স্বাস্থ্যব্যবস্থা এমন হোক, কেউ অসুস্থ হলে আগে সরকারি হাসপাতালে যেতে চাইবেন: ১৪০ কোটির প্রকল্প ঘোষণা করে হিমন্ত
দুদিনের বরাক উপত্যকার সফরে শনিবার শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০ শয্যার আইসিইউ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এছাড়া মেডিকেল কলেজ চত্বরে ৫০০ শয্যার নতুন ইউনিট এবং অক্সিজেন প্লান্টের ভিত্তি স্থাপন করেছেন তিনি। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ চত্বরে আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ হবে বলে ঘোষণা করেছেন। সঙ্গে সিভিল হাসপাতালের পুরনো সেটআপ ভেঙে ৩০০ শয্যার মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং বানানো হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
এদিন সকালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের উপর তলায় একটি ঝাঁ-চকচকে আইসিইউ ওয়ার্ড উদ্বোধন করেন তিনি। এটি গড়ে তুলতে পিএম কেয়ার থেকে অত্যন্ত মূল্যবান মেশিন পত্র পাঠানো হয়েছে।
এরপর একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নিজের অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আমাদের কাছে এক ভয়ানক স্মৃতি হয়ে থাকবে এবং আমরা কখনই চাইবনা এই পরিস্থিতি আবার ফিরে আসুক। তবে চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে আমরা স্বাভাবিক সময় থেকে অনেক বেশি উন্নত হয়েছি। রাজ্যের স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো এই কয়েকমাসে যতটুকু উন্নতি হয়েছে আগে কখনো হয়নি। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত এক হাজার আইসিইউ স্থাপন হয়েছে। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০টি আইসিইউ বসানো হয়েছে, আগামী বছর ১লা জানুয়ারির আগে আরও ৬০টি আইসিইউ বসানো হবে। প্রতি ১৫টি অতিরিক্ত আইসিইউর সঙ্গে একটি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীর দল পাঠানো হবে। যতটুকু পরিকাঠামোগত উন্নতি হবে, তার সঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়োগ করব। হয়ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিন্তু সময়ের সঙ্গে আমরা যেটুকু উন্নতি করে নিয়েছি সেটা আগামীতেও কাজে আসবে। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলা যায়, হয়তো আগামী এক বছর আমাদের অন্তত এভাবে কাটাতে হবে। তবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে গিয়ে আমরা আরও অনেক বেশী শক্ত হাতে এগিয়ে যাচ্ছি।”
শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন , “একসময় ৪টি আইসিইউ নিয়ে কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্র শুরু করতে হয়েছিল। আরটিপিসিআর পরীক্ষা করার জন্য মেশিন ছিল না সেগুলো আসাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য ল্যাব থেকে আনা হয়। রাজ্যের প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি এই হাসপাতালেই চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে ছিলেন। পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গেই ধীরে ধীরে পরিকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সাফাই কর্মী পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। ফলে এখন আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। এবার ধীরে ধীরে হাসপাতালকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে, এক সময় আমরা বলতে পারব এটি স্টেট অফ আর্ট হাসপাতাল। অনেক পুরনো হাসপাতাল হওয়ায় এর বিভিন্ন বিল্ডিং মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ৫০০ শয্যার নতুন ইউনিট দুই বছরের মধ্যে গড়ে তোলা হবে। রোগীদের সেখানে পাঠিয়ে পুরনো বিল্ডিং প্রয়োজনে পুরোপুরি ভেঙে এবার নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে। যেসব বিল্ডিং এর অবস্থা ভাল সেগুলো মেরামত করে অত্যন্ত উন্নত মানের হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে শিলচর মেডিকেল কলেজকে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে এটি সবথেকে ভরসাযোগ্য চিকিৎসাকেন্দ্র থাকবে। কেউ অসুস্থ হলে আগে সরকারি হাসপাতালে যেতে চাইবেন, যদি সেখানে বেড না থাকে তবেই তারা বেসরকারি হাসপাতালে যাবেন।”
এছাড়া মেডিকেল কলেজ চত্বরে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা রাজ্যে ১৬ টি আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তুলছি। তিন স্তরের হাসপাতালে সবথেকে বড় সেটআপ হবে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ চত্বরে। দ্বিতীয় স্তরের হাসপাতাল দুটি হবে, একটি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যটি ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাজ্য সরকার এবং টাটা ট্রাস্ট মিলে এই দুই হাসপাতাল চালনা করবে।
জেলার সবচেয়ে পুরনো সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে সিভিল হাসপাতাল। এটি এখনো পুরনো আদলে রয়েছে ফলে চিকিৎসার পরিষেবা আশানুরূপ দিতে পারছে না। আমরা আগামী দুই বছরের মধ্যে পুরোনো সব বিল্ডিং ভেঙে একটি ৩০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তুলছি। এটি এমএমসির সঙ্গে যুক্ত হবে, ফলে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সকল ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে তারা সিভিলে সরাসরি পরিষেবা দিতে পারবে।
ছয়টি প্রকল্পে মোট ১৪০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এর মাধ্যমে একটি বার্তা রাজ্য সরকার দিতে চাইছে, বরাক উপত্যকাকে কোনভাবেই উপেক্ষা করা হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রকল্প ঘোষণা করা হয় এবং পর্যাপ্ত আর্থিক অনুমোদন দেওয়া হয়। যদি কাজ কম হয়ে থাকে তাহলে এর দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
এদিন অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ছিলেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়, করিমগঞ্জের সাংসদ কৃপানাথ মাল্লাহ, জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, মেডিকেলের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া, গুয়াহাটি থেকে আসা আধিকারিক অনুরাগ গোয়েল, জ্যোতিষ শর্মা, বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, কিশোর নাথ, মিহিরকান্তি সোম, অমর চাঁদ জৈন সহ অন্যান্যরা।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হয়েছে। এরপর থেকে ২০০৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি এখানে ভর্তি হয়েছেন। ১৭৪২ জন ব্যক্তির সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, সুস্থ হওয়ার মাত্রা ৮৬.৯৬ শতাংশ। ৫৯ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যুর হার ২.৯ শতাংশ। সারা বিশ্বে যেসব পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস চিকিৎসা হচ্ছে প্রায় সবগুলো পদ্ধতি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের প্রদান করা হয়েছে। সুস্থ হয়ে অনেকেই স্বেচ্ছায় প্লাজমা দান করেছেন। পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে প্রত্যেকে নিজের সেরাটা নিংড়ে দিচ্ছেন।
জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি হাসপাতালের সেবা দেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে কোভিড যোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি আজকের দিনকে ঐতিহাসিক বলে গণ্য করেছেন।
সাংসদ রাজদীপ রায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন একসময় অনেকেই কেরালা মডেল, দিল্লি মডেল ইত্যাদির উদাহরণ দিতেন। সম্প্রতি সংসদে যাওয়ার পর প্রত্তেকেই অসম মডেলের উদাহরণ দিচ্ছেন। সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করছেন। এতে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করেছি।
Comments are closed.