
"এভাবে চললে আমাদেরই মৃতদেহ শ্মশানে জ্বলবে," সারারাত কোভিড মৃতদেহ সৎকার করে কোয়ারেন্টাইনে ফিরে খাবার জোটেনা পিনাকদের, নীরব প্রশাসন
১৬ জুলাই থেকে প্রায় রোজ করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকার করেছেন রাইজিং ইয়ুথ সোসাইটির পিনাক রায় এবং তার সহযোগীরা। আমরা আগেও তাদের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে লিখেছি। তবে স্বেচ্ছায় এত বড় কাজ করার পরেও তাদের খাবারটু্কু পর্যন্ত নেই, অথচ এ নিয়ে চিন্তিত নন প্রশাসন। জেলাশাসক বা বড় বড় আধিকারিকরা শুধু বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ফেসবুকে ফটো দিতেই ব্যস্ত। তাদের প্রদীপের নিচেই যে সবথেকে বড় অন্ধকার তা কারোর চোখে পড়ে না।
সারারাত শ্মশানে জল পর্যন্ত পাননা পিনাক এবং তার সহযোগীরা, এটা আমরা আগেও বলেছি। কাজ শেষ করে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ফিরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় যখন খাবার প্যাকেট খোলেন, চোখে পড়ে অত্যন্ত নিম্নমানের খাওয়া। পিনাক রায় বলেন, “অত্যন্ত নিম্নমানের ভাত এবং অল্প একটু তরকারি দিয়ে দেওয়া হয়। এসব খাবার মুখে তোলা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা এগুলো খেতে পারিনা, এই কথা বললে সেই সাপ্লাইয়ার উল্টো আমাদের গালাগাল দেয়। আমাদের বলে, ‘তোরা বাড়িতে কি এর থেকে ভালো খাবার খাস?’ আমরা প্রত্যেকেই বাড়িতে যে খাবার খাই সেটা অন্তত মুখে তোলার যোগ্য। কিন্তু এসব কথা কাউকে বলে লাভ হয় না।”
এসব ব্যাপারে প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে তারা বারবার বলেছেন। আধিকারিকরা প্রথমে আশ্বাস দেন, তারা সাপ্লায়ারের সঙ্গে কথা বলবেন, আর সাপ্লায়ার আধিকারিকের সামনে আশ্বাস দেয়, ভালো খাবার দেবে বলে। তবে এখানেই নাটক শেষ, তারপর যেই সেই। সম্প্রতি পিনাক রায় তার এক সহযোগীর হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দিয়ে সাপ্লায়ার ওয়াসিম মজুমদারের বাড়িতে পাঠান। সেই সহযোগীকে অত্যন্ত নিম্নমানের ভাষায় গালাগাল দেন ওয়াসিম মজুমদার। তার ব্যবহারে অপমানিত বোধ করেন দিলওয়ার নামের সদস্যটি। তারা এসব ব্যাপারে জেলা দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের আধিকারিক এবং ডিডিসি জেসিকা রোজ লালসিমের কাছে জানিয়েছেন। তবে এতে সমস্যার সমাধান হয়নি।
পিনাক রায় জানান, প্রশাসনের দেওয়া খাবার খেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তাই বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধব এবং সামাজিক সংগঠনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। তাদের কথায় সাড়া দিয়ে শিক্ষিকা মধুছন্দা বিশ্বাস রোজ সকালে কিছু না কিছু খাবার পাঠিয়ে দেন। আবার সপ্তক দাস নামের এক যুবক বিকেলে তাদের জন্য কিছুটা খাবার জোগান দেন। তবে সরকারের কাজ করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে খাবার নিয়ে বেশিদিন খেতে পারবেন না তারা।
পিনাক বলেন, “এভাবে চললে হয়তো আমাদের একদিন না খেয়ে মরতে হবে, হয়তো একদিন আমাদেরই মৃতদেহ এই শ্মশানে অন্য কেউ পোড়াবে। অথবা এর আগে অপমান এবং যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়ে এই কাজ থেকে সরে যেতে হবে।”
তারা এই দুঃসময়ে সমাজের কাজে নিয়োজিত থাকার জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি আত্মীয়-স্বজন সব ত্যাগ করেছেন। দিনের পর দিন মানুষের দুর্ব্যবহার সহ্য করেও শিলচর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে জমে থাকা পচাগলা মৃতদেহ সৎকার করেছেন। অথচ তাদের প্রাপ্য খাবারটুকু পৌঁছে দিতে ব্যর্থ প্রশাসন। প্রশাসনের ব্যর্থতার এর থেকে বাজে নিদর্শন হয়তো আর হতে পারে না। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট, জেলাশাসক বারবার মিথ্যে আশ্বাস দিলেও, তার বিভাগের দ্বাড়া নিযুক্ত খাবার সাপ্লায়ার নিম্নমানের খাবার দিচ্ছেন এবং সরকারি টাকা কারচুপি করছেন। তবু জেলাশাসক জেলার মালিক, তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি হয়ত আখেরে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই দোষ চাপাবেন। এটাই কি কাছাড়ের ভবিতব্য?
Comments are closed.