলেন তার স্বামীর সঙ্গে কাছাড়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মারিয়া তানিমের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি জেলা শাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এবং সংবাদমাধ্যমের কাছেও জানিয়েছিলেন। শুক্রবার এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন আনিস রসুল মজুমদার। তার দাবি, একটি তৃতীয় পক্ষ তাকে অকারণে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তারা খুব সাবধানে তার স্ত্রীকে ভুল বোঝাতে সমর্থ হয়েছে। তার স্ত্রীকে দিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করিয়েছে। তাদের উস্কানিতে তিনি সংবাদ মাধ্যমে অস্পষ্ট এবং অপরিপক্ক মন্তব্য করেছেন। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, তাকে বোঝানো হয়েছে, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বাইরের মানুষের উস্কানিতে আর কান দেবেন না।
আমরা মূল প্রতিবেদনটি লেখার আগে অতিরিক্ত জেলাশাসক আনিস রসুল মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সেদিন তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।শুক্রবার তিনি প্রথমে লিখিত ভাবে তার বক্তব্য পেশ করেন, পরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নিজের কথাগুলো তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি প্রথমেই বলেন, “কোনও একটি তৃতীয় শক্তি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। আমার স্ত্রী তাদের উদ্দেশ্য আঁচ করতে পারেননি, ফলে সংবাদমাধ্যমে উল্টোপাল্টা বয়ান দিয়েছেন। তিনি ৯ জুন জেলা শাসকের কাছে লিখিতভাবে একটি আবেদন জানিয়েছিলেন। তার পরেরদিন আমার মেয়ের জন্মদিন ছিল, আমরা একসঙ্গে সেটা পালন করেছি। জেলাশাসকের কাছে তার অভিযোগের ব্যাপারে পরবর্তীতে আলোচনা হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে চলে আসে, এতে সমাজে একটি ভুল বার্তা যায়।
তিনি বলেন, পরিবারে ছোটখাটো অশান্তি প্রত্যেকের থাকে। আমরা কোনভাবেই চাইনি, ভুল বোঝাবুঝি এমন জায়গায় এসে পৌঁছে যাক। আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে একমত, তিনি এখন ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং কথা দিয়েছেন আগামীতে বাইরের মানুষের কথায় আর কান দেবেন না।”
আনিস রসুল মজুমদার এদিন একাই সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেন। তার স্ত্রী মরিয়ম তাহেরা লস্করের পক্ষ থেকেও তিনিই বয়ানটি তুলে ধরেছেন। তিনি বারবার বলেন, “আমাদের পারিবারিক জীবন অত্যন্ত সুখের। ছোটখাটো মনোমালিন্য ছাড়া কোনও বড় ঘটনা একেবারেই নেই। আমার স্ত্রী এবং দুই সন্তান আমাকে ভালোবাসে। তারাও এখন বুঝেছে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমার বড় ভাই আমাদের সঙ্গে থাকেন না। তারও পরিবার রয়েছে এবং তাদের নিয়ে তিনি সুখে জীবন কাটাচ্ছেন। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এবং একে অন্যকে সম্মান করি।” মরিয়ম তাহেরা লস্কর নিজে কথা গুলো সংবাদ মাধ্যমের কাছে এসে বলেননি।
এই ঘটনায় কারা তাকে টার্গেট করছে এটা স্পষ্ট করেননি এডিসি। যারা টার্গেট করছে, তারা তাকে বদনাম করার উদ্দেশ্যে করছে, না সেই মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে বদনাম করা তাদের উদ্দেশ্য, এটাও তিনি স্পষ্ট করে জানেন না। তবে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, তার বিরুদ্ধেই কেউ চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, “আমি সহজ সরল মানুষ বলেই হয়তো আমার সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমি কিছু জানি কারা কাজটি করছে, তবে প্রমাণ ছাড়া কারোর বিরুদ্ধে কথা বলা পছন্দ করিনা। আমি একজন পরিশ্রমী মানুষ, কাজের শেষে বাড়ি ফিরে শান্তিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বিশ্বাসী। আমার স্ত্রী যেটা করেছেন, এটা না হলে ভালো হতো। যারা আমাকে বদনাম করতে চাইছে তারা কাছাড় জেলার মানুষ নয়। দূরে থেকে আমাদের পরিবারে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এর বিরুদ্ধে পাল্টা কথা বলে আমি ঘটনাকে আর লম্বা করতে চাই না। আমি মনে করি, এই অধ্যায় নিজে থেকেই বন্ধ হবে। যারা আমাকে বদনাম করতে চাইছিল তাদের এর থেকে বেশি কিছু বলার থাকছে না।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আমি গুয়াহাটিতে তিন দিনের সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম এবং সাত দিন কাটিয়ে এসেছি। আপনারা চাইলে প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের কাছে জেনে নিতে পারেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত একটি বিশেষ সরকারি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে আমরা অনেকেই যোগ দিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে কাছাড় জেলার অনেক আধিকারিক ছিলেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মারিয়া তানিমও একই শিবিরে অন্য একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছিলেন। আর পাঁচটা সহকর্মীর মত তার সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়েছে, শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি আমরা। তাকে বা অন্য কোনও আধিকারিককে নিয়ে আমি গুয়াহাটিতে ঘুরতে যাইনি। যারা অভিযোগ তুলেছেন তারা যদি একটা ফটো বা ভিডিও দেখাতে পারেন যেখানে আমি ওই মহিলার সঙ্গে বাইরে কোথাও ঘোরাফেরা করছি, তবে কোনও দ্বিধা না রেখে পুরো অভিযোগ মেনে নেব।”
সাংবাদিক সম্মেলনে ইঙ্গিতে কথা বললেও অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও এডিসি স্পষ্ট করে বলতে রাজি হননি যে কে বা কারা তাকে এভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাই এই সাংবাদিক সম্মেলনের পরও প্রকৃত ঘটনা আসলে কি সেটা সুস্পষ্ট হয়নি। বরং ব্যাপারটা ঘিরে কিছু প্রশ্ন কিংবা সংশয় রয়ে গেছে। কারণ স্ত্রীর সঙ্গে যদি এডিসি’র সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে তার স্ত্রী কেন এই সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিলেন না, এ নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে। তাছাড়া প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এডিসি এআর মজুমদারের স্ত্রী মরিয়াম তাহিরা লস্করকে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এডিসি সাংবাদিক সম্মেলনে যদিও তার স্ত্রীর সঙ্গে মানসিক অশান্তির কথা অস্বীকার করেছেন, কিন্তু তাহিরা লস্কর তার আগে তাদের মধ্যে মানসিক অশান্তির বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সব মিলিয়ে ঘটনাটি নিয়ে এখনো অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে।
Comments are closed.