
সাগরিকা রিজেন্সির অবৈধভাবে নির্মিত অতিরিক্ত ফ্লোর হটানোর কাজ শুরু করল শিলচর পৌরসভা
শিলংপট্টির সবথেকে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল সাগরিকা রিজেন্সির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নির্মাণের অভিযোগ ছিল। গতবছর সুব্রত মজুমদার সহ আটজন নাগরিক গৌহাটি হাইকোর্ট এব্যাপারে একটি পিআইএল দায়ের করেন। সাগরিকা রিজেন্সির মালিক বিশ্বজিৎ রায়, কাছাড়ের জেলাশাসক এবং শিলচর পুরসভার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে কনস্ট্রাকশনের অভিযোগ করেছিলেন তারা। সেই সূত্র ধরে গৌহাটি হাইকোর্ট শিলচর পুরসভা এবং কাছাড়ের জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন এব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য। তদন্ত করে ডিটেইল রিপোর্ট গোহাটি হাইকোর্টের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ ছিল।
এরপর নানান প্রক্রিয়ায় অনেকটা দিন কেটেছে, শেষমেষ ২২ জানুয়ারি স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে, এবার শিলচর পৌরসভা গোহাটি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সাগরিকা রিজেন্সির কিছু অংশ ভাঙতে শুরু করেছে। তবে এতে সহযোগিতা করছেন সাগরিকার এজেন্সির মালিক পক্ষ নিজেই।
অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা শিলচর পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সুমিত সত্যওয়ান জানিয়েছেন, ‘২২ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি স্থগিতাদেশ ছিল এখন সেটা আর নেই। আমাদের কাছে আগে থেকেই নির্দেশ রয়েছে বিল্ডিংয়ের কিছু অংশ মাপযোগ করতে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত এলাকাগুলো ভেঙে দিতে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি, কাল রাতেই আমাদের কর্মীরা সেখানে কাজ শুরু করেছেন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যেভাবে অবৈধ নির্মাণের কথা থাকবে, সেই অনুযায়ী আমাদের কর্মীরা কাজ করবেন। যেহেতু সরাসরি গৌহাটি হাইকোর্ট ব্যাপারটি দেখছেন তাই আমাদের নিজের মত কিছু বলার নেই।’
হাইকোর্টের জাস্টিস অজয় লাম্বা এবং জাস্টিস মনিষ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে গতবছর তদন্ত শুরু হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, সাগরিকা রিজেন্সির বিল্ডিংয়ের যে পারমিশন দেওয়া হয়েছিল তাতে বলা ছিল বি+জি+৪ আদলে কনস্ট্রাকশন হবে, অর্থাৎ মূল বিল্ডিংটি চারতলার হবে। অথচ যে বিল্ডিংটি বানানো হয়েছে সেটা পাঁচতলার। কথা ছিল কমার্শিয়াল পারপাস অর্থাৎ জেনারেল এবং রিটেল কাজের জন্য বিল্ডিংটি ব্যবহৃত হবে, অথচ পরবর্তীতে সেখানে হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট বানিয়ে সেটাই মূল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে সরাসরি পুরসভার দেওয়া পারমিশন অমান্য করা হয়েছে। পুরসভা আইন অনুযায়ী পুরো জমির ৪০ শতাংশ এলাকায় কনস্ট্রাকশন করা যাবে, অথচ সাগরিকা রিজেন্সির যে বিল্ডিং বানানো হয়েছে তাতে ৭১.৩৮ শতাংশ এলাকা বিল্ডিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এতে আরেকবার পৌরসভা আইন ভঙ্গ করা হয়েছে।
গোটা বিল্ডিং বানাতে যে জায়গার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এটা প্রায় সব দিক থেকেই অমান্য করা হয়েছে। পূর্বদিকে ৮ মিটার জায়গা ছাড়ার কথা ছিল সেখানে সাগরিকার এজেন্সি ৭.০৩ মিটার ছেড়ে বিল্ডিং বানিয়েছে। একইভাবে কেন্টিলেভার প্রজেকশন দেড় মিটার হওয়ার কথা সেখানে দুই মিটার বানানো হয়েছে। রিয়ার সেট বেক ১১.২১ মিটার থাকার কথা ছিল অথচ সাগরিকার রিজেন্সি সেখানে ৯.৭১ মিটার জায়গা দখল করে শুধুমাত্র ২.৬৭ এটার জায়গা ছেড়েছে। এভাবেই আরও অনেকদিক থেকে অতিরিক্ত জায়গা দখল করে বিল্ডিং বাড়ানো হয়েছে। এবং সেটা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ফলে পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জায়গা গুলো ভেঙে দেওয়ার।
সাগরিকা রিজেন্সির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, “আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যেটুকু এলাকা ছেড়ে দিতে হবে ছেড়ে দেব। শিলচর পুরসভার আধিকারিকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাদের কাজে আমরা সহায়তা করছি।”
অতীতে তারা জানিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, “একজন প্রাক্তন বিধায়ক ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন। তার পরিচিত মানুষদের দিয়ে অযথা মামলা করেছেন। এমনকি পুরো প্রক্রিয়ায় যাতে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দেখানো যায় এব্যাপারে সচেষ্ট সেই প্রাক্তন বিধায়ক তথা ব্যবসায়ী।”
Comments are closed.