
শিলচরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় আটক দুই, কড়া পুলিশ এবং সেনা নিরাপত্তার বলয়ে কালীবাড়িচর-মধুরবন্দ এলাকা
কালীবাড়ি চরে রবিবার রাতের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে কাছাড় পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে সংযোগ থাকার সন্দেহে সোমবার দুপুরে কালীবাড়ি চর এলাকা থেকে আটক করা হয় রবি দাস এবং রাকু চন্দ্র দাস নামের দুই ব্যক্তিকে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকেশ রেড্ডি এব্যাপারে বলেন, রবিবার রাতের বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সন্দেহ রয়েছে ওই অঞ্চলের কিছু মানুষের উপর। আজ দুজনকে আটক করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও কিছু মানুষকে আটক করা হতে পারে। পাশাপাশি কালীবাড়ি চর বা সংলগ্ন এলাকায় যাতে কেউ কোনও অশান্তির পরিবেশ তৈরী করতে না পারে তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর জওয়ানরা পাহারায় থাকবেন।
উল্লেখ্য কালীবাড়ি চর এলাকায় রবিবার গভীর রাতে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ফলে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সহ আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফকে মাঠে নামতে হয়। ঘটনায় প্রায় দশজন আহত হন।
স্থানীয় মানুষের মতে, এদিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ কালীবাড়ি চরের গাতা কলোনী এবং মধুরবন্দের নদী বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় থাকা ঘরবাড়ি গুলোতে অতর্কিতে পাথর ছুড়তে থাকে একদল অপরিচিত লোক। প্রথমে বুঝতে না পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন যে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। তাঁরাও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা হামলা করেন।
তাঁরা জানান যে বেশ কয়েকদিন ধরেই রাতের বেলা তাদের ঘরে এবং আশেপাশের এলাকায় পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটছিল। পুলিশের কাছে এসব ব্যাপারে জানালেও কোনও লাভ হয়নি আর তাই এতো বড় হামলা হয়েছে আজ।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের ফলে সারা শহরে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয় এদিন।
সোমবার দুপুরে জেলা শাসক ডাঃ এস লক্ষ্মণণের তত্ত্বাবধানে শিলচর সদর থানায় এক জরুরী বৈঠক আয়োজন করা হয়। পুলিশ সুপার রাকেশ রৌশন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং এলাকা বাসীদের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। জেলা শাসক এদিন এলাকার মানুষকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে সাহায্য করার আহবান জানান। তিনি বলেন, এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে রয়েছেন, এলাকায় সাম্প্রদায়িকতার নামে কেউ অশান্তি ছড়াতে চাইলে স্থানীয় মানুষকেই আগে রুখে দাড়ানো উচিৎ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এব্যাপারে সমস্ত রকমের সাহায্য দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পুলিশ সুপার রাকেশ রৌশন কড়া ভাষায় বলেন, মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুতেই আপোষ করবে না কাছাড় পুলিশ। রবিবার রাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর জওয়ানরা যে পরিশ্রম করেছেন তা প্রশংসার যোগ্য এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাঁদের আপাতত ওই এলাকায় রাখা হবে। ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে এবং দোষীদের কাউকে ছাড়া হবেনা। সভায় বিজেপির তরফে দ্বীপায়ন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের তরফে সুর্যকান্ত সরকার, পৌর সদস্য রাজেশ কুমার দাস, ঝলক চক্রবর্তী এবং অন্যান্যরা অংশ নেন। তাঁরা এলাকার মানুষদের নিয়ে শান্তি-দল বানানো, কালীবাড়ি চরের গাতা কলোনী এবং মধুরবন্দের নদী বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ইত্যাদির পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে জেলা প্রশাসনকে সম্পুর্ণ সাহায্য করবেন বলেও আশ্বাস দেন।
সোমবার দিনের বেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরী হতে দেখা যায়। ভাঙ্গার পার এলাকা থেকে ব্যক্তিগত কাজে শিলচরে আসা এক প্রৌড়কে একদল যুবক শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে। তিনি সদর থানায় এব্যাপারে একটি এফআইআরও দেন এদিন।
ঘটনায় আহতরা শিলচর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পাশাপাশি অভিযোগ আসে যে জানিগঞ্জ এলাকায় এদিন একদল যুবক স্থানীয় দোকানগুলো বন্ধ রাখার জন্য চাপ দেয় এবং তাঁদের শাসানোর কাজও করে। পরে পুলিশের তৎপরতায় এসব সামাল দেওয়া হয়।
Comments are closed.