সীমান্ত জেলা করিমগঞ্জে উন্মুক্ত ভারত বাংলা সীমান্ত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নচিহ্নের মুখে
সীমান্ত সুরক্ষার নামে কোটি কোটি খরচ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় গৃহ বিভাগের পক্ষ থেকে। কিন্তু সীমান্ত জেলা করিমগঞ্জে আজ অবধি উন্মুক্ত রয়েছে ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত। আর এরই কারণে ইন্দো বাংলা সীমান্তে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর কঠোর প্রহরা থাকা সত্বেও সীমান্তে চোরাচালানে লাগাম টানতে সক্ষম হয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
দীর্ঘ বারো বছর পূর্বে উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটা তারের নির্মাণ কাজে দুই নির্মাণ সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত উন্মুক্ত রয়েছে খোদ করিমগঞ্জ শহরের কুশিয়ারা নদীর তীরে থাকা সাড়ে চার কিলোমিটার নদী তীরবর্তী সীমান্ত এলাকা। অবশ্য এর দায়ভার যে নির্মাণ সংস্থার উপর যাচ্ছে এমনটা কিন্তু নয় । অভিযোগের আঙ্গুল সরাসরি বর্তায় কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার প্রশাসনের উপর । প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকা চিহ্নিত করে না দিতে পারার কারণেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সিল থাকার সময়েও উন্মুক্ত রয়েছে সীমান্ত জেলা। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে চাপা পড়ে রয়েছে গোটা প্রক্রিয়া ।
ভারত বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি মতে, ২০০৫ সালে শুরু করা হয়েছিল ইন্দো বাংলা কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ কাজ। করিমগঞ্জ জেলায় ৯৩ কিলোমিটার জুড়ে উন্মুক্ত সীমান্তে নির্মাণ কাজের জন্য বরাত দেওয়া হয় এন বি সি সি নামের একটি সংস্থাকে।সেই অনুযায়ী ৩৬ কিলোমিটার নদী সীমান্ত এবং ৫৭ কিলোমিটার স্থল সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ কাজের বরাত গ্রহণ করে এনবিসিসি নামের নির্মাণ সংস্থা। ভাঙা থেকে কুকিতল অবধি ঠিকঠাক ভাবে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে বাধ সাধে সীমান্ত জেলার করিমগঞ্জ শহরে কুশিয়ারা নদীর তীরে থাকা সীমান্ত এলাকা। শহর সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা, কুশিয়ারা নদীর তীরে অনেক স্থায়ী বসতবাড়ি রয়েছে, যার কারণে ২০০৯ সালে সেখানের সাড়ে চার কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তার বসাতে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন স্থানীয় বাসিন্দা অনেকে। আবেদন গড়ায় কেন্দ্রীয় সরকার অবধি। রাজনৈতিক মুনাফা বুঝে আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গ ধরে সমর্থনে মাঠে নামে বর্তমানে শাসকের গদি দখল কারী গেরুয়া দল। এর পর থেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। আজ অবধি অধরা সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কাঁটা তারের বেড়ার নির্মাণ কাজ।
দিল্লির মসনদে হাত বদল হওয়ার পর গেরুয়া দলের হাতে কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব গেলে ২০১৬ সালে কিন্তু উন্মুক্ত সীমান্ত পরিদর্শন করে গেছেন তৎকালীন গৃহ মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেই সময়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, সদৌ আসাম ছাত্র সংস্থার নেতৃত্বদের সঙ্গে নিয়ে এসে সীমান্ত এলাকায় দাঁড়িয়েই একই বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উন্মুক্ত সীমান্ত নির্মাণ কাজ সম্পর্ণ হওয়ার প্রতিশ্রুতি রেখে গিয়েছিলেন খোদ দেশের গৃহ মন্ত্রী নিজে । কিন্তু লক্ষণীয় ভাবে দীর্ঘ চার বছর পরও কেন্দ্র সরকারের গৃহ মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অথৈ জলে। কা আন্দোলনে মারমুখী ভূমিকা গ্রহণ করা আশু নেতৃত্বরা সীমান্ত সিল নিয়ে আজকের দিনে ভাত ঘুমে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, করিমগঞ্জ শহর সংলগ্ন যে সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণ হবে সেই এলাকায় স্থানীয় দের ক্ষতিপূরণ বাবদ কিন্তু ১৯ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে এবং তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকা সুবিধা প্রাপকদের হাতে কিন্তু তোলে দেওয়া হয়েছে বরাদ্ধ অর্থের নিজ নিজ পরিমাণ । কিন্তু সরকারের দেওয়া নগদ অর্থ ভোগ করেও নিজেদের কব্জায় থাকা ভূমি ছেড়ে দিতে নারাজ স্থানীয়রা । কোন অজ্ঞাত কারণে এখানে কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানের সাহস দেখাতে পারেনি করিমগঞ্জ জিলা প্রশাসন।
এদিকে নির্মাণ সংস্থা এন বি সি সি এবং বিএসএফের পক্ষ থেকে কিন্তু সীমান্ত নির্ধারণ করে দিতে জেলা প্রশাসনকে বার বার আবেদন করা হচ্ছে। একাধিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ চার বছরে চারজন জেলাশাসক করিমগঞ্জ জেলা শাসনকর্তার দায়িত্ব নিলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সমাধান করার সাহস দেখাতে সক্ষম হননি কোন জেলাশাসক । উন্মুক্ত সীমান্তে বেশির ভাগ এলাকায় স্থানীয়দের ভিটে বাড়ি থাকার কারণে সীমান্তে টহল দেওয়া অসম্ভব সুরক্ষা বাহিনীর পক্ষে। করোনাকালে চার মাসের বেশি সময় ধরেই ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে । করিমগঞ্জ সীমান্তে গৃহবন্দি রয়েছেন নো ম্যান্স ল্যান্ডের ৭৫০ এর বেশি মানুষ। আর সীমান্ত জেলার খোদ শহর সংলগ্ন এলাকায় উন্মুক্ত সাড়ে চার কিলোমিটার সীমান্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক সময়ে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয় তাহলে কোনদিন গালোওয়ান সদৃশ পরিবেশেরও সৃষ্টি হতে পারে, আর তাতে কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই ।
Comments are closed.