রাইজিং স্টার সপ্তরাজ চক্রবর্তী: কলেজিয়েট স্কুল থেকে মুম্বাইয়ে ফিল্ম পরিচালনা.........
আপনি যদি ৯০ দশকের শেষের দিকে অথবা ২০০০ সালের প্রথম দিকে স্কুলে গিয়ে থাকেন তবে নিশ্চিত বাড়িতে শুধুমাত্র একটা কথাই শুনেছেন, “আমার ছেলে / আমার মেয়ে বড় হইয়া ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার ওইব”। আপনাকে হয় ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না হলে ডাক্তার। এছাড়া আর কোনো পেশার কথা মানুষ কল্পনায়ও ভাবতে চাইত না, বাস্তবে তো দূরের কথা। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলে অভিভাবকদের কাছ থেকে আপনার জন্য বরাদ্দ পাওনা পিওনের চাকুরি, এমনকি আপনাকে মা বাবার কাছ থেকে এও শুনতে হতে পারে, “তুই তো নির্ঘাত মাঠো গরু চড়াইবে”।
ডাক্তার / ইঞ্জিনিয়ার এবং ‘গরু চড়াইবে’র মধ্যে যে একটি সমগ্র মহাবিশ্ব রয়েছে সে সম্পর্কে ওই প্রজন্মের পিতা-মাতার কোন ধারণা ছিল না। আবার অন্যদিকে তাদেরকেও দোষারোপ করা যায় না। তাদের সামনে কোনও উদাহরণ ছিল না। শচীন টেন্ডুলকর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্রিকেটারদের জন্য একটি উদাহরণ, গায়কদের জন্য লতা মঙ্গেশকর, লেখকদের জন্য সুনীল গাঙ্গুলি, কিন্তু এই উদাহরণগুলির সঙ্গে বরাক উপত্যকার কোনো সম্পর্ক নেই। এদের কেউই বরাক উপত্যকা থেকে সাফল্যের সিঁড়ি চড়েননি। তাই ওইসব বাবা-মায়ের কাছে গায়ক, ডান্সার, ক্রিকেটার কোনো পেশা নয়, শুধুমাত্র একটি শখ বা বেশি হলে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কিছু করার প্রয়াস ……।
আজ আমাদের কাছে এ প্রজন্মের অনুসরণ করার মত অবশ্যই একটি উদাহরণ আছে, তারও জন্ম ৯০ দশকের শেষের দিকে।প্রথমে তিনি শিলচর কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন, পরে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণী শিলচর অধরচাঁদ স্কুলে পড়েন। এরপরে তিনি দুটো পেশাগত শিক্ষার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংটা বেছে নেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ে তার কাছে নতুন একটা দরজা খোলে এবং আজ তিনি বাস করেন ভিন্ন এক কাল্পনিক দুনিয়ায়, সিনেমার জগতে … আমরা সপ্তরাজ চক্রবর্তীর সম্পর্কে কথা বলছি। বরাক বুলেটিনের প্রতিনিধি তার অফিসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, প্রায় ১০ জন মানুষ সেখানে কাজ করেন। আপনি যখন মুম্বাইয়ের গোরগাঁও এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এর ছ তলায় প্রবেশ করবেন তখনই নজরে পড়বে অতর্কিয়া ক্রিয়েটিভ, সপ্তরাজের কর্মস্থল। দেওয়াল জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উদ্ধৃতি আর টেবিলে রয়েছে কয়েকটি অ্যাপল আইম্যাকস। এটি ছিল একটি রবিবার। সপ্তরাজ নিজেই দরজা খুলে স্বাগত জানালেন। প্রাথমিক সৌজন্য বিনিময়ের পর চলচ্চিত্র নির্মাতার সঙ্গে শুরু করলাম আলাপচারিতা, যিনি জি -৫ এর ওয়েব শো ‘মেহেমান ‘ এর শুটিং এবং এডিটিং মাত্র শেষ করেছেন। যাতে রয়েছেন রাইমা সেন, কৌসিক সেন এবং সাহেব ভট্টাচার্য.
