Also read in

"বরাক ব্রহ্মপুত্রের মিলনের প্রতীক হোক এই ট্রেন", শিলচর-ডিব্রুগড় ট্রেনের উদ্বোধনে বললেন সর্বানন্দ

আজ বিকেলে ডিব্রুগড় স্টেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিলচর-ডিব্রুগড় ট্রেনের শুভ উদ্বোধন করলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল মহাশয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেল রাজ্যমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই, দুলিয়াজানের বিধায়ক তেরস গোয়ালা এবং এন.এফ রেলের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। শিলচরের মানুষরাও যাতে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেন সেজন্য রেলওয়ের তরফ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি লাইভ টেলিকাস্ট করা হয়। কারিগরী ত্রটির জন্য প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ ভালো করে শোনা না গেলেও পরে সেটা ঠিক করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী উনার ভাষণে বরাক এবং ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে তৈরি হওয়া অদৃশ্য প্রাচীর ভেঙে দিয়ে এই দুই উপত্যকার মধ্যে সমন্বয় এবং সহযোগিতার এক বাতাবরন সৃষ্টি করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন যে আসামকে ভারতের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হলে দুই উপত্যকার মধ্যে সেতুবন্ধন খুবই প্রয়োজনীয় এবং এই ট্রেন সেই কাজটিকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। রেল রাজ্যমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইকেও তিনি এই ট্রেন চালু করার জন্য ধন্যবাদ জানান। উল্লেখযোগ্য যে গত বছর ১৮ নভেম্বর,২০১৭ তারিখে নমামি বরাকের উদ্বোধনের দিন শিলচর স্টেশনে এসে মুখ্যমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইকে শিলচর থেকে ডিব্রুগড় একটি ট্রেন চালু করার সুপারিশ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রহণ করা উত্তর পূর্ব নীতিকেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।

 

 

শিলচর স্টেশনে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বি.জে.পি নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, উদয় শঙ্কর গোস্বামী, উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোম, কাটিগড়ার বিধায়ক অমর চাঁদ জৈন, স্টেশন মাস্টার বিপ্লব কুমার দাস এবং উৎসুক জনতা। ডিব্রুগড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিলচরেও টিভি স্ক্রিনের মাধ্যমে ট্রেনটিকে ফ্ল্যাগ অফ করা হয়।

কিছুদিন আগেই স্পাইস জেট শিলচর ও ডিব্রুগড়ের মধ্যে তাদের ফ্লাইট পরিষেবা শুরু করে। তার সঙ্গে এই শিলচর-ডিব্রুগড় ট্রেনের সংযোজন নিশ্চিতভাবেই বরাক উপত্যকার যাত্রীদের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পৌঁছতে অনেকটাই সাহায্য করবে।

এই ট্রেনটি ডিব্রুগড় রাজধানী এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংযোগ সাধনে সাহায্য করবে যার ফলে শিলচরের যাত্রীরা খুব সহজে দিল্লি পৌঁছতে পারবেন।প্রত্যেক মঙ্গলবার এই ট্রেনটি সকাল দশটা পনেরো মিনিটে শিলচর স্টেশন থেকে যাত্রা করবে এবং পরের দিন সকাল এগারোটা বিশ মিনিটে ডিব্রুগড় পৌঁছবে। রাজধানী এক্সপ্রেস প্রত্যেকদিন সকাল আটটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে ডিব্রুগড় থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ডিব্রুগড়-শিলচর ট্রেনটি প্রতি সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় ডিব্রুগড় থেকে যাত্রা শুরু করবে এবং পরের দিন সকাল আটটা চল্লিশ মিনিটে শিলচর পৌঁছবে। এই ট্রেনটি ১৩ ঘন্টায় ৫২৬ কিলোমিটার যাত্রা করবে।

 

 

শিলচর-ডিব্রুগড় ট্রেনটিতে একটি এসি কোচ, আটটি স্লিপার কোচ, ছয়টি সাধারণ কোচ এবং অন্যান্য কোচ মিলিয়ে মোট উনিশটি কোচ থাকবে। ট্রেনটি বদরপুর, নিউ হাফলং, লামডিং,ডিমাপুর, মরিয়ানী জংশন, শিমুলগুড়ি ও শিবসাগর টাউনে থামবে।
এদিকে রেল মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে যে মাহুর হারেঙ্গাজাও সহ পাঁচটি মিটার গেজ লাইনকে সংরক্ষন করে হেরিটেজ লাইন হিসাবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বিভাগ। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব রেলপথকে ব্রডগজে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এখন পূর্বের পরিকল্পনা বাতিল করে এই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । মাহুর হারেঙ্গাজাও ১২০ কিলোমিটার রেলপথকে হেরিটেজ লাইন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সংরক্ষনের ফলে টানেলগুলি এক প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে থাকবে। এছাড়া এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি ইকো টুরিজম সাফারিরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগেরও সুযোগ করে দেবে পর্যটকদের।

Comments are closed.