লক্ষীপুর স্পোর্টসের উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনা বিধায়ক কৌশিক রায়ের, এম এল এ কাপের ফাইনালে আসছেন নয়নমনি শইকিয়া-মীরাবাঈ চানু
লক্ষ্মীপুর স্পোর্টস এর উন্নয়নে আদা জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন বিধায়ক কৌশিক রায়। প্রত্যন্ত এই অঞ্চল থেকে প্রতিভা তুলে আনতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। শুধু প্রতিভা তুলে আনা নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য এক বিশেষ মিশন নিয়ে কাজ করছেন লক্ষীপুরের বিধায়ক।
সাধারণত সরকারের দেওয়া ফান্ড থেকেই বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজ হয়ে থাকে। ব্যতিক্রম নয় স্পোর্টস সার্কিট। সরকারি মদতেই হয়ে থাকে স্পোর্টসের উন্নয়ন। তবে এক্ষেত্রে এক ব্যাতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন লক্ষীপুরের বিধায়ক। স্পোর্টস সহ সমাজে শিক্ষা এবং বেকারত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য নিজস্ব একটি যোজনা চালু করেছেন কৌশিক রায়। এই যোজনার নাম প্রজ্ঞা। এটা কোনও সরকারি যোজনা নয়। লক্ষীপুর এলাকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য এটা চালু করেছেন সেখানকার বিধায়ক। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই যোজনার অধীনে শিক্ষা, বেকারত্ব এবং স্পোর্টস নিয়ে কাজ হচ্ছে লক্ষীপুরে।
কৌশিক রায় বলেন, ‘ডঃ হিমন্ত বিশ্বশর্মা মুখ্যমন্ত্রী হবার পরই ঘোষণা করেছিলেন এক লক্ষ কে চাকরি দেওয়া হবে। সেদিকে নজর রেখেই এই প্রজ্ঞা যোজনা মাধ্যমে আমরা ছেলে মেয়েদের কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। টাইম নামক এক সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোট ৮২১ জন ছাত্রছাত্রীকে ৬০ দিনের একাডেমিক ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। আর ৯৪৭ জন ছাত্রকে ফিজিক্যাল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। লক্ষীপুরে মোট আটটি মাঠে বসেছিল ওই ট্রেনিংয়ের আসর। এতে আমাদের সাহায্য করেছিলেন দয়াপুর সিআরপিএফের মাস্টার ট্রেনাররা। তারাই ছাত্র-ছাত্রীদের ট্রেনিং দিয়েছিলেন।’
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই প্রজ্ঞা যোজনার অধীনে ট্রেনিং নিয়ে পুলিশ বিভাগ ও টেট শিক্ষক বিভাগে লক্ষীপুর এলাকার ৫৯ জন ছেলে-মেয়ে নিযুক্তি পেয়েছেন। এছাড়া গ্রেড ৩ ও ৪ ক্যাটাগরির জন্য প্রজ্ঞার অধীনে কোচিং নেওয়া অনেক ছেলেমেয়েরা আবেদন করেছেন।
স্পোর্টসের জন্য তো একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন লক্ষীপুরের বিধায়ক। প্রজ্ঞা যোজনার পার্ট ২ হিসেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে বড় মাপের একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছেন। এর পোশাকি নাম- লক্ষীপুর এম এল এ কাপ ২০২২। গত সাত আগস্ট থেকে এই ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল। এই মুহূর্তে চলছে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব। আগামী ২৯ ও ৩০ আগস্ট রয়েছে দুটি সেমিফাইনাল। তারপর চার সেপ্টেম্বর মেগা ফাইনাল। এই ফাইনালে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সদ্য সমাপ্ত বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে লোন বলে সোনা জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য নয়ন মনি শইকিয়া কে। এছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে উত্তর-পূর্বের আরো এক সোনা জয়ী এথলিট মীরাবাঈ চানুকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই ফুটবল টুর্নামেন্টে লক্ষীপুরের মোট ২২৬ টি দল অংশ নিয়েছে। প্রথম পর্বে ছিল জিপি পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। মোট ২৪টি জিপি অংশ নিয়েছিল। জিপি পর্যায়ের পর টুর্নামেন্ট হয়েছে বিধানসভা সমষ্টি ভিত্তিক। গোটা টুর্নামেন্টে রেকর্ড ২৪৮০ জন ফুটবলার অংশ নিয়েছেন। লক্ষীপুর তো বটেই, ফুটবলার তথা দলের সংখ্যা বিচার করলে গোটা বরাক উপত্যকার ইতিহাসে এত বড় মাপের ফুটবল টুর্নামেন্ট এর আগে হয়নি। শুধু টুর্নামেন্ট আয়োজন করেই বসে থাকেননি আয়োজকরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যত বেশি সম্ভব ফুটবলার তুলে আনা। সেজন্য কিছু নিয়ম ও বেধে দেওয়া হয়েছিল। যেমন এক জিপির খেলোয়াড় অন্য জিপিতে গিয়ে খেলতে পারবে না। এ নিয়ে বেশ কড়াকড়ি ছিল। কেউ যাতে নাম ভাড়িয়ে না খেলতে পারে তার জন্য প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ভোটার আইডি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু খেলোয়াড় বাদও পড়েছেন।
এম এল এ কাপ লক্ষীপুরের প্রাইজ মানিও বিশাল। জিপি স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক দলকে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। জিপি স্তরে চ্যাম্পিয়ন দল পাচ্ছে ৫০০০ টাকা। রানারআপ দল পাবে আড়াই হাজার। ফাইনাল রাউন্ডের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ট্রফি সহ ১ লক্ষ ১ হাজার টাকা। রানার আপ দলের জন্য থাকছে ট্রফি সহ ৫১ হাজার টাকা। রয়েছে টুর্নামেন্ট সেরা ফুটবলারের পুরস্কারও।
এত বড় মাপের ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে যাতে বেশি সংখ্যক ফুটবলার তুলে আনা যায় সেদিকে বিশেষ নজর রেখেছেন লক্ষীপুরের বিধায়ক। ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেও প্রতিদিন টুর্নামেন্ট সম্পর্কে আপডেট নিচ্ছেন। কৌশিক রায় বলেন, ‘এই টুর্নামেন্ট থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের বিশেষ কোচিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি খেলোয়াড়দের বাইরে নিয়েও কোচিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতে পারে। এ নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেখুন, লক্ষীপুরে স্পোর্টস এর দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে পরিকাঠামোর অভাব। আমি সে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। দশটি মাঠ তৈরীর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। খুব শীঘ্রই একটা ইনডোর স্টেডিয়ামের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিন্নাকান্দি তে আধুনিক স্টেডিয়াম হবে। এছাড়া ফুটসলের অ্যাস্ট্রো টার্ফ এর জন্য ৩০ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করেছি। লক্ষীপুরে প্রতিবার অভাব নেই। ভাল পরিকাঠামো থাকলে আরো বেশি প্রতিভা উঠে আসবে।’
সাম্প্রতিক কালে স্পোর্টস সার্কিটে রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে গেছেন লক্ষীপুরের ছেলেমেয়েরা। ফেন্সিং থেকে সেপাক টাকরো, টাইকোয়ান্ডো এবং ফুটসলে জাতীয় আন্তর্জাতিক স্তরে লক্ষীপুরের নাম উজ্জ্বল করেছেন কবিতা দেবী-প্রিয়া দেবীরা। তাই এবার বিধায়ক কৌশিক রায়ের স্পোর্টস নিয়ে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপে আরো লাভবান হবে লক্ষীপুর স্পোর্টস। এমনটাই আশা করছেন স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমীরা।
Comments are closed.