আমাদের জানার আগ্রহটা মোটেই অমূলক নয় যে কিভাবে এই বি-টেক সপ্তরাজ জয়পুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মুম্বাই এ পাড়ি দিলেন। উত্তরে তিনি জানালেন, এর সবকিছুই শুরু উইন্ডোজ মুভি মেকারের সঙ্গে, যা প্রত্যেক উইন্ডোজ কম্পিউটারে সবচেয়ে অ-প্রচলিত সফ্টওয়্যার। “এটি ছিল আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ জীবনের প্রথম দিকের একটি দিন, আমরা আমন্ত্রিত হয়েছিলাম সিনিয়রের এক জন্মদিন পার্টিতে। সেখানে আমি শুনছিলাম সবাই বলছে, বার্মাজিকে ডাকুন, আমাদের আরজিবি (রাম গোপাল বার্মা),, তিনি শুট করবেন। আমি পরে বার্মাজিকে জিজ্ঞেস করলাম যে সবাই কেন আপনাকে আরজিবি ডাকছে। তিনি উত্তর দিলেন, আমি তার একজন বড় ফ্যান এবং আমি চলচ্চিত্র তৈরি করি … ” সপ্তরাজ স্মৃতিচারণ করলেন।পার্টি থেকে হোস্টেলে ফেরার পথে দুই নবীন ছাত্র ছোট্ট এক আলাপচারিতায় একে অপরের বিষয়ে জেনে নেন। আর এটাই ছিল আজকের এই ব্যবসা এবং ক্রিয়েটিভ পার্টনারশিপের শুরু। বার্মাজি হলেন শিবা বার্মা।”তিনি আমার নিজের ভাইয়ের মত” সপ্তরাজ যোগ করেন।
তারপর সপ্তরাজ ও শিবা একসঙ্গে সিনেমা দেখতে শুরু করেন, শিবা সপ্তরাজকে দেখান চলচ্চিত্র নির্মানে কিভাবে এগোনো দরকার এবং কোন কোন দিকগুলো এক্ষেত্রে বিবেচনা যোগ্য। এগুলি সপ্তরাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তারপর তিনি উইন্ডোজ মুভি মেকার ব্যবহার করে একটি স্লাইডশো তৈরি করেন এবং এটি তার প্রথম সৃষ্টিশীল কাজ ছিল। সপ্তরাজের শিলচরের বাড়িতে ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফির সাথে কোনও সম্পর্কই ছিল না, তিনি তবলা বাজাতেন, আঁকতেন এবং ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন পড়াশোনার বাইরে। “আমি দশম শ্রেণীতে ভাল নম্বর পেয়েছিলাম, সবাই পায়… এবং তারপর আমার পরিবারের সদস্যদের মনে হল, নম্বর ভালো, কাজেই বিজ্ঞান নেওয়া উচিত এবং একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে উঠতে পারি আমি। অতএব বিজ্ঞান নিয়ে অধরচাঁদে ভর্তি হলাম। রামানুজেও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ডনেশন ও আরো অনেককিছু জড়িত থাকায় হয়ে উঠেনি।একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীটা ছিল আমার কাছে সমুদ্রের মতো, তুলনায় দশম শ্রেণীটি ছিল পুকুর। এবারে আমি বিশাল ও গভীর মহাসাগরে সাঁতার কাটছি। যাইহোক কোনক্রমে পাশ করতে সমর্থ হয়েছিলাম”। সপ্তরাজ নম্রভাবে উচ্চারণ করেন।
তিনি সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন , কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠানেই নির্বাচিত হতে পারেননি। তারপর জি.সি কলেজে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন, বি.এস.সিতে রসায়ন বিদ্যায় ওনার্স নিয়ে। এক বছর পর তার এক বন্ধু তাকে জয়পুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সম্পর্কে জানায়, “ওই্সব দিনগুলোতে আমাদের শিক্ষা সংক্রান্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হত, যেখানে কলেজগুলি নতুন ভর্তির জন্য প্রতিনিধিদের পাঠাতো। আমার বন্ধু আমাকে বলেছিল যে প্রবেশিকা পরীক্ষার র্যা ঙ্ক অনুযায়ী সেখানে আমি একটি আসন পেতে পারি। আমি তখন মনেপ্রাণে শিলচরের বাইরে যেতে চেয়েছিলাম।