এনআরসি থেকে ৫টি নথি বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার, বরাকের প্রতিনিধিদের জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এনআরসির মূল প্রক্রিয়ায় ১৫টি নথির উপর ভিত্তি করে অসমে প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম খসড়ায় উঠেছে। এবার নতুন করে ৫টি নথি বাদ দেওয়ার যে প্রস্তাব রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা দিয়েছেন সেটা মেনে নেবে না কেন্দ্র সরকার। সরকারের তরফে এব্যাপারে শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দেবে কেন্দ্র সরকার এবং অসম সরকার, এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। রবিবার দিল্লিতে তার বাসভবনে বরাক উপত্যকার বিজেপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি কথাটি জানান।
এনআরসির বিভিন্ন বিষয় এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইত্যাদি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন বরাক উপত্যকা বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। রবিবার দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁরা এনআরসি প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত নথি বাতিলের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরকারকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। পাশাপাশি নাগরিকত্ব বিলটি সত্বর অসমে কার্যকরী করে বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত মানুষদের সুরক্ষাকে মজবুত করারও দাবি জানান।
বরাক উপত্যকা বিজেপির প্রতিনিধি দলটিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যের বরিষ্ঠতম নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, দলের রাজ্য কমিটির সদস্য রাজদীপ রায়, করিমগঞ্জ বিজেপির নেত্রী শিপ্রা গুণ, প্রাক্তন বিধায়ক মিশন রঞ্জন দাস, দলের আরেক বরিষ্ঠ নেতা নিত্যভূষন দে, শৈকত দাস চৌধুরী, কৃষ্ণ দাস, নীহাররঞ্জন দাস সহ অন্যান্যরা ছিলেন।
কবীন্দ্র পুরকায়স্থ দিল্লি থেকে ফোনে জানান, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিষয়ে বরাক উপত্যকা সহ সারা রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। আমরা বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিভিন্ন দাবি রেখেছি। এনআরসির মূল প্রক্রিয়ায় যে পনেরোটি নথি গ্রাহ্য ছিল, তার পাঁচটি বাতিল করার যে প্রস্তাব রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেছেন, তার তীব্র বিরোধিতা করি আমরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আমাদের সুরেই বলেন, কেন্দ্র সরকার প্রতীক হাজেলার এই অন্যায় প্রস্তাব কিছুতেই মেনে নেবে না। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার এব্যাপারে শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেবে। পাশাপাশি প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ারও আবেদন রেখেছি আমরা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আমরা বলেছি, দেশের কয়েকটি রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে সামনে রেখে বিভিন্ন মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ এনআরসি এবং ডি’ভোটার ইত্যাদি বিষয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে থাকা অসম রাজ্য, যেখানে বিলটি কার্যকরী হওয়া সব থেকে প্রয়োজনীয়, সেখানেই এটি কার্যকরী হচ্ছেনা।
দেশভাগের পর ইসলামিক দেশ বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁদের এদেশে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই বিলটি প্রস্তাব করা হয়েছে। বিল অনুযায়ী হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী যে কোনো মানুষ যারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান, এসব দেশে সংখ্যালঘু, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের পাসপোর্ট আইন এবং বিদেশি শনাক্তকরণ আইনের অধীনে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে গণ্য হবেন না।
রাজনাথ সিং বিলটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আস্বাস দিয়েছেন।” গুয়াহাটিতে একাংশ সংবাদ মাধ্যম বরাকের প্রতিনিধিদের দিল্লি যাওয়াকে ‘বিদেশিদের পাশে দাঁড়ানোর’ সঙ্গে তুলনা করেছে। এব্যাপারে কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বলেন, বিলটি কেন্দ্র সরকার এনেছে, তাই বরাকের প্রতিনিধিদের এব্যাপারে দোষারোপ করে লাভ নেই।
Comments are closed.