মুখ্যমন্ত্রীর চাপে জেপিসির বৈঠক বাতিল হয়েছে: "বিশ্বাসঘাতকতা" র্যালির শেষে জানালেন সুস্মিতা।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে শিলচরে এসে প্রকাশ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ব্যাপারে তার অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানালেন শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব। গত মে মাসে অসমে এসেছিল জেপিসি, এরপর থেকেই বিতর্কের ঝড় চলছে সমস্ত রাজ্যজুড়ে। অসমের পর পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল জেপিসির, তা হয়নি। এমনকি দিল্লিতে বৈঠক ডেকেও বাতিল করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে গতকাল সুস্মিতা দেব অভিযোগ করেন যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের চাপেই বাতিল হয়েছিল জেপিসির বৈঠক। এই কথাটা যদি মিথ্যা হয় তবে আগামী ৮ জুন এসে নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী তার মতামত প্রকাশ করুন। সুস্মিতা দেব বলেন, “নাগরিকত্ব বিল নিয়ে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এই বিল নিয়ে রাজ্যের দুই উপত্যকার মানুষকে বিভাজিত করা হচ্ছে, তবে এই ব্যাপারে সরকার কোনো স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না। আমরা জানতে পেরেছি, মুখ্যমন্ত্রী এক বেসরকারি হাসপাতাল এবং একটি বাংলা দৈনিকের উদ্বোধন করতে আসছেন আগামী ৮ জুন। তিনি তা করতেই পারেন, তবে রাজ্যের মানুষ এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল নিয়ে খুবই দুর্দিন কাটাচ্ছেন। এমন সময় বরাকের মাটিতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে আহ্বান জানাই আমি।”
সোমবার সারা দেশের সঙ্গে শিলচরও কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করে । কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সারাদেশে এই বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করছে কংগ্রেস। মূল্যবৃদ্ধি, দেশের আইন ব্যবস্থা, সীমান্ত সুরক্ষা, মহিলাদের সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ এবং এর ফল আগামী নির্বাচনে তারা ভোগ করবে এমনটাই দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
কংগ্রেস সাংসদসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা এতে অংশগ্রহণ করেন। ইন্দিরা ভবন থেকে অফিস পাড়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। অফিসপাড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে জেলা শাসকের কাছে স্মারকপত্র প্রদান করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন জেলা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ মজুমদার, জেলা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী,বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা, জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ দেব, সিরাজুল আলম লস্কর, সূর্যকান্ত সরকার, মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী সঞ্চিতা আচার্য, যুব কংগ্রেস সভাপতি পাপন দেব, রাহুল আলম লস্কর প্রমুখ।
সুস্মিতা র্যালির শেষে সম্মেলনে বলেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের চার বছরের কাজকর্মের হিসেব-নিকেশ দেশের মানুষ আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোটে সঠিকভাবে করবেন। এদিন শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পালকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন শ্রীমতি দেব। সম্প্রতি বিধায়ক পাল দাবি করেছিলেন যে শিলচরে লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন বিজেপি প্রার্থী। এই বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতার বক্তব্য, আসন্ন লোকসভা ভোটে শিলচর থেকে কে জয়ী হবেন তা নির্ধারণ করবেন জনগণ। বিধায়ক পালের ভবিষ্যৎবাণীকে কটাক্ষ করে সুস্মিতা বলেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে শ্রী পালের ভোটই বিজেপি পাবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নিরব মোদী, কাগজ কল সহ একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রের মোদি সরকারের সমালোচনা করেন সংসদ সুস্মিতা; তিনি সমালোচনা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ও । ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা আংশিকভাবে ও বাস্তবায়িত হয়নি। নিজেকে দেশের চৌকিদার বলে দাবি করেছিলেন তিনি, কিন্তু দেখা যায় ওই চৌকিদার এর কার্যকালেই ব্যাংক জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেলেন নিরব মোদী । প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি সেবক, বছরের দুই কোটি চাকরি পাবেন বেকাররা,কালো ধনের ১৫ লক্ষ টাকা করে পাবেন প্রত্যেক নাগরিক, বাস্তবে ২ কোটি তো দূরে থাক বছরে ১ লক্ষ চাকুরিও হয়নি। তেমনি ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে কানা কড়িও পান নি সাধারণ মানুষ। উপরন্তু নানা অজুহাতে ব্যাংক থেকে গরীবের টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এরাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প থাকবেনা আর এখন রাজ্যে নতুন করে ক্যাম্প নির্মাণে জমির সন্ধান চলছে। এমনিভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করে সুস্মিতা বলেন মূলত এই ইস্যুতেই রাজ্যজুড়ে “বিশ্বাসঘাতকতা” কর্মসূচি পালন করছে কংগ্রেস।
Comments are closed.