Also read in

৭ বছরেও অ্যাপ্রোচ হলোনা ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত করাতিগ্রাম-মধুরামুখ সেতুর; উপেক্ষিত ৩০ হাজার জনগণ

শিলচর শহরের একেবারে পাশে থেকেও শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে বৃহত্তর দুধপাতিল এলাকা অনুন্নতই রয়ে গেছে। শহরের মূল কেন্দ্র থেকে বাকি তিন দিকে শহর এগিয়ে চলেছে, অথচ বড়খলা বিধানসভার সমষ্টির অধীনে দুধপাতিল এলাকাটি অনুন্নত গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালে রংপুরের করাতিগ্রাম হয়ে মধুরা নদীর মোহনার কাছাকাছি একটি সেতু বানানোর প্রকল্প চূড়ান্ত করেছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। প্রকল্পের জন্য ৪ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। পরবর্তীতে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়, ৪ কোটি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ হয়। অথচ তার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও কাজে আসেনি প্রকল্পটি। সেতুটি চালু হলে দুধপাতিল সহ অন্তত দশটি রেভিনিউ ভিলেজ শহরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে, এতে লাভবান হবেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।

২০১৬ সালে বিজেপির স্থানীয় প্রার্থীরা সেতুর এপ্রোচ গড়ে তুলবেন বলে আশ্বাস দিলেও পাঁচ বছরে তারা ব্যর্থ হন। শিলচরের দিকে ২০০ মিটার এবং দুধপাতিলের দিকে ৪৫০ মিটার এলাকায় রাস্তার কাজ হলে সেতুটি সম্পন্ন হতো। গতবছর প্রাক্তন জেলা শাসক বর্ণালী শর্মার নেতৃত্বে একটি দল এলাকা পরিদর্শন করে জানিয়েছিল অ্যাপ্রোচের কাজ শুরু হবে, কিন্তু কোনও অজানা কারণে সেটিও ভেস্তে যায়।

মঙ্গলবার ছোটদুধপাতিলের সামাজিক সংগঠন মানব কল্যাণ সংঘের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্দেশ্যে একটি স্মারকপত্র পাঠানো হয়েছে। সেতুটির বৃত্তান্ত তুলে ধরে তারা আবেদন জানিয়েছেন, এই বছরেই যাতে অ্যাপ্রোচ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। স্মারকপত্রের প্রতিলিপি স্থানীয় বিধায়ক, পূর্ত বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং বিজেপির জেলা কমিটির কাছে তুলে ধরেন তারা।

সামাজিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে তন্ময় পুরকায়স্থের নেতৃত্বে একটি দল মঙ্গলবার উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোমের সঙ্গে প্রথমের দেখা করেন। গত কয়েক বছরে কতটুকু কাজ এগিয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য কাগজপত্র সহ তার কাছে তুলে ধরেন। মিহির কান্তি সোম তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “যেহেতু সেতুটি দুই সমষ্টির মধ্যে বিভাজিত, ফলে তাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে যাতে অ্যাপ্রোচ অতিসত্বর গড়ে তোলা যায়। গত পাঁচ বছরে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকবার চেষ্টা হয়েছে। তবে অনেকেই জমি দিতে রাজি হননি, তাই কাজটি সম্পন্ন হয়নি। তবে এবার সেতুটি জনগণের উদ্দেশ্যে চালু করার জন্য আমরা সরকারের কাছে নতুন ভাবে আবেদন রাখব। আমাদের বিশ্বাস এবার কাজ সম্পন্ন হবে।”

তন্ময় পুরকায়স্থ বলেন, “প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ এই সেতুর মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবেন। ৩০ হাজার মানুষ এই এলাকায় বসবাস করেন যারা বিভিন্ন কাজের জন্য শহরে আসতে হলে অনেক ঘুরে পৌঁছোতে হয়। মালুগ্রাম এলাকা হয়ে তিনটে ঘাট রয়েছে, প্রতিমাসে দশ হাজার লোক নৌকার সাহায্যে নদী পেরিয়ে শহরে আসেন। বর্ষার দিনগুলোয় নদী পুরোপুরি ভরে যায় এবং অতীতে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই জনগণের কষ্টের টাকা ব্যবহার করে যে সেতু বানানো হয়েছিল, শুধুমাত্র অ্যাপ্রোচের জন্য যাতে এটি একেবারে বৃথা হয়ে না যায়।”

যখন সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তখন বড়খলার বিধায়ক ছিলেন রুমি নাথ। দুটো পিলার গড়ে ওঠার পরেই তখন কাজ অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে আরটিআই করা হয়। বিধায়ক তখন এক মামলায় জেলে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে কাজ শেষ হয়, তবে অ্যাপ্রোচ নিয়ে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি তৎকালীন সরকার। ২০১৬ সালে বিজেপির সরকার আসে এবং বিধায়ক হন কিশোর নাথ। তিনি বরাবরই দুধপাতিল এলাকাকে উপেক্ষা করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। মালুগ্রাম হয়ে বরাক নদীর উপর যে সেতু দুধপাতিলকে শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারত, বিধায়কের প্রচেষ্টায় সেটা অন্নপূর্ণা ঘাটে চলে যায়। যদিও শুধুমাত্র দুটো পিলার বসানো ছাড়া সেখানে কোনও কাজ হয়নি। এবার নতুন সরকারের অধীনে এলাকার মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের প্রার্থী মিসবাহুল ইসলাম লস্কর বলেছিলেন করাতিগ্রাম-মধুরামুখ সেতুর অ্যাপ্রোচ গড়ে তোলা তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে। তিনি বলেছিলেন, তাদের সরকার থাকাকালীন সময়ে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। তবে প্রাক্তন বিধায়ক রুমি নাথের ব্যর্থতার দরুন অ্যাপ্রোচ গড়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে বিজেপির সরকারও কাজটি করেনি। তবে এবার তিনি সরকারের কাছে লাগাতার দাবি জানাবেন এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে তৎপর থাকবেন।

সোমবার এলাকার প্রতিনিধিদলটি জেলা বিজেপি সভাপতি সহ অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করে। তারা জানায়, যদিও বড়খলা বিজেপির প্রার্থী অল্প ভোটের জন্য হেরে গেছেন, বৃহত্তর দুধপাতিল এলাকায় মানুষ বিজেপিকে বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন। এবার যখন সরকার বিজেপির, তাহলে দলের সর্মথকরা কেন উপেক্ষিত থাকবেন।

তারা আরেকটি তথ্য তুলে ধরেন, অন্নপূর্ণাঘাট হয়ে বড়খলার যে অংশে বরাক নদীর উপর সেতুটি গিয়ে স্পর্শ করছে, সেই কেন্দ্রে এই বছরের নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী মাত্র ৪৫টি ভোট পেয়েছিলেন এবং কংগ্রেসের প্রার্থী এক হাজারের বেশি ভোট পান।

Comments are closed.