"সোনিয়া গান্ধী জানতে চেয়েছেন বিধায়ক হতে ইচ্ছুক কিনা, আমি মানা করেছি," বললেন সুস্মিতা
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিলচর থেকে কংগ্রেস দলের প্রার্থী ছিলেন বিথীকা দেব, এবছরের নির্বাচনে সুস্মিতা দেব নিজেই শিলচর থেকে প্রার্থী হবেন, এমনটাই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে। শুক্রবার কংগ্রেস কার্যালয় বসে সুস্মিতা জানান, কংগ্রেস হাইকমান্ড সোনিয়া গান্ধী নিজে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন বিধানসভার প্রার্থী হতে চান কিনা, যদি চান তাহলে কোন আসন তার পছন্দের। সুস্মিতা জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচনে কাছাড় জেলার কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে নেই তার, বরং এই দুঃসময়ে দলের প্রত্যেক একনিষ্ঠ কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে যতটুকু সম্ভব সাফল্য এনে দেওয়াই লক্ষ্য।
ইতিমধ্যে দলের তাবড় তাবড় নেতারা বিজেপির সদস্যপদ নিয়েছেন। রুমি নাথ বা রাজদীপ গোয়ালার মত সফল নেতাদের বহিষ্কার করেছে কংগ্রেস। এই সময় দাঁড়িয়ে আগামীতে কাছাড় জেলার সাতটি কেন্দ্রে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া গেছে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দলের তরফে একটি অভ্যন্তরীণ সার্ভে করা হয়েছে, শুক্রবার তাঁর শেষ দিন ছিল। সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা হবে কারা দলের কর্মকর্তাদের পছন্দের প্রার্থী। বহু বছর ধরে কংগ্রেস দল এভাবেই প্রার্থী নির্ধারণ করে আসছে। রিপোর্ট যাচাই করে একটি তালিকা গঠন হবে, তারপর প্রার্থীদের ফাইনাল তালিকা ঠিক করার আগে আরও অন্যান্য বিষয় দেখা হবে। এটুকু বলতে পারি জানুয়ারি মাসের শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মোটামুটি ধারণা হয়ে যাবে কাছাড় জেলায় সাতটি কেন্দ্রে কংগ্রেস দলের প্রার্থী কারা হচ্ছেন। তবে শুধুমাত্র সার্ভে রিপোর্ট শেষ কথা নয়, কারন আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখেছি যিনি সার্ভে রিপোর্ট প্রথমে এসেছেন, তিনিও নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। বরং অন্য যোগ্য প্রার্থী ছিলেন যার জয়ের সম্ভাবনা বেশী ছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বরাক উপত্যকা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবে। দুঃসময় দলের ভিত শক্ত রাখতে তারা আমাদের সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন। সফলতা কতটুকু আসবে সেটা এখানে বসে গোষণা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের অন্তত দুমাস বাকি, এই সময়ে অনেক কিছু পাল্টে যেতে পারে, এটাই রাজনীতির চরিত্র।”
শুক্রবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করেন সুস্মিতা দেব। তার সঙ্গে যোগ দেন প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং, জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ দে সহ অন্যান্যরা। তারা বিজেবি সরকারের বিভিন্নভাবে নিয়ে সমালোচনা করার পাশাপাশি কংগ্রেস দলের অন্তর্কোন্দল নিয়ে নিজেদের স্থিতি পরিষ্কার করেন।
