
খিলঞ্জীয়া মঞ্চ দেশদ্রোহী সংগঠন, তাই মনোনয়ন প্রত্যাহার,দাবি দিলীপ কুমারের
বরাক উপত্যকার স্বঘোষিত খিলঞ্জীয়া মঞ্চ আসলে একটি দেশ বিরোধীদের সংগঠন, তারা ভারত বিরোধী কার্যকলাপকে সমর্থন করে। আসল রূপ আমাদের সামনে চলে আসায় তাদের থেকে সরে এসেছি এবং লোকসভা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। তারা এখন আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা আইনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবো, এমনটাই জানালেন খিলঞ্জীয়া মঞ্চ থেকে শিলচর লোকসভা আসনের নির্দল প্রার্থী হওয়া দিলীপ কুমার।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বরাকের খিলঞ্জীয়া মঞ্চের হয়ে প্রার্থিত্ব জমা দেন হিন্দিভাষী ও চা-জনগোষ্ঠীর মঞ্চের মুখ্য উপদেষ্টা। তবে শেষমুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। মঞ্চের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় বিতর্কের মুখে পড়েন দিলীপ কুমার। তার বিরুদ্ধে খিলঞ্জীয়া মঞ্চের তরফে ধূর্ততার অভিযোগে বৃহস্পতিবার এফআইআর দায়ের করা হয়।
শুক্রবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দিলীপ কুমার তার এ বিষয়ে সাফাই দেওয়ার পাশাপাশি তুলে ধরেন বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য। তিনি বলেন, “আমরা মূলত কেন্দ্র সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করার জন্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যারা সরাসরি বিলের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের সঙ্গে আমাদের সহমত ছিল। খিলঞ্জীয়া মঞ্চ নামে একদল মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বলেন চা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তারা আমাদের পাশে পেতে চান। তারা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ রাখেন। প্রচারে খরচ তারাই বহন করবেন বলে জানালেও পরে সেটা করেননি। তারা তাদের বৈঠকে আমাদের খুব একটা ডাকতেন না। তারপর আস্তে আস্তে আমরা দেখতে পাই তারা “গো ব্যাক ইন্ডিয়া ওয়েলকাম চায়না” এসব স্লোগানকে সমর্থন করছেন। দেশদ্রোহী কানাইয়া কুমারের আদর্শ প্রচার করছেন। এছাড়াও বেশ কিছু সন্দেহজনক কার্যকলাপ আমাদের চোখে পড়েছিল। তবে এসব বুঝতে একটু দেরি হয়ে গেছে, ততক্ষনে আমি মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। মনোনয়ন প্রদানের সময় যেটুকু সমর্থন তারা করবেন বলেছিলেন তা কিছুই করেননি উল্টো আমরা অনেক কষ্টে মনোনয়নের টাকা জোগাড় করে জমা দেই।”
তিনি আরো বলেন, “তারপর বিজেপি দলের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং আমরা হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে দেখা করতে গোলাঘাট যাই। সেখানে তিনি হিন্দি ভাষী জনগণের পক্ষে যেসব দাবি ছিল তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। আমরা ফিরে এসে খিলঞ্জীয়া মঞ্চের মূল ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি তবে তারা আমাদের কথায় কান দেননি। উপরন্তু তমিজ উদ্দিন নামের এক প্রাক্তন আলফা আমাদের হুমকি দেয়, মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে এলে জেলাশাসক কার্যালয়ে ঢুকতে দেবেনা। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই যে আর নয়, দেশদ্রোহীদের পাশে বসিয়ে নির্বাচনী প্রচার করব এটা সম্ভব নয়। আমরা তাদের হুমকি পরোয়া না করে মনে সাহস নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করি। তবে প্রত্যাহারের দিনও খিলঞ্জীয়া মঞ্চের হেরাজিৎ সিংহকে বারবার ফোন করি আমি, কারণ এটা আমার দায়িত্ব ছিল। তিনি ফোন তোলেননি। এখন তিনি এবং তার দলের কর্মকর্তারা প্রায়ই আমাদের ফোন করে হুমকি দেন। হেরাজিৎ সিংহ নিজে একদিন আমাকে ফোন করে বললেন, আমি হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছে যত টাকা পেয়েছি তার অর্ধেকটা তাকে দিয়ে দিতে হবে, না হলে আমাদের ভালো হবে না। এর উত্তরে আমি তাকে বলি, প্রথমত আমরা কোন টাকার লেনদেন করতে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে দেখা করিনি, আমাদের জাতির উন্নতির জন্যই এই লড়াই। আর দ্বিতীয়ত একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে এভাবে কেউ হুমকি দিতে থাকলে আমি পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হব।”
“তবে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে যারা হুমকি দিলেন,তারাই শুনেছি আমাদের নামে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ করলেই হয়না, তার ভিত্তি থাকতে হবে। এবার হয়তো আমরাও তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করব এবং আমাদের কাছে জোরালো প্রমাণ রয়েছে”, তিনি যোগ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে দিলীপ কুমারের সঙ্গে এদিন রামচন্দ্র নুনিয়া, গণেশলাল ছেত্রী ও অন্যান্যরা অংশ নেন। তারা বলেন, আমরা প্রায় ৩৯টির বেশি হিন্দিভাষী সংগঠনের তরফ থেকে গত বছর ৩২টি দাবি নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে স্মারক পত্র পাঠিয়েছিলাম। দাবিগুলোর প্রত্যেকটিই ছিল এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য। তাই এই আন্দোলনে আমরা নতুন নই। আমাদের নির্বাচনে আসার উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের দাবিকে আরও জোরালো করে তোলা। খিলঞ্জীয়া মঞ্চের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন, তাতে আমরা খুশি। তবে তাদের আসল রূপ দেখে এখন আর আমরা তাদের সঙ্গে থাকছি না। আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। সরকার যদি দাবি মেনে নেয় তাহলে ভালো, না হলে ভবিষ্যতে আমাদের আন্দোলন অন্য রূপ নেবে।
Comments are closed.