
কাছাড়ের চার দলকর্মীকে বরখাস্তের নোটিশ বিজেপির রাজ্য কমিটির; "দলের বিরুদ্ধে কথা বলিনি," বললেন তীর্থঙ্কররা
সম্প্রতি কাছাড় জেলা বিজেপির কয়েকজন সদস্য দলের বিভিন্ন কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষত বরাক উপত্যকার যুবকদের সরকারি চাকুরি থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং জেলা সভাপতি কৌশিক রাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সোচ্চার হয়েছিলেন তীর্থংকর রায়, অনাদি ভট্টাচার্য, বাপ্পা সেন, সৌমিত্র নাথ সহ কয়েকজন। তারা সরাসরি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। এবার বিজেপির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে চারজনকে দলের সদস্য পদ থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে এর আগে তাদের সাত দিনের সময় দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে। রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন।
২০ সেপ্টেম্বর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। নোটিসের ব্যাপারে তীর্থঙ্কর দেবরায় বলেন, “আমরা দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিনি, যেটুকু ন্যায্য মনে হয়েছে সেটাই বলেছি। প্রথম থেকে দলের হয়ে কাজ করেছি এখনও করে যাচ্ছি। তবে দলের নাম করে কিছু ব্যক্তি অন্যায়ভাবে টাকা রোজগার করছে, আবার দলের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে, এটা বলেছি। আমরা অনেক আশা নিয়ে বিজেপির হয়ে কাজ করি, অথচ একের পর এক সরকারী চাকুরীতে বরাক উপত্যকার যুবকরা বঞ্চিত হন। সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতে আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলবেন, যখন আমরা দলের হয়ে কথা বলতে যাব। ‘কেন বরাকের যুবসমাজ সরকারি চাকুরি থেকে বঞ্চিত হবে?’ এই প্রশ্ন করা কোনোভাবেই দল বিরোধী কার্যকলাপ নয়। বিজেপির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে, আমাদের বলা হয়েছে আমরা যেন তাদের কাছে জানাই কেন আমাদের বরখাস্ত করা হবে না। এর উত্তরে আমরা বলব, “দলের কোনও অনুশাসন আমরা ভঙ্গ করিনি। কিছু অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, যেটা বলার প্রয়োজন ছিল। সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার আগে আমরা বারবার দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের কাছে এব্যাপারে বলার চেষ্টা করেছি। কৌশিক রাই কাছাড়ের জেলা সভাপতি, তার কাছেও আমরা অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনতেই চান নি। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদের প্রকাশ্যে কথাগুলো বলতে হয়েছে। আমরা আশা করছি রাজ্য কমিটির বরিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের কথাগুলো বুঝবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে তীর্থংকর দেবরায় সহ দলের কয়েকজন নিজেদের হতাশা এবং ক্ষোভের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সোনাই এলাকার সৌমিত্র নাথ, শিলচরের অনাদি ভট্টাচার্য, লক্ষীপুরের বাপ্পা সেন, লক্ষী বাবু সিনহা, রঞ্জিত সিংহ, আনোয়ার হোসেন, জীবন অধিকারী , সুমন সিনহা, রতন ধর, রঞ্জিত সরকার ছাড়া ও ভারতীয় জনতা পার্টির কাছাড় জেলা কমিটির দীর্ঘদিনের শতাধিক সহকর্মীরা একই সুরে অভিযোগ জানান। প্রত্যেকেই বিজেপির নানা সময়ে উত্থান-পতনের সাক্ষী। শিলচরে সাংবাদ মাধ্যমের সামনে তারা অভিযোগের সুরে বলেন, “এত বছর পর আমাদের দল ক্ষমতায় আসার পরেও আমর দলে ব্রাত্য। একদিকে শীর্ষ নেতার অট্টালিকা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মাত্র সাত মাসে লক্ষ্মীপুরেও গড়ে উঠছে তিন তলার বিশাল অট্টালিকা।অন্যদিকে বর্তমান বৃষ্টির মরশুমে অনেক কার্যকর্তার ঘরের চালের ফাঁক দিয়ে পড়ছে জল। প্রধানমন্ত্রীর এতসব প্রকল্প থাকলেও সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা দলের সদস্যদের ভাগ্যেও জুটছে না ছিটেফোটাও। যেখানে বরাকে দিনের পর দিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আবার তাদের বঞ্চিত করে নিযুক্তি পাচ্ছে বহির্বরাকের যুবকরা। এই অবস্থায় কি আমরা পেটে গামছা বেঁধে সংগঠনের কাজ করব?”
তাদের অভিযোগ, ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ আদর্শ এখন জেলা বিজেপির ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে থাকতে হলে যে কোনও ব্যক্তির তিন বছরের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমান জেলার শীর্ষকর্তা সেই নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। এর একটি উদাহরণ, গতবছর দলের সদস্য পদ নিয়েই যুব মোর্চার জেলা সভাপতি হয়েছেন অমিতেশ চক্রবর্তী। অথচ অনেকেই দশকের পর দশক কাজ করেও এ ধরনের পদে নিযুক্তি পান না। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঞ্চনার মুখ খোলাকে দল বিরোধী আচরণ বলা চলে না।
অতীতের ইতিহাস টেনে তারা বলেন, “একসময় বিধানসভায় বিরোধী দলে থেকে তৎকালীন শিলচরের বিধায়ক বিমলাংশু রায় দলের যুব কার্যকর্তাদের জন্য অনেক কিছু করেছিলেন। আর এখন শাসক হিসেবে আমাদের দল থাকা সত্ত্বেও আমরা বঞ্চিত। দলীয় কার্যকর্তাদের অন্ধকারে রেখে একশ্রেণীর পুঁজিপতিরা লাগাতার টেন্ডার আদায় করে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলা আমাদের অন্যায় হয়নি।”
রাজ্য কমিটির তরফে জারি করা বরখাস্তের নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন সাংসদ রাজদীপ রায়। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, তিনি দিল্লীতে রয়েছেন, সেখানে বিশেষ বৈঠক থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। দলের জেলা কমিটির পক্ষ থেকেও এব্যাপারে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
Comments are closed.