তাই এই সুযোগটি সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করলাম”।এভাবেই সপ্তরাজ রাজস্থান টেকনিক্যাল ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন এবং ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রথম বর্ষ চলাকালীন সময় থেকেই সপ্তরাজ ফিল্ম বিষয়ক ক্ষেত্রে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলতে সময় দিতে শুরু করেন। এরই অঙ্গ হিসেবে ম্যাগাজিন পড়া, চলচ্চিত্র দেখা, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণ ফোরামে যোগদান করা ইত্যাদি ছিল মুখ্য। “আমরা চলচ্চিত্র তৈরি করি, নোকিয়া এন সিরিজ মোবাইল ফোন দিয়ে শুট করি, স্ক্রিপ্ট লেখি এবং সংলাপ রেকর্ডিং করি।আমরা উইন্ডোজ মুভি মেকার থেকে অ্যাডোব প্রিমিয়ার প্রো (এডিটিং সফ্টওয়্যার) এ সরে আসি”, তিনি স্মরণ করেন।
সপ্তরাজ তার ইঞ্জিনিয়ারিং দিনগুলোকেও ফিল্ম স্কুলের দিনগুলোর মত করে কাটিয়েছেন। তাই তিনি ওই সময় আইনস্টাইন ও গ্যালিলিওর চেয়েও কুইন্টিন টারান্টিনো এবং স্টিভেন স্পিলবার্গকে অনুসরণ করেন বেশি। তার ও শিবার শর্ট ফিল্ম ‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’ নির্বাচিত হয় এবং জয়পুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ প্রদর্শিত হয়। এটিকে তিনি তার কাজের প্রশংসনীয় মুহুর্ত হিসেবে অনুভব করেন। “এখনো মনে আছে, আমরা একটি সাধারণ পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা দিয়ে এটি শুট করেছিলাম, এমনকি আমরা বিভিন্ন দৃশ্য শুট করার জন্য ক্যামেরাকে ঘোরাতে হুইল চেয়ার ব্যবহার করি” তিনি স্মরণ করেন।
কলেজের দিন শেষ হয়ে যায় এবং সপ্তরাজ নরসিংটোলায় তার ঘরে ফিরে যান। ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকরা ওই সময় কল সেন্টারের চাকরির জন্য আবেদন করছিলেন, এমনকি অনেকে তখন কিছু অফার গ্রহণ করছিলেন যেখানে বেতন ছিল মাত্র ৩০০০ টাকা। এদিকে ওই সময়ই তিনি তার সিনিয়র এর কাছ থেকে একটি কল পান এবং সিনিয়র ব্যক্তিটি জানান যে তিনি একটি ফিচার ফিল্ম তৈরি করছেন। তাই সপ্তরাজ ও শিবাকে তিনি সহায়ক হিসেবে চান। যখন নিজের প্যাশনকে পেশা বানানোর সুযোগ আসে তখন কেউর সময় নষ্ট করা উচিত নয় বলে সপ্তরাজ বিশ্বাস করেন এবং বলা বাহুল্য তিনি অবিলম্বে এই অফারটি গ্রহণ করেন। এরপর তারা দুজন ফিচার ফিল্ম ‘সেকেন্ড ম্যারেজ ডট কম’ এ সহকারী পরিচালকের শিরোনাম পান। “এটি আমাকে চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পর্কে একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে। আমি এবং শিবা যতটা কঠোর পরিশ্রম করা যায় করেছিলাম এবং আমরা সবকিছুতে জড়িত ছিলাম। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এরপরই আমরা মুম্বাই স্থানান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেই এবং এটিকে সর্বসময়ের পেশা হিসেবে গ্রহণ করি” সপ্তরাজ স্মরণ করেন।