সম্প্রতি শিলচরে বিজেপির বিরাট জনসভা হয়েছে, সেখানে যোগ দিতে আসেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সহ তাবড় তাবড় নেতারা। গত সাড়ে চার বছরের বিজেপির শাসনের বিভিন্ন সফল দিক তুলে ধরার পাশাপাশি কংগ্রেস দলকে নানান দিক দিয়ে দোষারোপ করেন তারা। এই প্রসঙ্গে সুস্মিতা দেব বলেন, “জেপি নাড্ডা নিজেই বলেছেন বিজেপি আসাম আন্দোলনের সমর্থক। বরাক উপত্যকায় আসাম আন্দোলন হয়নি বরং সেই আন্দোলনের টার্গেট ছিল বাঙালি এবং বরাক উপত্যকা। আসাম আন্দোলনের সমর্থকরা কখনোই বরাক উপত্যকার উন্নতির চাননি। বিজেপি দলের কেন্দ্রীয় স্তরের নেতারা শিলচরে দাঁড়িয়ে বলছেন তারা আসাম আন্দোলনের সমর্থক, আবার বরাক উপত্যকার ১৫টি আসন জেতার দাবিও করছেন। উপত্যকার জনগণকে এতোটুকুই বোকা ভাবেন তারা। ২০১৬ সালে তারা বলেছিলেন বরাক নদীর উপর পাঁচটি সেতু হবে, শুধুমাত্র একটি সেতুর কাজ শুরু হয়েছে, দুটো খুঁটি বসানো হয়েছে। এমন আরও অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি তারা একেবারেই রাখতে পারেননি। তবে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি দলের দ্বিচারিতা। তারা রাজ্যের মানুষকে এনআরসির নামে একটা হেনস্থা করলেন, জনগণের এত টাকা খরচ করালেন, অথচ এখন বরাকে দাঁড়িয়ে আবার ঘোষণা করছেন তারা দ্বিতীয়বার জয়ী হলে নতুন এনআরসি করবেন। এই কথা আমরা বারবার বলেছি, বিজেপি এমনটাই করবে। আমি বরাক উপত্যকার প্রত্যেক বাঙালিকে বলতে চাই, বিজেপি আবার সরকার গঠন করলে কাগজপত্র এবং টাকা-পয়সা নিয়ে তৈরি থাকুন, আরেকপ্রস্থ বাঙালি-হেনস্থা অবশ্যম্ভাবী। তারা রাজ্যের বাঙালির কাছে আবার নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইবেন এবং পর্যাপ্ত কাগজ দেখালেও নাগরিকত্ব ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে দেওয়া হবে।”
কংগ্রেস দলের ভেতরের বিদ্রোহের সুর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। দলের একাংশ বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা অভিযোগ করেছেন সুস্মিতা দেব হিমন্ত বিশ্ব শর্মা হয়ে কাজ করছেন এবং দলকে দুর্বল করছেন। এই প্রশ্নের উত্তরের সুস্মিতা বলেন, “আমার দায়িত্ব দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের শক্তি বৃদ্ধি করা এবং তাদের এক করে রাখা। যারা অভিযোগ করছেন তাদের কথাও আমি শুনতে রাজি। তবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয়স্তরের কমিটি রয়েছে। পাশাপাশি এটুকু বলতে চাই, আমি জানি কারা বিজেপির দরজা ঠকঠক করেছেন এবং প্রত্যাখ্যান পেয়ে ফিরে এসেছেন। এব্যাপারে আলোচনা করার সময় আমার কাছে নেই। মনথেকে কংগ্রেস করি, এই দলের দুর্দিনে শক্তি হিসেবে কাজ করতে চাই, দুর্বলতা নয়।”
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের বিভিন্ন স্লোগানের প্রসঙ্গ টেনে সুস্মিতা দেব বলেন, “রাজ্যের মাটি বাঁচানো অথবা দুই উপত্যকাকে সমান চোখে দেখার দাবি কতটুকু মিথ্যে সেটা লায়লাপুর গেলেই বোঝা যাবে। সর্বানন্দ সোনোয়াল ধলাই গিয়ে পার্ক উদ্বোধন করেছেন অথচ আরেকটু এগিয়ে মিজোরাম সীমান্তে যাওয়ার তার সাহস হয়নি। আমি ভেবেছিলাম অন্তত এ ব্যাপারে যেটা কথা হবে, সেটাও হয়নি। তাদের ব্যর্থতার এমন অনেক নিদর্শন চোখের সামনে রয়েছে যেটা দেখেও দেখতে চান না দলের সমর্থকরা।”
প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং বলেন, “বিজেপি নিজের দলের বরিষ্ঠতম নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থকেই সম্মান দেয়না, তারা আবার বরাক উপত্যকার মানুষের দোহাই দিয়ে কথা বলেন। তারা চা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ৩৫১ টাকা করবেন বলে পাঁচ বছর আগে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেটাও অধরা। বরাকের ছেলেমেয়েরা সরকারি চাকরি পায় না, আর বিজেপির বরাকের নেতারাই বলেন তাদের নাকি যোগ্যতা নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে, দিন-দুপুরে ছিনতাই হচ্ছে অথচ কোনও অপরাধী ধরা পড়ছে না। বিজেপির নেতারা কংগ্রেসকে গালাগাল দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা এড়িয়ে চলেন।”
Comments are closed.