সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ালে কড়া দাওয়াই, সাফ জানিয়ে দিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক, ভি এইচ পির মিছিলে সর্বাবস্থায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন
বাংলাদেশে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর এবং হিন্দুদের নির্যাতন করার ঘটনা ধিক্কারজনক। তবে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে যাতে শান্তির দ্বীপ কাছাড়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। তবে জনসাধারণকেও এগিয়ে আসতে হবে। কোনো ধরনের গুজবে কান দিলে চলবে না। সর্বাবস্থায় শান্তি বজায় রাখতে হবে। রবিবার রাত দশটায় ডিসি অফিসের কনফারেন্স হলে তড়িঘড়ি এক নাগরিক সভা ডেকে এমনটা জানিয়ে দিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি। সেই সঙ্গে তিনি এটাও সাফ জানিয়ে দেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ধরনের গুজব ছড়ালে কড়া ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। যারা অযথা গুজব ছড়িয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।
রবিবার বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে কাছাড়ের কাটিগড়ায় এক প্রতিবাদী মিছিল বের হয়। তবে কাটিগড়া কুশিয়ারকুলের জালালপুর এলাকায় সেই মিছিল পৌছতেই এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া সদস্য এবং সেখানে উপস্থিত জনাকয়েক ব্যক্তির মধ্যে কিছু একটা নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর খুব কম সময়ের মধ্যেই সেটা হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘটনা আর বেশিদূর এগোয়নি।
তবে পরিস্থিতি এখনো থমথমে। তাই কাটিগড়ার সেই ঘটনার রেশ যাতে গুজবের আকার ধারণ না করে এবং আরো ভয়ঙ্কর কিছুর রূপ না নেয়, সেজন্যই তড়িঘড়ি এক নাগরিক সভার ডাক দিয়েছিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক। সভায় উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার রমনদীপ কৌর ও। তিনি জানান, পুলিশের হস্তক্ষেপে কাটিগড়ার ঘটনা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে নি। সেখানে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার সকালে এক মিছিলের ডাক দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেই মিছিল যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় সেটা নির্দিষ্ট করতে ভিএইচপির কর্মকর্তাদের প্রতি আবেদন জানান কাছাড়ের জেলাশাসক। কোনো অবস্থাতেই যাতে মিছিল হিংসাত্মক আকার ধারণ না করে ভিএইচ পির কর্মকর্তাদের বলেন কীর্তি জল্লি। জবাবে সভায় উপস্থিত ভি এইচ পির কর্মকর্তারাও জানান, এই প্রতিবাদ মিছিল বাংলাদেশে যা কিছু ঘটেছে তার বিরুদ্ধে। এখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কারোর কোনো সমস্যা নেই। মিছিলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে মিছিল যাতে সর্বাবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ভিএইচপির কর্মকর্তারা এক বৈঠক সেরে ফেলেছেন। ৫০ জনের একটা দল গঠন করা হয়েছে। কোনো দুষ্কৃতী যাতে বাইরে থেকে এসে মিছিলে গন্ডগোল পাকাতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর রাখা হবে। সেই সঙ্গে এদিনের সভায় ভিএইচপির কর্মকর্তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান, তারাও যেন মিছিলে শামিল হয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন বড়খলার বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর। তিনি ভিএইচপির কর্মকর্তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে জানান, বাংলাদেশের যা কিছু ঘটেছে তা ধিক্কার জনক। প্রতিবাদী মিছিলে মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যা কিছু ঘটেছে সেটা ন্যক্কারজনক। আমাদের এর প্রতিবাদ জানাতে হবে। তবে অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে। আমি চাইবো আমাদের মুসলিম ভাইরাও বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে এগিয়ে আসুক। এতে সমাজে একটা ভালো বার্তা পৌঁছাবে।’ একই সুরে কথা বলেন লক্ষীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাইও। সভায় উপস্থিত ছিলেন কাটিগড়ার এমএলএ খলিল উদ্দিন মজুমদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাহীন আহমেদ, পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, শান্তনু নায়েক, এ ডি সি দীপক জিডুং এবং ডি ডি সি রাজিব রায়।
Comments are closed.