Also read in

লিডারশিপ কোয়ালিটির জন্যই আমি সভাপতি পদপ্রার্থী, শিবব্রত দত্ত সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চান অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক

সাংগঠনিক স্তরে যেকোনো কাজে সফল হবার জন্য টিম ওয়ার্ক খুবই জরুরী। সঙ্গে থাকতে হবে দক্ষ নেতৃত্ব। লিডারশিপ কোয়ালিটি। ২৫-৩০ বছর থেকে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কাজ করার সুবাদে তার সেই দক্ষতা এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, দুটোই রয়েছে। এজন্যই শাসকগোষ্ঠী তাকে সভাপতি পথপ্রার্থী করেছে। এমনটাই মনে করেন অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক শিবব্রত দত্ত।

শিলচরের ক্রীড়াঙ্গনে শিবব্রত দত্ত খুবই পরিচিত মুখ। পেশাগতভাবে একজন সফল চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। শহরের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। রোটারি ক্লাবের মত মর্যাদা সম্পন্ন একটা সংস্থার সভাপতি সহ আরো বিভিন্ন পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এবার তিনি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আসন্ন বি জি এম এর সভাপতি পদপ্রার্থী ও। তাকে সমর্থন করছে শাসকগোষ্ঠী। ‌ অথচ দু সপ্তাহ আগেও সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন না শিবব্রত। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও আমি সভাপতির দৌড়ে ছিলাম না। তবে আমার কাছে যখন শাসকগোষ্ঠীর প্রস্তাব আসে তখন আমার অনুরাগীদের ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারিনি। ওদের অনুরোধেই আমি এই প্রস্তাব গ্রহণ করি। আসলে ওরা আমার দক্ষতা জানে। যোগ্যতার জন্যই ওরা আমায় সভাপতির পদপ্রার্থী করেছে।’ সভাপতি পদের জন্য শিবব্রত দত্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রয়েছেন বাবুল হোড়। দুজনেই তারাপুরের বাসিন্দা। আবার পাড়ার ক্লাব তারাপুর এসির সভাপতি এবং সচিব ও। এ সম্পর্কে শিবব্রত বাবু বলেন, ‘যার সঙ্গে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা তার সঙ্গে আমার দাদা -ভাই সম্পর্ক। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। পরিস্থিতির জন্যই আজ আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এর ফলে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। আমরা দুজনেই একে অপরকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখেছি।’
গত ২৫ বছর ধরে তারাপুর এসির সচিব পদে রয়েছেন শিবব্রত দত্ত। তার অধীনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে তারাপুর। অনেকবারই তিনি তারাপুরের সচিব পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন। নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিকল্প না থাকায় এতটা বছর ধরে তাকেই দায়িত্ব চালিয়ে যেতে হচ্ছে। গত দশ বছর থেকে তিনি জড়িয়ে রয়েছেন শিলচর ফুটবল একাডেমীর সঙ্গে। শিবব্রত বাবু বলেন, ‘টিম ওয়ার্কের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে শিলচর ফুটবল একাডেমি। আমরা সবাই মিলে আজ ফুটবল একাডেমিকে একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। গত দশ বছর থেকে আমি শিলচর ফুটবল একাডেমির সভাপতি। এখন একাডেমিতে আবাসিক ক্যাম্প হচ্ছে। এতে রয়েছেন ২২ জন খুদে ফুটবলার।’ তিনি আরো বলেন, ‘কদিন আগেই অনূর্ধ্ব ১৪ স্কুল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্যামাচরণ দেব বিদ্যাপীঠ। সেই চ্যাম্পিয়ন স্কুলের সবাই ছিল ফুটবল একাডেমির ছাত্র। এবার সেই দলটা গুয়াহাটি যাবে। এটা আমাদের জন্য এক দারুণ সাফল্য।’
কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গেই তিনি জানান, গুয়াহাটি ক্রীড়া সংস্থার পরই রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তবে প্রথমের সঙ্গে দ্বিতীয় স্থানের তফাৎটা অনেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি ঠিকই। তবে পরিকাঠামোর দিক থেকে গুয়াহাটির তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। ‌ দায়িত্বে এলে আমি এই ব্যবধানটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। আর্চারি, বক্সিং এবং কুস্তির মত এমন অনেক ইভেন্ট আছে যেগুলোর আমাদের এখানে কোন ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে কাজ করতে হবে। ‌ ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের পরিকাঠামো ও নেই। এসব দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’ তিনি মনে করেন সরকারি অনুদান ছাড়া পরিকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিবব্রত বাবু বলেন, ‘সরকারি অনুদান ছাড়া ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমার সঙ্গে জনপ্রতিনিতিদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই দায়িত্বে এলে ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। ‘
সভাপতি পদপ্রার্থী মনে করেন, কোন একটা জায়গায় খামতি ছিল তার জন্যই সতীন্দ্রমোহন দেব স্টেডিয়াম পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। তিনি বলেন, ‘সন্তোষ মোহন দেব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্বে থাকার পরও কেন স্টেডিয়ামের কাজ সম্পূর্ণ হলো না। আমার মনে হয় কোথাও একটা খামতি ছিল। সম্ভবত জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে স্টেডিয়ামের বিষয়টা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। সেই সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা হয়তো কাজটা করতে পারেননি।’ অভিজ্ঞ এই ক্রীড়া সংগঠক জানান, দায়িত্বে আসলে স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোর দিকে বিশেষ জোর দিবেন।স্টেডিয়ামকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘কারোর বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ নেই। তবে চেষ্টার মধ্যে ত্রুটি থাকতেই পারে। এখানেই কিন্তু লিডারশিপ কোয়ালিটি এসে যাচ্ছে।’
তিনি মনে করেন তার হাতে একটা দারুন প্যানেল রয়েছে। এতে যারা রয়েছেন সবাই অভিজ্ঞ এবং ভাল কাজ করার দক্ষতা রাখেন। বলেন, ‘আমি মনে করি এই প্যানেল একজোট হয়ে কাজ করতে পারবে। যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই প্যানেলের। তাই আমি পুরো টিমের জন্যই সংস্থার প্রত্যেক সদস্যের আশীর্বাদ চাইছি।’ বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের বিধায়ক। আমাদের সাংসদ রাজদীপ রায় ও দারুন অবদান রাখছেন ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নতিতে। শিলচর ফুটবল একাডেমিতে ২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন সাংসদ। বিধায়ক দীপায়ন ও একাডেমি এবং শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা দুটোতেই আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন।’ সভাপতি পদপ্রার্থী জানান, যেকোনো পরিবারে মান অভিমান থাকতেই পারে। তবে সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই আসল। এখানেই নেতৃত্ব প্রসঙ্গ টা এসে যায়। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলেই এগিয়ে নেওয়া যাবে শিলচরের স্পোর্টস কে। তিনি মনে করেন, নতুন প্রতিভাদের সুযোগ দিতে হবে। সুযোগ দিতে হবে দক্ষ ব্যক্তিদের। তাহলে উন্নয়ন সম্ভব। শিবব্রত বাবু জানান, প্রচারে দারুন সারা পাচ্ছেন। সবাই দারুন উৎসাহ দিচ্ছে।

Comments are closed.