
করিমগঞ্জের প্রিয়াঙ্কা এখন ব্যাঙ্গালোরের সেরা মেকআপ আর্টিস্ট, পেয়েছেন 'ইয়ং এন্টারপ্রেনার' পুরস্কারও
বছর পঁচিশের প্রিয়াঙ্কা শর্মাচার্যের মেকআপ ব্রান্ড ‘পি/ফিলপ্রিটি’ সারাদেশে অনেক মহিলাকে রোজগারের সুযোগ করে দিয়েছে। গতবছর ব্যাঙ্গালোরের সেরা মেকআপ আর্টিস্ট এবং ইয়ং এন্টারপ্রেনার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। তার নিজস্ব প্রডাক্ট ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন এবং ইতিমধ্যে দক্ষিণ ভারতের বেশকিছু অভিনেত্রী তার ভক্ত হয়ে পড়েছেন। সেই প্রিয়াঙ্কা শর্মাচার্য বরাক উপত্যকার মেয়ে, তার বাড়ি করিমগঞ্জে এবং প্রাথমিক পড়াশোনাও সেখানেই। স্বপ্ন ছিল এমবিএ করবেন, এর আগে বি-কম করতে ব্যাঙ্গালোর পাড়ি দিয়েছিলেন। পকেট মানি থেকে টাকা জমিয়ে মেকআপ নিয়ে চর্চা করতেন। শখের খাতিরে বন্ধুদের মেকআপ করে দিতেন। ডিজিটাল যুগে ভালো কাজ খুব সহজে অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে, এক সময় অনেকেই তাকে মেকআপ করে দেওয়ার জন্য ডাক দেন এবং তার বিনিময়ে টাকা দিতে রাজি ছিলেন। এভাবেই শুরু হয় তার যাত্রা।
ইনস্টাগ্রামে এখন তার প্রচুর ফলোয়ার, রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট, ব্যাঙ্গালোরের সেরা মেকআপ আর্টিস্ট পুরস্কার পাওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজের প্রডাক্ট ব্র্যান্ড চালু করেছেন। বছরে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের মাধ্যমে তার ব্র্যান্ড এখন ৪০ লক্ষ টাকা রোজগার করছে। তবে তিনি একা রোজগার করছেন না, বরং মহিলাদের রোজগারের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। তার অধীনে কাজ করার পর ২৫ জন মহিলা এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল।
বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রিয়াঙ্কা শর্মাচার্য বলেন, “একসময় শখের খাতিরে মেকআপ করলেও পরে অনুভব করি এই কাজকে প্রফেশন হিসেবে নেওয়া সম্ভব। ২০১৮ সালে আমার মেকআপ ব্র্যান্ড ‘ফিলপ্রিটি’ চালু করি এবং এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে টলিউডের নায়িকা, প্রত্যেকের মেকআপ করেছি আমরা। চন্দনা গৌরা, কৌশানী মুখার্জী, চিত্রা বাসুদেবন, আনমোল চৌধুরীর মতো তারকারা এখন আমাকে দিয়েই মেকআপ করতে পছন্দ করেন। তারা আমার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টও ব্যবহার করছেন। আমাদের ব্র্যান্ড ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং অনেক মহিলারা আমাদের সঙ্গে জুড়ে আর্থিকভাবে সক্ষম হতে পারছেন। এটাই আমার কাছে সবথেকে বড় প্রাপ্তি।”
গতবছর ব্যাঙ্গালোরে এসিই বিজনেস আওয়ার্ডসে ‘বেস্ট মেকআপ আর্টিস্ট এন্ড ইয়ং এন্টারপ্রেনার ২০২০’ পুরস্কার জিতে সবাইকে চমকে দেন তিনি। ব্যাঙ্গালোরের মত জায়গায় অনেকেই নিজের সেরা কাজ করছেন এবং সেখানে এত বড় পুরস্কার পাওয়া অবশ্যই একটি বড় প্রাপ্তি। তবে এই যাত্রার পিছনে অনেকটাই সাহায্য করেছে তার এমবিএ পড়ার অভিজ্ঞতা। বি-কম করার পর ব্যাঙ্গালোরে তিনি এমবিএ পড়ার জন্য যোগ দেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের স্টার্টআপ মেকআপ ব্র্যান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি এমবিএ পড়ার জন্য ঘর থেকে তাকে টাকা নিতে হয়নি, নিজের রোজগার থেকে ব্যাঙ্গালোরে থাকে এবং পড়াশুনার খরচ যোগান দিয়েছেন তিনি। তবে ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের ব্র্যান্ড ঘোষণা করেন এবং এর অধীনে অন্যান্য মহিলাদের এতে যুক্ত করেন।
এব্যাপারে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “যেহেতু এমবিএ করেছি ফলে মার্কেটিং ব্যাপারটা কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। একটা প্রোডাক্ট বা পরিষেবা যদি খুব ভালো হয়, তার সঙ্গে পর্যাপ্ত মার্কেটিং জুড়ে দিতে পারলে সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় কাজ করেছে সেটা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। এই তিনটের কম্বিনেশনে আমরা দুই বছরেই শুধু ব্যাঙ্গালোর নয়, সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছি। ‘ফিলপ্রিটি’ তার পরিষেবার জন্য ব্যাঙ্গালোরের অন্যতম সেরা ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার পর আমরা প্রডাক্ট ব্র্যান্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিই। গতবছর ১৮ অক্টোবর লঞ্চ হয় আমাদের প্রোডাক্ট ব্যান্ড ‘পি’। এবার ‘পি/ফিলপ্রিটি’ ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতে আরও অনেক মহিলা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন এবং তারা আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার সুযোগ পাবেন।”
‘পি/ফিলপ্রিটি’ ব্র্যান্ডকে সমর্থন করছে মিন্ত্রা, ফ্লিপকার্ট, নাইকার মতো বড় মাপের মার্কেটিং প্লাটফর্ম গুলো। এছাড়া www.feelpretty.in এর মাধ্যমে নিজেদের ওয়েবসাইটে নিজেই মার্কেটিং চালিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা। আপাতত লকডাউনের ফলে করিমগঞ্জের হয়েছেন তিনি তবে বাড়িতে বসেই নিজের ব্র্যান্ডের মার্কেটিং সহ অন্যান্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম থেকেই দেশের যুব সমাজকে এন্টারপ্রেনার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। অনেকেই নিজের স্টার্টআপের মাধ্যমে শুধু নিজের রোজগার নয়, অন্যদের রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বরাক উপত্যকার মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে পড়াশোনার খাতিরে গিয়ে নিজের স্টার্টআপ চালু করে এখন সেখানে সেরা মেকআপ আর্টিস্ট হয়েছে। শুধু নিজের রোজগার নয় বহু পরিবারের রোজগারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বছর পঁচিশের মেয়েটি। অবশ্যই বরাক উপত্যকার কাছে এটা গর্বের বিষয়। তবে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সে অনেক যুবক-যুবতীকে উদ্বুদ্ধ করছে, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জোগাতে সমর্থ হচ্ছে। হয়ত তার পথ ধরে ভবিষ্যতে আরও অনেকেই নিজের স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করার কথা ভাববেন এবং এভাবেই সারাদেশে খ্যাতি অর্জন করবেন।
Comments are closed.