Also read in

অসম-মিজোরাম সীমান্ত; সমাধানের পথ না দেখিয়ে অতুল বরা বললেন "চলো, অতীত ভুলে যাই"

শামসুজ্জামান বড়ভূঁইয়া, স্বপন কুমার রায়, মজরুল হক বড়ভূঁইয়া, নজমুল হক বড়ভূঁইয়া, শ্যামাপ্রসাদ দুসাত এবং লিটন শুক্লবৈদ্য গত ২৬ জুলাই ঘটে যাওয়া ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। এদের সবাই অসম পুলিশের কর্মী। এই ঘটনার ঠিক দশ দিন পর অসম মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী অতুল বরা বললেন, “আসুন, আমরা অতীত ভুলে যাই”। মিজোরামে অনুষ্ঠিত দুই রাজ্যের মধ্যে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এই কথাগুলো বলেন। যে সাংবাদিক সম্মেলনটি মাত্র পনেরো মিনিট ধরে চলেছিল।

কমিশনার এবং সচিব জিডি ত্রিপাঠী একটি যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান। তারপর সাংবাদিকদের প্রশ্ন পর্ব শুরু হয়। অতুল বরা দু চারটে প্রশ্ন নিলেও উত্তরটা কিন্তু তিনি একটি কাগজ থেকে পড়েন। তার উত্তর কোনোভাবেই মিজোরাম প্রেস কোর দ্বারা জিজ্ঞেস করা প্রশ্নগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। একইভাবে অসমের সাংবাদিকদের দ্বারা জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর উত্তরও সম্পর্কিত ছিল না। পরিবর্তে একটি যৌথ প্রতিক্রিয়া ছিল।

“এই বৈঠকটি প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র। আমাদের বুঝতে হবে যে সমস্যাটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং আমরা নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান বের করব”, বরা আরও বলেন। এরপর যখন আরও প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, যেমন “সীমানা নির্ধারণ কখন শুরু হবে কিংবা বিষয়টি কিভাবে সমাধান হবে”। তখন বরা পুনরাবৃত্তি করলেন,” আমরা সবে মাত্র যাত্রা শুরু করেছি এবং আমি মনে করি না যে এই মুহূর্তে পরিস্থিতিকে জটিল করার জন্য আমাদের আরও প্রশ্ন করা উচিত। দুই মুখ্যমন্ত্রী চান সীমান্ত সমস্যার সমাধান হোক, মুখ্যমন্ত্রীদ্বয় চান, শান্তি বিরাজ করুক। এই বার্তাটাই এখান থেকে সবার মধ্যে যাওয়া উচিত।”

বরাক বুলেটিনের সংবাদদাতা মিজোরামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন যে অসমের ৬ জন পুলিশ সদস্য যেখানে নিহত হয়েছিলেন, সেই পোস্টটি কিভাবে মিজোরাম আইয়ার ব্যাটেলিয়নের পাহারায় ছিল, যেখানে দুটি রাজ্য বিতর্কিত এই অঞ্চলে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে সম্মত হয়েছিল। মিজোরামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর দেওয়ার আগেই অতুল বরা মাইক্রোফোন তুলে বললেন, “যা ঘটেছে তা একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আজ আমরা একটি ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। তাই আসুন, অতীতকে ভুলে যাই।”

মিজোরামের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তাকে অর্থনৈতিক অবরোধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। অসম সরকার বারবার অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে মিজোরামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ব্যাহত করার কোনো ভূমিকা অস্বীকার করে।

দুই রাজ্যের আলোচনার ফলস্বরূপ একটি যৌথ বিবৃতি পাঠ করা হয়। কিন্তু মনে হচ্ছিল বিবৃতিটি আগে থেকেই যেন তৈরি করা হয়েছিল এবং সভা শুরুর আগেই তা হস্তান্তর করা হয়েছিল। এতে যেন সভা কম এবং ছবি তোলার সুযোগটাই বেশি ছিল। সামনে যে সুদীর্ঘ রাস্তা ধরে হাঁটতে হবে, সেই সম্পর্কেও একটিও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

তবে বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয়, “মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধিরা ২৬ জুলাই নিহত হওয়া সব পুলিশকর্মীর জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।”

উভয় রাজ্য সরকার আন্তঃরাজ্য সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সম্মত হয় এবং এই বিষয়ে ভারত সরকারের নিরপেক্ষ বাহিনী মোতায়েনকে স্বাগত জানায়। এই উদ্দেশ্যে উভয় রাজ্য তাদের নিজ নিজ পুলিশ বাহিনীকে টহল, আধিপত্য প্রয়োগ বা নতুনভাবে মোতায়ন করে এমন কোন এলাকায় পাঠাবে না যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে দুই রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরমধ্যে অসম- মিজোরাম সীমান্তের সঙ্গে করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি এবং কাছাড় তথা অসমের সীমান্ত কাছাকাছি সব অঞ্চল এবং মিজোরামের মামিত এবং কলাশিব জেলা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “অসম-মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধিরা বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় অসম, মিজোরামে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির উন্নতি তথা শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছেন।”

Comments are closed.