মিনি এটিএম নাম দিয়ে জালিয়াতির ফাঁদে শিলচরের ব্যবসায়ী, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিল বেআইনি কোম্পানি
উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ীর সাথে শিলচরের বিলপার শ্যামানন্দ আশ্রম রোডের দীপঙ্কর রায়ও ৮ লাখ টাকা খোয়ালেন। অন্যতম অভিযুক্ত হলেন শিলচর রাঙ্গিরখাড়ি হরিমোহন লেনের স্বপন কুমার কর। অভিযুক্তদের মধ্যে আরও রয়েছেন, জলপাইগুড়ির সুজন সরকার এবং উনার স্ত্রী সুতপা রায় সরকার।
বিমুদ্রাকরণের পর ভারত সরকার যখন নগদ টাকায় লেনদেন কমানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বিভিন্ন ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যেও পিওএস (POS) মেশিন বসানোর তোড়জোড় চলছিল।
এই পিওএস মেশিনের হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ নিয়ে গুয়াহাটির একটা সংস্থা বরা সার্ভিস মিনি এটিএম নামে একটি মেশিন বাজারে নিয়ে আসে। এই মেশিনটিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অঙ্গ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
২০১৭ সনে শিলচরেরই স্বপন কর নামক এক ব্যক্তি দেবাঞ্জলি ট্রেডিং সংস্থার কর্ণধার দীপঙ্কর রায়ের কাছে এই ব্যবসা নিয়ে হাজির হয়। দীপঙ্কর রায় আমাদের জানালেন, “স্বপন কর আমাকে জানায় যে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিজিটাল ইণ্ডিয়া উদ্যোগের সাথে তাল রেখে এই সোয়াইপ মেশিনের ফ্রাঞ্চাইজি নেওয়ার জন্য। বিভিন্ন নায্যমূল্যের দোকান এবং মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে এই মেশিন সরবরাহ করে কমিশন হিসেবে প্রতি লেনদেনে ২৫ পয়সা করে আমি পাব।”
এই প্রস্তাবে প্রভাবিত হয়ে দীপঙ্কর রায় ক্লাস্টার ফ্রাঞ্চাইজি নিতে সম্মত হন এবং ১০০টি মেশিন কেনেন; ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছয়-সাতটা মেশিন নায্যমূল্যের দোকানে বসান। তারপর লেনদেন সম্বন্ধে অবহিত হয়ে বুঝতে পারেন যে, টাকাগুলো কোন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে না- একটা সংস্থার একাউন্টে চলে যাচ্ছে। এটার সাথে কোন ব্যাঙ্কিং সংস্থা আদৌ জড়িত নয়। “ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমি সাথে সাথে এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নেই এবং ৬৬টি মেশিন ফিরিয়ে দেই। সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক মেশিনগুলো সমঝে নিয়ে আমাকে ৮ লাখ টাকার চেক দেন”, জানালেন রায়।
সেই চেক ব্যাঙ্ক থেকে ফেরত আসে বারবার, তিনবার, তারপর দীপঙ্কর রায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠান কিন্তু ততক্ষণে স্বত্বাধিকারী ব্যবসা গুটিয়ে সরে পড়েছেন।
গতকাল রায় শিলচর সদর থানায় সংস্থার স্বত্বাধিকারী সুজন সরকার এবং উনার স্ত্রী সুতপা রায় সরকার, জোনাল ম্যানেজার অঞ্জন চন্দ এবং স্বপন কুমার সরকারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক এজাহার দাখিল করে সবাইকে জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। দীপঙ্কর রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এই সংস্থা ইতিমধ্যে ৪০ জন ব্যবসায়ীকে সর্বস্বান্ত করে প্রায় তিন কোটি টাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।
Comments are closed.