Also read in

কল্পতরু উৎসব: শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনেও হাজারো ভক্তসমাগম

হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে আজ শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনেও পালিত হলো কল্পতরু উৎসব। সকাল থেকেই এই বিশেষ দিনে ভক্তবৃন্দ ঠাকুরের চরণে ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উপস্থিত হন।

তবে, অপরাহ্ন তিন ঘটিকায় হাজার হাজার ভক্ত সমাগমে জনপ্লাবনের রূপ নেয় রামকৃষ্ণ মিশন। মূল মন্দির ছাড়াও মন্দির চত্বর এবং আশেপাশে সর্বত্র হাজার হাজার ভক্ত বসে সেই বিশেষ মুহূর্তে ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মিশনের মহারাজ স্বামী গণধীশানন্দজি মহারাজ ভক্তদেরকে এই বিশেষ দিনের তাৎপর্য সম্বন্ধে বলেন। সমবেত জপ-তপ, সঙ্গীতের মাধ্যমে ভক্তবৃন্দ ঠাকুরের কাছে ভক্তি নিবেদন করেন।

 

 

১৮৮৬ সালে আজকের দিনেই কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ ৷ অর্থাৎ ঠাকুরের কাছে সেদিন যে যা চেয়েছিল ঠাকুর অকৃপণ হাতে তা সবাইকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ১লা জানুয়ারি দিনটিকে কল্পতরু উৎসব হিসেবে পালন করা হয় ।

শ্রীমৎ স্বামী শিবানন্দ মহারাজজী এই বিশেষ দিনটি সমন্ধে বলেছিলেন :

শ্রীশ্রীঠাকুর কেবলমাত্র একটি দিনে কল্পতরু হয়েছিলেন—তা কেন ? তিনি তো সদাই কল্পতরু ৷ জীবকে কৃপা করাই তাঁর একমাত্র কাজ ছিল ৷ আমরা তো চোখের সামনে দেখেছি, তিনি নিত্যই কত জীবন, জীবকে কত ভাবে কৃপা করতেন ৷ ১৮৮৬ খ্রীস্টাব্দের ১ জানুয়ারি তিনি একসঙ্গে অনেক ভক্তকে কৃপা করেছিলেন ৷ সে হিসাবে এই দিনের একটা বিশেষত্ব আছে ৷ তিনি যে কৃপাসিন্ধু ছিলেন, তা সেদিনকার ঘটনায় ভক্তরা বিশেষ করে বুঝতে পেরেছিলেন ৷

ঠাকুরের ত্যাগী সন্তানদের মধ্যে কেহই সে সময় তথায় উপস্থিত ছিলেন না ৷ ঠাকুরের সেবার ভার তাঁরাই নিয়েছিলেন ৷ সেবার সঙ্গে চলত সাধন-ভজন ৷

পৃথকভাবে প্রত্যেককে ডেকে ঠাকুর ভজন-সাধন সম্বন্ধে উপদেশ দিতেন এবং কার কেমন ধ্যান ও দর্শনাদি হচ্ছে সে সব খোঁজ নিতেন ৷

রাত্রে স্বামীজী ধুনি জ্বালিয়ে সবাইকে নিয়ে ধ্যান-জপ করতেন—কখনো খুব ভজনকীর্তনও হতো ৷

রাত জাগা হতো বলে দুপুরবেলা খাওয়ার পরে আমরা প্রায় সকলেই খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিতুম ৷ সেদিনও খাওয়া দাওয়ার পরে, নিচের হল ঘরের পাশের ছোট ঘরে আমরা ঘুমুচ্ছিলাম ৷
সেদিনই বিকালবেলা ঠাকুর একটু বাগানে বেড়াবার জন্য প্রথম নিচে নামেন ৷ ছুটির দিন বলে অনেক ভক্তই সে সময় বাগানে উপস্থিত ছিলেন ৷ঠাকুরকে নিচে নামতে দেখে ভক্তরাও আনন্দে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলেন ৷ ধীরে ধীরে ঠাকুর বাগানের ফটকের দিকে যাচ্ছিলেন—এমনসময় গিরিশবাবু ঠাকুরের চরণতলে পতিত হয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে করযোড়ে তাঁকে স্তব করতে লাগলেন ৷ গিরিশবাবুর অদ্ভুত ভক্তিবিশ্বাসের কথা শুনতে শুনতে ঠাকুর দাঁড়িয়ে সমাধিস্থ হয়ে পড়লেন ৷ ভক্তরা তখন ঠাকুরকে ঐ দিব্য ভাবাবেশে দেখে আনন্দে ” জয় রামকৃষ্ণ, জয় রামকৃষ্ণ ” বলে উচ্চধ্বনি করে ঠাকুরকে বারংবার প্রণাম করতে লাগলেন ৷

ক্রমে ঠাকুরের মন অর্ধবাহ্যদশায় নেমে এল ৷ তখন তিনি কৃপাদৃষ্টিতে ভক্তদের দিকে তাকিয়ে বললেন—” কি আর বলব ! তোমাদের চৈতন্য হোক ৷ ” এইকথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ভক্তদের প্রাণে এক অনির্বচনীয় আনন্দের স্রোত বয়ে যেতে লাগল ৷ তাঁরা খুব ” জয় রামকৃষ্ণ, জয় রামকৃষ্ণ ” ধ্বনি করতে লাগলেন ৷

তিনিও ঐ অবস্থায় একে একে প্রায় সকলকেই ‘ চৈতন্য হোক ‘ স্পর্শ করে সকলের চৈতন্য করে দিলেন ৷ তাঁর ঐ দিব্যস্পর্শে ভক্তদের প্রত্যেকের ভেতরেই অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগল ৷ তখন কেউ বা ধ্যানস্থ হয়ে পড়লেন, কেউ আনন্দে নৃত্য করতে লাগলেন, কেউ কাঁদতে লাগলেন ৷ সে এক অভাবনীয় ব্যাপার ! আর ঠাকুর দাঁড়িয়ে আনন্দে সে সব দেখছিলেন ৷
ঐ গোলমালে আমাদের ঘুম ভেঙে গেল ৷ আমরা ছুটে এসে দেখি যে , ভক্তরা সকলে ঠাকুরকে ঘিরে উন্মত্তের ন্যায় ব্যবহার করছেন ; আর তিনি মধুর হাসিমুখে সস্নেহে ভক্তদের দিকে তাকিয়ে আছেন ৷আমরা যখন পৌঁছেছি তখন ঠাকুরের মন সহজাবস্থায় ফিরে এসেছে ; কিন্তু ভক্তরা তখনো সেই আনন্দের নেশায় মশগুল ৷ পরে ভক্তদের জিজ্ঞাসা করে সব খবর জানা গেল ৷ সকলেই বলেছিলেন যে, ঠাকুরের স্পর্শে তাঁদের অপূর্ব আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল এবং সেই ভাবের প্রভাব দীর্ঘকাল স্থায়ী ছিল ৷ তিনি যে স্বয়ং ভগবান ৷সেদিনও কিন্তু ঠাকুর দু-একজনকে স্পর্শ করেননি ৷ বলেছিলেন—” এখন নয়, পরে হবে ৷” তাতেই বেশ বোঝা যায় যে সময় না হলে কিছুই হয় না ৷ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়৷

Comments are closed.