রাজদীপের জন্যই কণাদ টিকিট পাননি, হিমন্ত-সোনোয়াল কথা দিয়েও রাখেননি, এমনটা না করলেও পারতেন: কবীন্দ্র
শুক্রবার রাতে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই দলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন টিকিট পেয়েছেন দ্বীপায়ন চক্রবর্তী, কৌশিক রাই, গৌতম রায়ের মতো নেতারা। অন্যদিকে বাদ পড়েছেন তিন বিধায়ক সহ দলের বহু পুরনো প্রত্যাশীরাও, এর মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে কণাদ পুরকায়স্থ। দলের ভেতর কানাঘুষা চলছে, হয়তো অনেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে খেলবেন। তবে সেই রাস্তায় না গিয়ে উল্টো দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন কণাদ পুরকায়স্থের বাবা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। তিনি সরাসরি সাংসদ রাজদীপ রায়ের ওপর দায় চাপিয়েছেন।
রবিবার বিকেলে নিজের বাড়িতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা এবং মনের ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “২০১৯ সালে দলের সমীক্ষায় চার নম্বরে ছিলেন রাজদীপ রায়, তবু তাকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। এবার কোন সমীক্ষায় কণাদ পুরকায়স্থের নাম কাটা হয়েছে জানিনা, তবে আমার বিশ্বাস, এর জন্য দায়ী রাজদীপ। গতবছর আমার বাড়িতে এসেছিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং রঞ্জিত দাস, তখন থেকে লাগাতার আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন কণাদ পুরকায়স্থকে এবছর নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে। আমি নিজে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং রাজদীপের সঙ্গে এব্যাপারে বহুবার কথা বলেছি। এমনকি যেদিন টিকিট ঘোষণা হয়েছে, এর আগেও তারা আমাকে বলেছেন কণাদ টিকিট পাচ্ছে। এরপরে জানলাম পুরোটাই মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। যদি টিকিট না দেওয়ারই হতো, তাহলে আমার সঙ্গে তারা এমনটা কেন করলেন, এটাই বুঝতে পারছি না।”
অতীতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “১৯৮০ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ির নির্দেশে প্রথমে গুয়াহাটি গেছিলাম দলের ভিত গড়ে তুলতে। সেখানে নেতারা বিজেপিতে যোগ দিতে চাননি। শিলচরে এসে অন্যান্য নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম বিমলাংশু রায়ের সঙ্গেও। তিনি তখন বিজেপিতে যোগ দিতে চাননি। পরবর্তীতে যদিও তিনি দলের সদস্য হয়েছেন কিন্তু ১৯৯১ সালে অনেক অনুরোধ করার পরেও তাকে শিলচরের প্রার্থী করতে পারিনি। তিনি অসুস্থ হয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন, আমি বলেছিলাম শুধু মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করে দিন। পুরো নির্বাচনের প্রচার আমি করব এবং আপনি জয়ী হবেন। তিনি রাজি হননি। সেই বছর আমাদের দল বরাক উপত্যকায় বিধানসভায় ৯ টি আসন এবং লোকসভার দুটি আসনে জয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তিনি শিলচরের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং তৎকালীন বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ সেনকে সরিয়ে তাকে প্রার্থী করা হয়। সমরেন্দ্র নাথ সেন আমার কথা রেখেছিলেন। কিন্তু যাবার আগে আমাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, একদিন এই সিদ্ধান্তের জন্য আমাকে ভুগতে হবে। মনে হচ্ছে আজ তার অভিশাপ ফলছে, কারণ বিমলাংশু রায়ের ছেলে রাজদীপ রায় আজ দায়িত্ব নিয়ে আমার ছেলের টিকিট পেতে বাধা দিয়েছেন।”
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং সর্বানন্দ সোনোয়ালের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “টানা এক বছর ধরে তারা আমাকে বিভিন্ন সময় আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তাদের কাছে হাতজোড় করেছি, আমার ছেলেকে প্রার্থী করার জন্য। তবু আমাকে বঞ্চিত করলেন। তারা আমার সঙ্গে প্রায় বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, কথা দিয়ে কথা রাখলেন না। যদি টিকেট না দেওয়ারই ছিল তাহলে কেন আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। জীবনের এই সময়ে দাঁড়িয়ে দল থেকে এমন ব্যবহার আমি কি আদৌ পাওয়ার যোগ্য ছিলাম?”
শিলচরে কণাদ পুরকায়স্থ প্রার্থিত্ব চেয়ে ছিলেন, কিন্তু টিকিট পেয়েছেন দ্বীপায়ন চক্রবর্তী। তবে জনগণের সমীক্ষায় দুজন থেকেই এগিয়ে ছিলেন দিলীপ কুমার পাল, তবু তিনি টিকিট পেলেননা। এদিকে কংগ্রেস দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তমাল কান্তি বণিক, অনেকেই মনে করেন তাঁর জনপ্রিয়তা এবার বিজেপির প্রার্থীর জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। এই প্রসঙ্গে কবীন্দ্র পুরকায়স্থকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “যদি কণাদ টিকিট পেত তাহলে তমাল বণিক নির্বাচনে লড়তই না। দিলীপ কুমার পাল কি কারণে টিকিট পাননি, সেটা অন্য বিষয়, আমি এব্যাপারে কথা বলতে চাইছি না। তবে দীপায়ন চক্রবর্তীকে নিয়ে শিলচরে জয়ী হওয়া কঠিন হবে।”
এই বিষয়ে রাজদীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “কবীন্দ্র জেঠু আমার কাছে পিতৃতুল্য, আমি তাকে প্রণাম জানাই। তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
Comments are closed.