মুম্বাইতে স্থানান্তরিত হওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। এখানে রয়েছে এক জগৎ যা কিনা স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায় দ্বারা প্রভাবিত। এমনকি অমিতাভ বচ্চনও তার সময়ে বলিউডে বাইরের একজন ছিলেন। এটা অনেকটা অসমিয়াদের একটি দলের শিলচরে আসা এবং শহরের বুকে ব্যবসা চালানোর মত। চ্যালেঞ্জগুলো নিসন্দেহে অপরিমেয়। একটি কাজ পেতে কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। ঠিক একই সঙ্গে মুম্বাইতে অনেক সুযোগও রয়েছে। সপ্তরাজকেও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে।”অনেক অন্ধকারপূর্ণ দিনও ছিল, যেখানে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, মুম্বাই বাস করার জন্য একটি ব্যয়বহুল জায়গা … রোজ বাড়ি ফিরে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতাম, আমার এটা করা উচিত না আমি ঘরে ফিরে যাব? আপনাকে যদি সাফল্য পেতে হয় তাহলে ফিরে যাওয়াটা বিকল্প হতে পারে না। আপনাকে যাবতীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতেই হবে।আমরা দেখলাম চলচ্চিত্র নির্মাণ কঠিন তাই আমরা সঙ্গীত ভিডিও, বিজ্ঞাপন ছায়াছবি, কর্পোরেট ভিডিও, সর্ট ফিল্ম ইত্যাদি নির্মাণ শুরু করলাম, আমাদের উদ্দেশ্যটা ছিল কাজ করে যাওয়া … ” বললেন সপ্তরাজ।
অনেকেই মুম্বাইতে এসেছেন স্বপ্নপূরণের জন্য। অনেকে আবার ব্যর্থ হয়ে ফিরেও গেছেন। স্বপ্নটা অবশ্যই ফিচার ফিল্ম তৈরি করা, কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের জন্য নিজেকে উজার করে দিতে হয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজে নিজেকে সমর্পণ করতে হয় বলে সপ্তরাজ বিশ্বাস করেন। আসন্ন একটি প্রকল্পের জন্য তিনি এবং তার পার্টনার রাম গোপাল বার্মার সঙ্গে কাজ করেছেন। তারপর তারা জি গ্রুপের অনলাইন ভিডিও জি ৫ এর শো পান। এই শো টিই হচ্ছে ‘মেহেমান’। এটিতে তিনি রাইমা সেন, কৌসিক সেন এবং সাহেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে কাজ করেন। এটি এখন পর্যন্ত সপ্তরাজের সবচেয়ে বড় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।
“আমি সুচিত্রা সেনের বাড়িতে ছিলাম রাইমা সেনের লুক টেস্টের জন্য। আমি আমার মাকে একটা ছবি পাঠিয়েছিলাম। মা তো অভিভূত ……….বাঃ এত সুন্দর বাড়ি! এটা আমাদের কাজ এবং এটাকে আমরা একটা কাজ হিসেবেই নেই। হ্যাঁ, ওরা অনেক বড় অভিনেতা অভিনেত্রী। আমি ওদেরকে দেখে বড় হয়েছি। তবে ওরা খুবই নম্রও। এ কাজটি আমার জন্য একটি খুব বড় শিক্ষনীয় অভিজ্ঞতা ছিল। আমার মনের ভেতরের মন অবাক হয়ে ভাবত, এটা কি সত্যি হচ্ছে? আমি সত্যি শুট করছি রাইমা, কৌশিককে? প্রতিনিয়ত মনের মধ্যে প্রশ্ন উঁকি দিত। আমি ভাবতাম, আমি শিলচরের ছেলে, যে নর্সিংটোলায় বসে যখন তখন আড্ডা দিত সেই আমি বড় বড় স্টারদের ডিরেক্ট করছি!” বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি বর্ণনা করেন।
