বরম-বাবার মন্দিরে পুজো দিয়ে সোনাইয়ে এআইইউডিএফ প্রার্থীর প্রচারে নামলেন কানহাইয়া কুমার
দিল্লির জেএনইউতে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা বামপন্থী কানহাইয়া কুমার সোনাই কেন্দ্রের এআইইউডিএফ দলের প্রার্থী করিম উদ্দিন লস্কর ওরফে সাজুর প্রচারে শুক্রবার শিলচর এসে পৌঁছান। সোনাই কেন্দ্রে কয়েকটি জনসভায় যোগ দেবেন তিনি এবং বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার করবেন। বিজেপিকে ধর্মীয় দল হিসেবে কটাক্ষ করলেও বামপন্থী এই ছাত্রনেতা শিলচরে এসে প্রচার শুরুর আগেই মন্দিরে পুজো করলেন। শিলকুড়ির বরম-বাবার মন্দিরে মন্ত্র উচ্চারণ করে অঞ্জলি প্রদান, আরতি ইত্যাদি করতে দেখা গেল তাকে। এটা সাধারণত বামপন্থী নেতাদের করতে দেখা যায় না।
তিনি একটি সভায় দাঁড়িয়ে বলেন, “ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এখানে প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকার রয়েছে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার। যারা ধর্মের নামে আপনাদের বিভাজন করতে চাইছে তাদের বিশ্বাস করবেন না। তারা চায় আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যস্ত থাকি এবং সরকারি সম্পত্তিগুলো তারা ধীরে ধীরে আম্বানি-আদানিদের হাতে তুলে দিক। আজ আপনারা এখানে বসে বিচার করবেন কে হিন্দু এবং কে মুসলমান, ওদিকে দেখবেন কাল গুয়াহাটি বিমানবন্দর আদানির নামে চলে গেছে। তারা দেশের যুবকদের রোজগার দিতে পারেন না, অথচ অমিত শাহের ছেলে বিসিসিআইয়ে বড় পদে বসার সুযোগ পান। কি যোগ্যতা ওর, কোন পরীক্ষা পাস করেছিল? তারা করোনার নামে এসএসসি সহ সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো বন্ধ রেখেছেন, অথচ নির্বাচন দিব্যি আয়োজিত হচ্ছে, আইপিএল আয়োজন করা যাচ্ছে। এগুলো ভেবে ভোট দেবেন, কেননা পাঁচ বছরে একবারই সুযোগ আপনাদের হাতে এসেছে। আবার বিজেপিকে ভোট দিলে কাল আরও কিছু বিক্রি করে দিতে পারে ওরা।”
কানহাইয়া কুমার দিল্লিতে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু খুব বেশি ভোট পাননি। তার বরাক উপত্যকায় আসার খবর বেরোনোর পর অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, যে ব্যক্তি নিজে নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি সে আবার এআইইউডিএফের প্রার্থীকে জয়ী করাবে? তবে বরাকেও তার সমর্থকদের আবেগ চোখে পড়ার মতো। একেবারে তরুণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ-মহিলারা তাকে একটিবার দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। বরিষ্ঠ লেখিকা আদিমা মজুমদার তাকে চোখের সামনে দেখে আবেগিক হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “ভাবতেই পারছিনা কানহাইয়া কুমারকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছি। এমন মুহূর্ত দেখার পর জীবনে আর কিছু পাওয়ার বাকি রইল না। একটা আক্ষেপ থেকে গেছে যদি নিজের হাতে কিছু রান্না করে নিয়ে যেতে পারতাম, ওকে খাওয়াতে পারতাম, তাহলে মনে হতো আমি ধন্য হয়ে গেছি।”
তরুণ বামপন্থী নেতাদের মধ্যেও একই ধরনের আবেগ চোখে পড়েছে এদিন। তারা কানহাইয়া কুমারকে চোখের সামনে দেখে অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে পড়েন। ভোটের সংখ্যায় এই আবেগ কতটা কাজ করবে সেটা সময় বলে দেবে তবে বামপন্থী ছাত্র নেতাটিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো ছিল।
সোনাই সমষ্টিতে লড়াই এআইইউডিএফ প্রার্থী করিম উদ্দিন লস্কর সাজু বনাম বিজেপির আমিনুল হক লস্করের মধ্যে। তবে বিজেপির বিদ্রোহী নেতা আশীষ হালদার নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন এবং তাকেও বিশেষজ্ঞরা একেবারে হেয় করছেন না। কংগ্রেসের কোনও স্টার ক্যাম্পেনার এখনো বরাক উপত্যকায় আসেন নি। মহাজোটের হয়ে কানহাইয়া কুমার প্রচারে কতটুকু ঝড় তুলতে পারেন এটা দেখার বিষয়।
Comments are closed.