বরাক উপত্যকার সবচেয়ে প্রভাবশালী পনেরো জন ব্যক্তিত্ব; স্বাধীনতা দিবসের এক বিশেষ পর্যালোচনা
‘বরাক উপত্যকার পনেরো জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব’র এটি দ্বিতীয় সংস্করণ। গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা বেশ প্রভাবশালী বলে আমরা মনে করি। সাথে এটাও মনে করি যে, এদের কাঁধে বেশ দায়িত্ব ও রয়েছে।
.
.
পদ্মশ্রী রবি কান্নান
বাড়ি থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে কাছাড়ে এসে নিঃশর্ত সেবার জন্য ডাক্তার কান্নানকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দেওয়া হয় । ডক্টর কান্নান ২০০৭ সালে ভারতবর্ষের অগ্রণী হাসপাতাল আদিয়ার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের শল্যচিকিৎসার প্রধানের পদ ছেড়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই উপত্যকার জনগণকে সহায়তার জন্য চলে আসেন।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও ডক্টর রবি কন্নান এখন বরাক উপত্যকার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উনার জ্ঞান, বুদ্ধি এখন রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসক থেকে শুরু করে সবার কাছেই আদরণীয়। অতিসম্প্রতি ডক্টর রাকেশ পি গোপালকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যাপারেও মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। পদ্মশ্রী কান্নান এক জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব।
ডাঃ রাজদীপ রায়
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা যাকে নির্বাচনী তালিকায় ‘রাজদীপ রায়, বাঙালি’ উল্লেখ করে সমগ্র ভারতবর্ষে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সেই সংসদ বর্তমানে মনে হয় যেন বরাক উপত্যকার একমাত্র সংসদীয় প্রতিনিধি। এই কোভিড আবহে বরাক উপত্যকায় এই সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিকল্পনা তৈরি এবং তার রূপায়ণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
যাই হোক, অসম চুক্তির ৬ নং দফা সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট আসু কর্তৃক ফাঁস করে দেওয়ার পর সাংসদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। রিপোর্টে যা বলা আছে, তা সত্যি সত্যিই শুধু বরাক উপত্যকা নয় সমগ্র আসামের বাঙ্গালীদের মৌলিক অধিকারে প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও অসম চুক্তির এই ৬ নং দফা রূপায়ণ করার ব্যাপারে আসাম বাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আসামের বাঙালি মাত্রেরই এখন দৃষ্টি রয়েছে ডাঃ রাজদীপ রায়ের উপর।
কীর্তি জাল্লি
প্রশাসনিক কাজে এক উজ্জল ব্যক্তিত্ব কীর্তি জাল্লি ইতিমধ্যেই রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে কর্ম দক্ষতার জন্য বিভিন্ন স্বীকৃতি আদায় করেছেন। খুব স্বল্প সময়ে নিজেকে দক্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের ও উনার উপর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। হাইলাকান্দির জেলা উপায়ুক্ত হিসেবে এক সফল শুরু করেছিলেন কীর্তি, সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সফলভাবে রুখতে সক্ষম হন তিনি।
কোভিড আবহে তাকে রাতারাতি বদলি করে কাছাড় জেলা সামলাবার দায়িত্ব দেওয়া হয়। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা ছাড়াও জেলার উন্নতির জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রেও তাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সেতু তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে কয়েকটা, কিন্তু সেগুলো শুরু করা যাচ্ছেনা এপ্রোচের জন্য। মিনি সেক্রেটারিয়াট, মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক যেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে ও তাকে এক মুখ্য ভূমিকা থাকবে । পূর্ববর্তী জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরিকে গান্ধীবাগের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্যই বদলি করা হয়েছিল মনে করছে সাধারণ জনগণ। দেখা যাক, বর্তমান জেলাশাসক কতটুকু কি করতে পারেন।
সুস্মিতা দেব
