Also read in

লকডাউন কালে ভিসার মেয়াদ শেষ, কি করে দেশে ফিরবেন সে চিন্তায় দিশেহারা বাংলাদেশে আটকে পড়া চন্দনা ও তাঁর পরিবার

কুড়ি বছর পর ঘুরতে গিয়েছিলেন ওপারে বাবার পৈতৃক ভিটায়। কিন্ত এবার দেশে ফিরতে বাধ সাধল কাল করোনা। লকডাউনের কারণে দুই মাস আগেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এবারে বিপদগ্রস্ত তিনি। দুই মাসের বেশি সময় ধরে দুই কন্যা, জামাতা সহ নাতনিকে নিয়ে আটকা পড়েছেন নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে। কি করবেন, কিভাবে ফিরবেন নিজের দেশের মাটিতে, আর কতদিনই বা থাকতে হবে বাংলাদেশে। দুই মাস ধরে এসব দুশ্চিন্তাই ঘোরপাক খাচ্ছে মাথায়।করোনাকালে এভাবে যে দূর্গতি ভোগ করতে হবে আগাম জানলে হয়তো পাসপোর্ট বা ভিসার আবেদন করারই সাহস করতেন না আগে । হ্যাঁ, এমনটাই অবস্থা করিমগঞ্জের মেদল, জয়রাম কলোনির বাসিন্দা চন্দনা দেবীর।

চন্দনা বর্ধন।তিনি করিমগঞ্জ জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়েই বাবার দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের দেখতে কুশিয়ারা নদী পেরিয়ে ওপারে পাড়ি দিয়েছিলেন ১১ মার্চ। সহযাত্রী হিসাবে সঙ্গে ছিলেন ছোট মেয়ে তুলি বর্ধন, তার অন্য বিবাহিত মেয়ে করিমগঞ্জ শ্যামাপ্রসাদ রোডের বাসিন্দা মন্টি দেব, জামাতা অনুপ দেব সহ দুই বছরের নাতনি মেহেক দেব‌।কথা ছিল পনেরদিন পর আবার জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ফিরে যাবেন বাড়িতে।কিন্তু ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকার সেখানে প্রথম দশদিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে। অন্যদিকে ভারতে ২৪ মার্চ থেকে প্রথম দফায় একুশ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যার কারণে দুই দেশেই স্তব্ধ হয়ে পড়ে জনজীবন, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে আন্তরাষ্ট্রীয় সীমান্ত দিয়ে যাত্রী পারাপার । এরমধ্যে পাঁচজনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ১১ এপ্রিল।শেষ পর্যন্ত ঘর বন্দী অবস্থায় আটকা পড়ে এখন অবধি রয়েছেন সিলেট ডিভিশনের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কায়স্থগ্রামে থাকা সম্পর্কিত ভাইয়ের বাড়িতে।

মে মাসের মাঝামাঝি সেখানে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলে তারা যোগাযোগ করেন সিলেটে থাকা ভারতীয় সহকারি হাইকমিশন কার্যালয়ে। ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বন্দে ভারত মিশনের’ অধীনে যখন বাংলাদেশে আটকে পড়া পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় তখন তারাও সিলেটের শাহজালাল উপশহরে থাকা ভারতীয় সহকারি হাইকমিশন কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনলাইনে দু বার আবেদন করেন । তবে সেখানের কার্যালয় থেকে আজ অবধি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বিষয়টি। আবেদন করার পর তাদের মোবাইল নম্বর এবং ফর্মে দেওয়া ইমেইল যোগে বার্তা পাঠানো হবে বলে জানানো হলেও আজ পর্যন্ত সেই বার্তার অপেক্ষায় রয়েছেন করিমগঞ্জের চন্দনা বর্ধনের পরিবার। কবে নাগাদ তাঁদের আবেদন যে ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনের কাছে বৈধ বলে বিবেচিত হবে বা ট্র্যাভেল পারমিট ইস্যুর মধ্যে দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা হবে, সে বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ সিলেটে নিযুক্ত থাকা সহকারি হাইকমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তির বিরুদ্ধে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ফোন যোগে সহকারি হাইকমিশনারের সঙ্গে ঘনঘন যোগাযোগ করা সত্ত্বেও বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার উপর।

জানা গেছে, সহকারি হাইকমিশনার এল কৃষ্ণমূর্তি চাকরি জীবন থেকে অবসর নিচ্ছেন এই মাসের শেষের দিকে। কিন্তু কর্মজীবনের শেষ লগ্নে এহেন মানসিকতা, দেশের বিপর্যয়ের সময় নিজের দেশের নাগরিকদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেওয়ার কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন সেখানকার স্থানীয় জনগণ। বিগত সপ্তাহে পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া হরিনগর থেকে বাংলাদেশ যশোরের পূরবী মহালদার নামের মহিলার উদ্ধার হওয়া এবং পাঁচদিনের মধ্যে নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে দেখে তারা সামাজিক মাধ্যম মারফত যোগাযোগ করেন করিমগঞ্জের সাংবাদিক সুজন দেব রায়ের। বিস্তারিত তোলে ধরেন রবিন হুড আর্মির অন্যতম সদস্য সুজন দেব রায়ের কাছে। করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং সাংসদ, বিধায়কের নজরে আনার জন্য অনুরোধ রাখেন চন্দনা বর্ধনের জামাতা অনুপ দেব। সেই সঙ্গে বন্দে ভারত মিশনের অধীনে তাদেরকে নিজের দেশে ফিরিয়ে আনবার জন্য করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের প্রতি কাতর আবেদন রাখেন তারা।

Comments are closed.