Also read in

সরকারের 'ভোটব্যাংক' ছেঁটে ফেলাতেই শিলচর ডি এস একে এ ও এর চিঠি ? সংস্থার বিশেষ সাধারণ সভা নিয়ে সরগরম ক্রীড়ামহল

 

শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দ্ধি বার্ষিক সাধারণ সভার দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। ‌ তবে এই দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা নিয়েই ডি এস এ কে এক কড়া চিঠি দিয়ে বসে আছে অসম অলম্পিক সংস্থা (এ ও এ)। চিঠিতে তারা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে সাত দিনের মধ্যে জবাব না দিলে ডি এস এর অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হবে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভার দিনক্ষণই যখন ঠিক হয়নি তাহলে আবার এমন চিঠি কেন দিল এ ও এ?

আসলে এ ও এর এমন পদক্ষেপ এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য রহস্য। সেটা হল ভোটের রহস্য। ‌ সম্প্রতি বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং নেতৃত্বাধীন ডি এস এর বর্তমান কমিটি নিষ্ক্রিয় থাকা কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ বাতিল করেছে। জিবি বৈঠকে এটা অনুমোদনও পেয়েছে। সংস্থার সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, কোনও ক্লাব বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি দুটি টার্ম নিষ্ক্রিয় থাকে, অর্থাৎ সংস্থার কোন ধরনের কার্যকলাপে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই ক্লাব বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। সংস্থা নিজেদের সংবিধান মেনেই কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করেছে। এই কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ভোট হচ্ছে ৩০। এ ও এর সেই চিঠির রহস্য এখানেই লুকিয়ে রয়েছে।

ই ক্যাটাগরির যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিল সেগুলির মধ্যে ছিল কাছাড় কলেজ, গুরুচরণ কলেজ এবং অধরচাঁদ এইচএস স্কুল এর মত মর্যাদাসম্পন্ন কলেজ ও স্কুল। স্বাভাবিকভাবেই এই সব স্কুল-কলেজের প্রতিনিধিদের মাঠের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ‌ অথচ এরাই আবার শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় এসে ভোট দিয়ে যান। এখানে লুকিয়ে রয়েছে আরও একটা রহস্য। এইসব স্কুল-কলেজের প্রতিনিধিরা সরকারের পছন্দের লোককেই ভোট দিয়ে থাকেন। সোজা কথায়, ডি এস এ তে যে সব স্কুল-কলেজ সদস্য হিসেবে রয়েছে তাদের উপর সরকার প্রভাব খাটিয়ে থাকে। সে যেই সরকার হোক না কেন। শিলচরের ক্রীড়া জগতে এটাই ট্রেন্ড। স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদ যা নির্দেশ দিবেন, স্কুল-কলেজের প্রতিনিধিরা সেভাবেই কাজ করবেন।  

দু’বছর আগেও শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন স্কুল-কলেজের প্রতিনিধিরা। সূত্র অনুসারে, তখনকার বিধায়ক দিলীপ পাল এর নির্দেশে স্কুল-কলেজের ভোট গুলি গিয়েছিল বিজেন্দ্রর পক্ষে। যা শেষ পর্যন্ত নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এবার কিন্তু চিত্রটা ভিন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই নিষ্ক্রিয় থাকার ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির সদস্যপদ বাতিল করায় ৩০টি ভোট কমে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে সরকার পক্ষের ৩০টি ভোট কমে গেছে।

শিলচরের এ ক্যাটাগরির ক্লাব গুলিতে সরকারের প্রভাব তেমন নেই। কাজেই প্রভাব বিস্তারের জন্য অন্য ক্যাটাগরির ক্লাব, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকেই তাকিয়ে থাকে সরকার পক্ষ। ‌ তাই ৩০টি ভোট কমে যাওয়ায় সরকারপক্ষের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। আর এজন্যই এ ও এর কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, অসম অলিম্পিকের কাছে যাদের স্বাক্ষর জমা পড়েছে তাদের অধিকাংশই সরকার পক্ষের। বরাক বুলেটিন এর কাছে সেইসব অভিযোগকারীদের স্বাক্ষর করা চিঠি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি সরকারের নির্দেশেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কে চিঠি দিয়েছে এ ও এ?

খেলার মাঠের সবসময়ই একটা প্রবাদ শোনা যায়। তা হচ্ছে খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতিকে এক করতে নেই। তবে বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। বরং শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এর ঠিক উল্টো টাই হয়ে থাকে। ‌২০১৯ সালের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভাই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এবারও কিন্তু পরিস্থিতি সেই দিকেই এগোচ্ছে।

এবারও লড়াইটা বিজেপি বনাম বিজেপি। সূত্র মতে, বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং কে আটকাতে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপিরই একটা লবি। বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী তো ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে ডি এস এর বর্তমান কমিটির একাধিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। কিসের ভিত্তিতে কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ সংস্থা বাতিল করে দেওয়া হল, তা নিয়েও তিনি ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, বিজেন্দ্র কে আটকাতে বিজেপির সেই লবি কে সমর্থন করছে কংগ্রেস। সংস্থার ভেতরে থেকেই নানান খবর মিডিয়ার একটা অংশকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুই হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে।

সম্প্রতি উধারবন্দ ইউ এস এর দু পক্ষ কে ডেকে সমস্ত বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডি এস এ সচিব বিজেন্দ্র। বিষয়টা মিডিয়াতে গোপন রেখেছিলেন সংস্থার সচিব। ‌ কিন্তু দেখা যায় মিডিয়ার একটি অংশের কাছে সেই খবর পৌঁছে যায়। বলা বাহুল্য, খবরটি পৌঁছে দেওয়া হয়।

এবার যখন রাত পোহালেই সংস্থার বিশেষ সাধারণ সভা তখনো একটা লবি বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। তাদের লক্ষ্য একটাই, যে করেই হোক সদস্যপদ বাতিল হওয়া ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি কে সংস্থায় ফিরিয়ে আনা। সেইসঙ্গে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রভাব বিস্তার করা এবং টিম বিজেন্দ্র কে যেভাবেই হোক আটকে দেওয়া।

Comments are closed.