বরাক উপত্যকার এক বৃহৎ অংশ মনে করেন যে, স্থানীয় পর্যায়ের কংগ্রেস নেতাদের চেয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রভাব বরাক কংগ্রেসে বেশি রয়েছে; আসামে বিরোধী দল বলতে প্রকৃতপক্ষে কিছুই নেই। বিশ্বশর্মা একাই রিপুন বরা বা অন্য কোন কংগ্রেস নেতার অভিযোগ এক ছোট্ট টুইটে উড়িয়ে দিতে পারেন। এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলে একমাত্র সুস্মিতা দেব রয়েছেন, যার কথা মন দিয়ে শোনা হয়। কংগ্রেস দলের মহিলা শাখার জাতীয় সভানেত্রী এবং দলের প্রবক্তা সুস্মিতার দিল্লিতে ও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং শাসক দল তথা প্রশাসনিক স্তরে ও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা হয়।
কাগজ কল অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে, শিলচর দূরদর্শনের ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে করছেন অনেকেই। বিজেপি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মহাসড়কের বাস্তবায়ন এখনো বিশবাঁও জলে। বিরোধীদলের তরফ থেকে সুস্মিতা দেব এই ‘ইস্যু’গুলো তুলে ধরছেন ক্ষণে ক্ষণে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলকে পুনরায় একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে আসার দায়িত্ব তার উপর পড়ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসাম চুক্তি এক বড় ভূমিকা পালন করবে। এই ব্যাপারে সুস্মিতা দেবের ভূমিকা কি দাঁড়াবে এখনো স্পষ্ট নয়, তবে বরাক উপত্যকায় কংগ্রেস দলের দলের ‘মুখ’ সুস্মিতা দেব এটা বলা চলে।
আমিনুল হক লস্কর
বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারের সবচেয়ে কর্মঠ এমএলএ’দের মধ্যে অন্যতম। সোনাই বিধানসভা ক্ষেত্রের জন্য অনেক প্রকল্প তিনি নিয়ে এসেছেন, যা আর্থিক পরিমান হিসেবে সর্বোচ্চ। স্বাভাবিকভাবেই অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং হবে, শহরের ও বিস্তৃতি ঘটবে। সরকারি দলের একমাত্র মুসলিম এমএলএ হিসেবে নিজ সম্প্রদায়ের অনুভূতি এবং দলের আদর্শের মধ্যে এক সাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে তাকে।
আসামে করোনা সংক্রমনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাবলীগী জামাতিদের দায়ী করে দোষারোপ করছিলেন অনেকেই; তিনি কিন্তু তখন স্থির এবং শান্ত ছিলেন। হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই ভোট দিয়ে তাকে বিধানসভায় পাঠিয়েছিলেন এবং তিনি ও তৃণমূল পর্যায়ের সবার সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থেকেছেন। সম্প্রতিককালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে মইনুল হক চৌধুরী হাসপাতাল এবং সিভিল হাসপাতালকে ফেছাই মিয়া হাসপাতাল নামকরণ করার প্রস্তাব এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটা বাঙ্গালীদেরকে হিন্দু এবং মুসলিম এই দুভাগে বিভক্ত করার প্রয়াস। আমিনুল হক নিজের বিধানসভা এলাকায় হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মেঘা নিধি দাহাল
হাইলাকান্দিতে সবসময়ই জেলা শাসকেরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। কীর্তি জাল্লি এবং আদিল খানের সময়ে নীতি আয়োগের হিসেবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা হিসেবে হাইলাকান্দি শীর্ষস্থান দখল করেছিল। সম্প্রতি এই জেলা বিশেষ দক্ষতার জন্য ৬ কোটি টাকা পেয়েছে। জাল্লি এবং খান এই দুজন মেঘা নিধির জন্য বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরি করে এসেছেন।
কীর্তি জাল্লি কাছাড় জেলায় বদলি হওয়ার পর ২০১৪ সালের আইএএস মেঘানিধি দায়িত্ব সমঝে নেন। করোণা আবহে হাইলাকান্দিতে ফিরে আসা হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক এর প্রতি দৃষ্টি রাখতে হয় তাকে। জেলায় বড় হোটেল নেই, কোয়ারেন্টাইন করার মত স্থান অপ্রতুল ছিল। দাহাল দলবল নিয়ে সম্ভাব্য সব রিসোর্স কাজে লাগিয়ে এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন।