আজ সপ্তরাজ চলচ্চিত্র নির্মেতা এবং উদ্যোক্তা। তিনি মুম্বাইয়ে স্বপ্নের জীবন যাপন করছেন। কিন্তু এর জন্য তাকে নিজের স্বস্তির জায়গাটা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। “শিলচর একটি খুবই প্রিয় জায়গা। শহরে আমার নিজস্ব ঘর রয়েছে। আমি যৌথ পরিবারে বাস করতাম, যা কি না সবসময় আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। আমি অনায়াসে সহজ সুখী জীবন যাপন করতে পারতাম। কিন্তু আমি পার্থক্য তৈরি করতে বা অন্যরকম কিছু করার অভিলাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজের সুবিধাজনক স্থান থেকে বেরিয়ে আসার। তবে এটা তো শুধুমাত্র শুরু। আমাদের দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হবে। আরও অনেক কিছু তৈরি করতে হবে।” সপ্তরাজ ইতি টানলেন।
বরাকবাসীকে নিসন্দেহে অন্ধকারে আশার আলো হয়ে পথ দেখাবে সপ্তরাজের সফল যাত্রাপথ। অনুপ্রাণিত করবে নতুন কিছু করার জন্য। আমাদের ধারণা, চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে গেলে অবশ্যই তারকা পরিবারের সদস্য হতে হবে এবং চলচ্চিত্র এক জগৎ যা কিনা আত্মীয়পরিজন দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু এটা সবসময় সত্যি নয়। প্রমাণ খোদ সপ্তরাজ। শিলচরে জন্মগ্রহণ করা এক ইঞ্জিনিয়ার পরে চলচ্চিত্র নির্মেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী সপ্তরাজ সুচিত্রা সেনের নাতনি এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রাইমা সেন বা সেলিব্রেটি অভিনেতা কৌশিক সেনকে ছবিতে ‘ডিরেক্ট’ করছেন। আমাদের আরো মনে হয়, ভিডিও শুট করতে গেলে আমাদের প্রয়োজন হাই-এন্ড-ক্যামেরা। কিন্তু এখানে আমাদের মনে করা উচিত, সপ্তরাজের প্রথম ছবি ”বাটারফ্লাই এফেক্ট” পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা দিয়ে শুট করা হয়েছিল।আসলে এগুলো সব অযুহাত মাত্র, যা দিয়ে আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দেই। আসল সত্যটা হচ্ছে আমরা আমাদের সুবিধের গন্ডির বাইরে যেতে চাই না এবং যখন আমরা যাই তখন সপ্তরাজ চক্রবর্তী, বীর রাধা শেরপা, নভনীল চক্রবর্তীর মত রত্ন আমাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে।
সপ্তরাজ সুদীপ চক্রবর্তী এবং ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত গায়িকা স্বাগতা চক্রবর্তীর ছেলে। তার এক ছোট ভাইও রয়েছেন। তিনিও চলচ্চিত্র নির্মাণে এবং শিলচরের একটি ব্যান্ড এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
বরাক বুলেটিন ডট কম ‘মেহেমান’ ছবির জন্য সপ্তরাজকে অভিনন্দন এবং সেইসঙ্গে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে। এই পাব্লিকেশন তার পরিবারকেও অভিনন্দন জানাতে চায়, সেইসঙ্গে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে বরাক উপত্যকাকে গর্ববোধ করার মত সন্তান উপহার দেওয়ার জন্য।
https://www.youtube.com/watch?v=_3NWtVV9bUA&feature=youtu.be
Comments are closed.