Also read in

পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন করিমগঞ্জের তরুণী পল্লবী দেবরায়

বাঙালি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার মরশুমেই সত্যিকার অর্থে প্রতিমা তৈরির কারুকাজের সাক্ষী হতে পারা যায়। ভাস্করদের প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব স্টাইলে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে মাস কাটান। ঠিক এভাবেই করিমগঞ্জের এক তরুণী পল্লবী দেবরায় ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুসারে তিনি ঠিক করেন, সব ধরনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য থেকে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি করবেন। নিজের এই লক্ষ্যে তিনি সফল হয়েছেন। আর এমনটা করার মাধ্যমে তিনি উপত্যকার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। এবার তার এই অভিনব কৃতিত্বে সাফল্যের মিছিলে আরো একটি পালক যোগ হল।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার করে দেবী দুর্গার সবচেয়ে বড় মূর্তি তৈরির জন্য তার প্রচেষ্টাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডস’ স্বীকৃতি দিয়েছে।

পল্লবী দেব রায় সংস্কৃত অনার্সের ছাত্র। তিনি সবসময়ই কারুশিল্প এবং চারুকলার শিল্প নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার এর আগে অলঙ্কার এবং হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরির জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য নিয়েও কাজ করেছি। ২০১৮ সালের পূজার ঠিক আগে আমার মা আমায় এই ধারণা দিয়েছিলেন। সব ধরণের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য দিয়ে আমায় দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরীর ধারণা দিয়েছিলেন। শোনার সঙ্গে সঙ্গেই এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। তখন থেকেই এনিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এটি শেষ করতে আমার দুই মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। ছয় ফুটের প্রতিমা তৈরি করতে আমি প্লাস্টিকের প্যাকেট, চামচ, অ্যালুমিনিয়াম শীট, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি জিনিস ব্যবহার করেছি।’

 

 

 

‌যখন মূর্তিটি সম্পূর্ণ হয়েছিল তখন এটি উপত্যকা জুড়ে প্রশংসা পেয়েছিল। কিন্তু তখন কে ভেবেছিলেন তার প্রচেষ্টা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পাবে। সেইসঙ্গে এটা এক বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করবে। পল্লবী বলেন, ” প্রতিমা তৈরির পর কয়েক মাস কেটে গিয়েছিল। একদিন কেউ আমাকে বলেছিল যে আমার এই কাজ রেকর্ড বুকে সংযোজন হওয়া উচিত। তাই এরপর আমি যোগাযোগ করলাম ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডস এর সঙ্গে।

তবে তাদের প্রক্রিয়াটা খুবই দীর্ঘ ছিল। তারা সবকিছু খতিয়ে দেখেছে। মিডিয়া কভারেজ থেকে শুরু করে ভিডিও ফুটেজ সবকিছু। এই প্রক্রিয়াতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। ‌ তারপর করোনার জন্য আরও দেরি হয়। সে কারণেই স্বীকৃতিটি একটু দেরিতে এসেছে। তবে অবশেষে ৩১আগস্ট আমি চিঠি মারফত জানতে পারি যে আমার কাজটি তাদের বইয়ে রেকর্ড হোল্ডার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে।”

করোনার জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ তাকে অফিসিয়াল কনফার্মেশন লেটার এবং মেডেল ডাকযোগে পাঠিয়েছে। পল্লবী জানান,তিনি পরিবেশ রক্ষার কারণকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করেন। সেইসঙ্গে বিশ্বাস করেন যে প্রকৃতি থেকে ‘নন-বায়োডিগ্রেডেবল’ উপাদানগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া প্রকৃতির সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতীতেও তিনি তার প্রতিভা এবং হস্তশিল্পের দক্ষতা ব্যবহার করে পুনর্ব্যবহৃত পণ্য থেকে বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরি করেছেন। তবে এবারের স্বীকৃতি তার এই প্রচেষ্টাকে এক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। পল্লবী বলেন, ‘অবশ্যই আমি দারুণ খুশি এবং রোমাঞ্চিত। ‌ আন্তর্জাতিক স্তরে এমন স্বীকৃতি পেয়ে আমি সত্যিই খুশি। আমার এই কাজের মাধ্যমে সমাজে একটি বার্তা পৌঁছেছে। আর সেই বার্তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। ‌ এটা আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। আমি বিশ্বাস করি প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের এভাবেই এই পদার্থ গুলিকে কাজে লাগাতে হবে।’

Comments are closed.