দাহাল সিকিম রাজ্যের লোক এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এক বড় ধরনের চাকুরী পেয়েছিলেন তিনি, বিদেশে ও গিয়েছিলেন। কিন্তু উনার বাবা চেয়েছিলেন ছেলে আইএএস হয়ে সমাজসেবা করুক। তাই পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী উচ্চ বেতনের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে আইএএস পরীক্ষায় বসে সাফল্য অর্জন করেন। আজ তিনি আইএএস অফিসার এবং সিকিমের গর্ব। বরাক উপত্যকার অনেক তরুণ-তরুণী দাহালের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন।
পিনাক রায়
লকডাউন শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই রাইজিং ইয়ুথ সোসাইটির সদস্যরা আর পাঁচটা এনজিওর মতই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পিনাক রায়ের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে শুরু করে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক, প্রত্যেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। কিন্তু এই তালিকায় তাদের স্থান পাওয়ার কারণ একটু আলাদা। যখন থেকে জেলায় করোনায় মৃত্যু শুরু হয়েছে পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে। কোনও ব্যক্তির মৃত্যু করোনায় হলে বা মৃত্যুর পর কারও শরীরের সংক্রমণ পাওয়া গেলে তার মৃতদেহ সৎকার বিশেষভাবে করতে হয়। জানীগঞ্জের নারায়ন মিত্রের মৃত্যুর পর কফিনবন্দি মৃতদেহ নিয়ে ডিমা হাছাও সংলগ্ন গভীর জঙ্গলে রাতের বেলা সৎকার করেছেন পিনাক রায় এবং তার সহযোগীরা।
পরেও এভাবে দূর-দূরান্তে একই কাজ সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে শিলচর শ্মশানঘাটে একটি বিশেষ চুলা শুধুমাত্র কোভিড মৃতদেহ পোড়ানোর জন্য ধার্য করা হয়েছে। প্রায় রোজ সন্ধ্যেবেলা পিপিই কিট লাগিয়ে শিলচর শ্মশানঘাটে মৃতদেহ পড়াচ্ছেন তারা। অজানা অচেনা ব্যক্তির পরিবারের হয়ে মুখাগ্নি করছেন এবং প্রতিদিন হিন্দু বিধান মেনে বাড়িতেই চারদিনের পুরক করছেন। সমাজে তাদের এখন আলাদা চোখে দেখা হয়। অনেকেই মনে করেন যেহেতু এধরনের মৃতদেহ পোড়ান, তাদের শরীরে নিশ্চয়ই করোনা রয়েছে। তবে তারা সমাজের এই মনোভাবের সঙ্গেও লড়াই করে কাজ করছেন। মৃত্যুর পর করোনা রোগীর সৎকারে যে সাহস এবং নিঃস্বার্থ মনোভাব দেখাচ্ছেন তার জন্য পিনাক রায় ও তার সহযোগীরা সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠেছেন
ডা: বাবুল বেজবরুয়া
তিনি যখন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন এই সরকারি সংস্থাটির অবস্থা খুবই খারাপ এবং জালিয়াতিতে ছেয়ে ছিল।মেস থেকে শুরু করে ব্লাড ব্যাংকের একাউন্টে দুর্নীতির ফলে ডাক্তারের চেয়ে জলদস্যুদের দল ভারি ছিল। বেজবরুয়া গত দু’বছরে নিজেকে একজন অ-দুর্নীতিগ্রস্ত অধ্যক্ষ সহ প্রধান সুপারেনটেনডেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তিনি পরিবর্তনের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং অবকাঠামোগত উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা করেছেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাকেশ পি গোপালকে পার্ট টাইম চিকিৎসক হিসেবে অ্যারেঞ্জমেন্ট তাদের মধ্যে অন্যতম।
তবে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে এখনও অনেক খামতি রয়েছে। যারা মস্তিষ্কের স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন তাঁরা নিউরোসার্জনের অনুপস্থিতিতে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাচ্ছেন। কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতেও অবকাঠামোগত ত্রুটিগুলি প্রকাশ পাচ্ছে। ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে ২৬ বছর বয়সের এক ছেলের মায়ের মেডিক্যালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। এতকিছুর মধ্যেও এটা সত্য যে সীমিত সংস্থান নিয়ে বেজবরুয়া এবং তার দল তাদের জাহাজটাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন। হাসপাতালটি কোভিডের সঙ্গে লড়াই করছে এবং এখন পর্যন্ত প্রচুর সংখ্যক রোগী সুস্থও হয়ে উঠেছেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজের কর্ণধার হিসেবে ডা: বেজবরুয়া একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
শুভাশিস চৌধুরী
তিনি বিতর্কিত, তিনি অনমনীয়ভাবে হিন্দু এবং জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞার সঙ্গে মিল না খাওয়া সব কিছুতেই তার আপত্তি। তবে তিনি নির্ভীক। হিন্দু ছাত্র সংস্থার একজন সদস্য, শুভাশিস চৌধুরী সরকারকে বা হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতাদেরকে
প্রশ্ন করা থেকে পিছিয়ে আসেন না। তিনসুকিয়ার ধোলায় বাঙালিদের বর্বর হত্যা নিয়ে তাঁর প্রশ্ন তাঁর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে।
ডিটেনশন ক্যাম্পের বিরুদ্ধে তাঁর বিক্ষোভ, ধারা ৬ বাস্তবায়নের বিরোধিতা ইত্যাদিতে চৌধুরী তার প্রজন্মের অন্যদের মতো নিজেকে ফেসবুক অ্যাক্টিভিজমে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার একটি নিজস্ব কণ্ঠস্বর আছে। তিনি বিতর্ক এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। কেবল ‘জয়শ্রী রাম’ উচ্চারণ করেই থেমে থাকেন না বরং তথ্য, পরিসংখ্যান এবং বিশ্লেষণ দ্বারা তা বোঝাবার চেষ্টা করেন। শুভাশিস চৌধুরী প্রয়োজনে রাস্তায় এবং ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মিছিল করতে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করতে পারেন।
কমল চক্রবর্তী, সমাজসেবী
ডিটেনশন ক্যাম্পে বিনা দোষে অনেকেই দিন কাটান। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিলেও সেখানে থেকে যায় জামিনের ঘেরাটোপ। এতেই মুক্তির আশা ক্ষীণ হয়ে যায় ডি-ক্যাম্পে বন্দি মানুষের। শিলচরের কমল চক্রবর্তী শুধুমাত্র কাছাড় নয় হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ এবং ডিমা হাছাও জেলায়ও এধরনের ঘটনা খুঁজে বেড়ান, যোগাযোগ করে জামিনের জন্য প্রয়োজনীয় মানুষ ও টাকা পয়সার জন্য একপ্রকার দ্বারে দ্বারে ঘুরেন। তার চেষ্টায় পুলিশের তরফ থেকে ও এমন পরিবারের জন্য সাহায্য মিলেছে, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, অনেকেই তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
সন্তানহারা, পরিবার হারা, পরিচয় হারা মানুষ যখন ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পান, চোখের জলে কামনা করেন এই যন্ত্রণা যেন আর কেউ না পায়। কমল চক্রবর্তী এসব ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেন এবং শুরু হয় আরেক পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া। নিজের খরচে শুধুমাত্র মানুষের টানে দীর্ঘদিন ধরে কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি। গরিব পরিবারের মানুষ যখন ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পায়, বাড়িতে গিয়ে খাবার জুটেছে কিনা, এরও খবর রাখেন তিনি। যারা এসব দুঃস্থ পরিবারের সাহায্য করতে আগ্রহী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য পাইয়ে দেন। এই তালিকায় অনেক পরিবার রয়েছে, তবে কখনোই নিজের প্রচার করেন না কমল চক্রবর্তী। যেটুকু প্রচার করেন সেটা তার পরিকল্পনার অঙ্গ, এক ব্যক্তির মুক্তির ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরে বাকি ডি’ক্যাম্পে আটক মানুষের জন্য সাহায্যের হাত খুঁজে বেড়ান। তার এই নীরব কাজকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
স্বাধীনতা দিবসে বরাক বুলেটিনের নিবেদন: উপত্যকার প্রভাবশালী পনেরো জন ব্যক্তিত্ব
কবিতা দেবী
তিনি বরাক উপত্যকা এবং সমগ্র ভারতের জন্য অলিম্পিক জয়ের এক স্বপ্ন।তিনি সদ্যসমাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। তিনি কাছাড় জেলার লক্ষীপুরের বাসিন্দা এবং ফেন্সিংয়ে তার প্রদর্শন দুর্দান্ত। তার স্বপ্ন অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা এবং অবশ্যই পদক জয়ের।
এই গেমটিতে ব্যবহৃত অস্ত্রটি বারবার ভেঙে যেতে পারে। এর দাম প্রায় ৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাস্কও বদলে গেছে এবং নতুনটি আরও ব্যয়বহুল। কবিতা দেবীকে এই খেলার জন্য বারবার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বিরল প্রতিভা, অনেকটা আগরতলার দীপা কর্মকারের মতো। তিনি এই প্রজন্মকে অবশ্যই খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে সক্ষম।
রত্নদ্বীপ দেব
গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর আলমারিতে লুকিয়ে রয়েছে অনেকগুলো কঙ্কাল এবং রত্নদ্বীপ দেব অনন্য ভাবে সেগুলোকে প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে দৈনিক প্রান্তজ্যোতির সংবাদদাতার প্রতিবেদন দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার এবং সুপারিনটেনডেন্টকে কারাবন্দি করার অন্যতম প্রধান কারণ।
