By Bedobrata Banerjee and Anirban Roy Choudhury
ভারতের মতো ক্রিকেটপাগল দেশে একটি টি-টোয়েন্টি খেললেই রাতারাতি সুনাম অর্জন করা যায়। আবার এই ভারতেই এমন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ টুর্নামেন্ট রনজি ট্রফিতে টানা খেলে গেলেও সেই খ্যাতি অর্জন করতে পারেন না। দেশের জার্সি গায়ে এক টি ২০ ম্যাচ খেলেই আজকের দিনে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন অনেকেই। আবার এমন রয়েছেন যারা রাজ্য দলের হয়ে রনজি ট্রফিতে খেলেও ব্রাত্যই থেকে গেছেন। নিজেদের পরিবারের জন্য প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। সেইসব ক্রিকেটারদের অতীতের পারফরম্যান্স কথা যেন সবাই বেমালুম ভুলে গেছেন। ফলে প্রচণ্ড আর্থিক অভাবে ভুগতে হচ্ছে তাদের। এমন সব ক্রিকেটারদের সাহায্যের জন্য লোধা কমিশনের নির্দেশ অনুসারে গঠন করা হয়েছিল ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (আই সি এ)। গতবছর করোনার মহামারীর মধ্যেও আই সি এ দেশের ৩৫ জন ক্রিকেটার কে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। এই ৩৫ জন ক্রিকেটারই কিন্তু প্রচন্ড আর্থিক অভাবে ছিলেন। এমন একটা সময়ে তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে আই সি এ। সংস্থার প্রায় ১৫০০ সদস্য নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে একটা ফান্ড গড়েন। যা থেকে ৭০ লক্ষ টাকা উঠে। এরপর সেই টাকাটাই ৩৫ জন ক্রিকেটারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এভাবেই আর্থিক অভাবে থাকা ক্রিকেটারদের সাহায্য করে আসছে আই সি এ।
এবার প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া এই সংস্থাটি এগিয়ে এলো শিলচরের রনজি তারকা প্রকাশ ভগতের সাহায্যে। প্রচন্ড আর্থিক অভাবে থাকা প্রকাশকে এক লক্ষ টাকা দিল আই সি এ। সেইসঙ্গে সংস্থার সদস্য, ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ তথা এ দলের প্রাক্তন অধিনায়ক অমিকার দয়াল সাফ জানিয়ে দিলেন, প্রকাশকে আগামীতেও তারা সব ধরনের সাহায্য করবেন। সেইসঙ্গে তার মতো একজন ক্রিকেটার কে যেন একটা সরকারি চাকরি দেওয়া হয় তার জন্য আই সি এ অসম সরকার এবং কাছাড়ের জেলাশাসক কেও চিঠি দিয়ে আর্জি জানাবে।
দয়াল বাবু জানান, বরাক বুলেটিনের নিউজ দেখেই তারা প্রকাশকে সাহায্য করার জন্য তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নেন। আই সি এতে বিহারের প্রতিনিধি দয়াল বলেন, ‘বরাক বুলেটিনে প্রকাশের খবরটি দেখার পরই আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিই, ছেলেটাকে সাহায্য করতে হবে। সেই অনুসারে আমি আমাদের আইসিএ বোর্ড সভাপতি অশোক মলহোত্রার কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আর্জি জানাই। তিনি দেরি না করে দ্রুতই এক লক্ষ টাকা অনুদানের কথা জানিয়ে দেন। আমাদের সংস্থার ফান্ড থেকেই প্রকাশকে আজ এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখানেই থেমে থাকবো না। ছেলেটা যাতে একটা সরকারি চাকরি পায় তার জন্য অসম সরকার ও কাছাড়ের ডিসির কাছে চিঠি লিখবো। আমরা তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ এই মুহূর্তে এই টাকার খুব দরকার রয়েছে প্রকাশের। ছয় মাস পর এটা দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।’
ভারতীয় ক্রিকেটে প্রকাশের মতো ক্রিকেটারদের এমন আর্থিক অবস্থা দেখে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন দয়াল বাবু। তিনি বলেন, ‘ভাবতেও অবাক লাগে আজকের দিনে দেশের জার্সি গায়ে শুধু একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেই একজন ক্রিকেটার কোটিপতি বনে যাচ্ছে। অথচ যারা নিজের রাজ্য দলের হয়ে ২০-২৫ টি ম্যাচ খেলেছে তাদের কেউ খবরই রাখছে না। আজকের দিনে তারা ব্রাত্য। নিজেদের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। ভারতীয় ক্রিকেটে এটা একটা কঠিন বাস্তব। এটা প্রমাণ করে ভারতীয় ক্রিকেটে দেশের জার্সি গায়ে খেলা ক্রিকেটারদের সঙ্গে একজন ক্রিকেটারের পার্থক্য কতটুকু।’ আইসিএ সদস্য বলেন, ‘এই পার্থক্যটা আপনি শুধু ভারতীয় ক্রিকেটই দেখবেন। ইংল্যান্ডে কিন্তু এমনটা হয় না। সেখানে জাতীয় দলের হয়ে খেলা তারকাদের সঙ্গে কাউন্টি ক্রিকেটারদের তেমন পার্থক্য নেই।’ প্রকাশ প্রসঙ্গে দয়াল বাবু বলেন, ‘এতটা বছর রাজ্য দলের হয়ে খেলার পরও এখন কেমন অনুভব হচ্ছে প্রকাশের, তা আমি খুব সহজেই বুঝতে পারছি। ওর সঙ্গে যারা খেলেছিল, এমনকি যারা শুধু এক ম্যাচ খেলেছিল রাজ্য দলের জার্সি গায়ে তারা কিন্তু আজ প্রতিষ্ঠিত। আর প্রকাশ রাস্তার পাশে ডালপুরি বিক্রি করছে। এটা ভারতীয় ক্রিকেটের এক বাস্তব চিত্র। আমি আপনাদের (বরাক বুলেটিন) ধন্যবাদ জানাই প্রকাশের এই করুণ কাহিনী তুলে ধরার জন্য। আমি চাইবো প্রকাশ কোচেস কোর্স করুক। এতে ওর লাভ হবে। আমরা ওর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
এদিকে প্রকাশ জানান, এমন কঠিন সময়ে আইসি এ যেভাবে তার পাশে দাঁড়িয়েছে এর জন্য তিনি খুশি।
Here is the story published earlier:
https://barakbulletin.com/silchars-cricketer-prakash-bhagat-who-once-shared-nca-with-sachin-sourav-now-sits-at-a-roadside-stall/
Comments are closed.