বাঙালি নির্যাতন সমর্থন করে না সরকার, কমলাক্ষকে বললেন সাঙমা; মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন বিধায়কের
মেঘালয়ে একের পর এক বাঙালি নির্যাতন, সম্প্রতি এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় এবং শেষমেষ রামকৃষ্ণ মিশনের মত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া। এসবের বিরুদ্ধে বরাক উপত্যকার বাঙালিরা বরাবরই সরব। এবার মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কোনরাড সাঙমার সঙ্গে দেখা করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। সাঙমা তাকে বলেন,বাঙালিদের বিরুদ্ধে হওয়া বিদ্বেষমূলক কোনও ঘটনায় সরকারের সায় নেই। তারা এসব বন্ধ করতে তৎপর হবেন।
পার্শ্ববর্তী রাজ্যে লাগাতার বাঙালিদের উপর খাসি ছাত্র সংগঠনের অত্যাচার চললেও অসমের সরকারপক্ষ এনিয়ে এখনও খুব একটা সরব হয়নি। কেএসইউ এতদিন ব্যক্তি বিশেষকে আক্রমণ করলেও সম্প্রতি তারা রামকৃষ্ণ মিশনের গেটে তালা লাগিয়ে দেয়, এতে বরাক উপত্যকার বাঙালিদের মনে সবথেকে বেশি আঘাত লাগে। অনেকেই প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেছেন। এবার উপত্যকার এক বিধায়ক সরাসরি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, অবশ্যই এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কোনরাড সাঙমা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, খাসি ছাত্রসংগঠন হোক বা অন্য কোনও সামাজিক সংগঠন, যারাই মেঘালয়ে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক মনোভাব নিচ্ছে, তাদের পাশে নেই সরকার। তিনি বলেন, ‘মেঘালয় সরকার এইসবের সমর্থন করে না, যারা স্থানীয় ভাষা-সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে রাজ্যে বসবাসকারী বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা তাদের কড়া সমালোচনা করছি। আগামীতে যাতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে সরকারের নজর থাকবে।’
দুই রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ রেখে শান্তি সমন্বয় কিভাবে বজায় রাখা যায় এব্যাপারে করিমগঞ্জের বিধায়কের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয় মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর।
এরপর শিলং রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। সেখানে উপস্থিত মহারাজদের সঙ্গে নানান বিষয়ে আলোচনা হয়। নানান বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়না মিশনের মহারাজদের। তারা সেগুলো বিধায়কের কাছে বলেন এবং বিধায়ক আশ্বাস দেন যে তিনি সেগুলো নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী কোনরাড সাঙমার সঙ্গে কথা বলবেন।
শিলং থেকে ফোনে বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, ‘দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেঘালয়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে একটি ছাত্র সংগঠন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তারা মেঘালয়ে বসবাসকারী প্রত্যেক বাঙালিকে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়েছে, রামকৃষ্ণ মিশনের মত সেবা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে, এতে কারও লাভ হচ্ছে না। একটি সংগঠন বারবার উস্কানি মূলক কাজ করে যাচ্ছে এবং সেই রাজ্যের সরকার প্রায় নীরব ভূমিকা পালন করছে, এটা কি করে সম্ভব! আসল সত্য জানতেই আমরা মুখ্যমন্ত্রী কোনরাড সাঙমার সঙ্গে দেখা করি। তিনি জানিয়েছেন এতে সরকারের সায় নেই। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা সংগঠনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেবেন। এছাড়া প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে মেঘালয়ের সরকার। আমরা তার কথায় আশ্বস্ত হয়েছি, তবে আগামীতে যদি এমনটা না হয় আমরা আবার সরব হব।’
রামকৃষ্ণ মিশনে মহারাজদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটি সেবা প্রতিষ্ঠান যা সারাবিশ্বে নিঃস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবহার অত্যন্ত দুঃখজনক। মহারাজারা এছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামীতে সেই কথাগুলো সরাসরি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এখন আমার।’
Comments are closed.