বর্তমান সময়ে যখন অনেকের সাহস এসব ক্ষেত্রে কলম ধরতে অনুমতি দেয় না, তখন দেবের কলম এলআইসি, এসএমসিএইচ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের কেলেঙ্কারির বিষয়ে সাহসী রিপোর্ট লিখে যাচ্ছে। বিধায়ক দিলীপ পালের সঙ্গে মালিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বিজেপির মুখপত্র বলে প্রান্তজ্যোতি প্রায়শই সমালোচিত হয়েছে, কিন্তু দেবের প্রতিবেদন প্রতিনিয়ত দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করে চলেছে রত্নদ্বীপ দেব: গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর আলমারিতে লুকিয়ে রয়েছে অনেকগুলো কঙ্কাল এবং রত্নদ্বীপ দেব অনন্য ভাবে সেগুলোকে প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে দৈনিক প্রান্তজ্যোতির সংবাদদাতার প্রতিবেদন দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার এবং সুপারিনটেনডেন্টকে কারাবন্দি করার অন্যতম প্রধান কারণ।
বর্তমান সময়ে যখন অনেকের সাহস এসব ক্ষেত্রে কলম ধরতে অনুমতি দেয় না, তখন দেবের কলম এলআইসি, এসমসিএইচ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের কেলেঙ্কারির বিষয়ে সাহসী রিপোর্ট লিখে যাচ্ছে। বিধায়ক দিলীপ পালের সঙ্গে মালিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বিজেপির মুখপত্র বলে প্রান্তজ্যোতি প্রায়শই সমালোচিত হয়েছে, কিন্তু দেবের প্রতিবেদন প্রতিনিয়ত দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করে চলেছে যা ক্ষমতাধারী দল পূরণ করতে অক্ষম।
সুমিত সত্তাওয়ান
বরাক উপত্যকার না হয়েও এই উপত্যকার ১৫ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এমন একজন এডিসি’র নামের অন্তর্ভুক্তি অনেককে অবাক করে দিতে পারে। ২০১৫ সালের আসাম-মেঘালয় ব্যাচের একজন আইএএস কর্মকর্তা, সুমিত সত্তাওয়ান শিলচর পৌরসভা বোর্ডের দায়িত্বেও রয়েছেন। মহামারি চলাকালীন জেলা উপায়ুক্তরা বদলি হলেও তিনি কিন্তু পুরো মহামারী চলাকালীন বরাকের মাটিতেই রয়ে গেলেন। শেষ কয়েক মাস সত্তাওয়ানের জন্য সবকিছু সামলানো যুদ্ধের চেয়ে কম ছিলনা।
জয়পুরে ফিরে গেলেন তার স্ত্রী। তাদের প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখলো সেখানেই। অথচ তিনি এখনও তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। সাধারণত ডিসি ও এডিসি হচ্ছেন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সুমিত সত্তাওয়ান ধারণাটাকে বদলে দিয়েছেন। সেনিটাইজার নিয়ে এবং পিপিই কিট পরে কর্মচারিদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তিনি কোভিড পজিটিভ রোগীর বসতি স্থান সেনিটাইজ করতে গিয়েছিলেন। মানুষের নানা অভিযোগ জানার জন্য এবং সেই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি তার ফোন নম্বরটি পর্যন্ত জনগণের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। কাছাড় জেলা প্রশাসনে অনেক এডিসি রয়েছেন। তবে তার কাজ তাকে সব সময় আলাদা করে রেখেছে। আজ কাছাড় জেলার কোন বাসিন্দা যদি কোথাও কোনও সমস্যার মুখোমুখি হন, তবে তাদের মনে সবচেয়ে প্রথম যে নামটি আসে সেটি হল সুমিত সত্তাওয়ান এবং এটি অবশ্যই তার কাজের প্রভাব।
দেবজ্যোতি সুজন দেব রায়
সাংবাদিক হিসেবে জনপ্রিয়তার তুলনায় সুজন দেব রায় করিমগঞ্জে জরুরি পরিষেবা প্রদান করে সবার নজর কেড়েছেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তবে ইদানিং তার সামাজিক কাজকর্ম শিরোনাম দখল করছে। রবিনহুড আর্মি এনজিওর একজন হিসেবে সুজন দেব রায় ফেসবুককে ব্যবহার করেন তাঁর ধারণাগুলো, তাঁর মতামত, তাঁর অভিমত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে।মানুষও তাদের সমস্যা নিয়ে তার কাছে পৌঁছান এবং তিনি তাদেরকে সমস্যাগুলো থেকে বের করে আনতে সহায়তা করেন।
লঙ্গাই শশান ঘাটে একটি কোভিড আক্রান্ত আধাপোড়া মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, স্থানীয়রা সুজন দেবরায়ের কাছে খবর পাঠান এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে পিপিই কিট পরে সেই আধপোড়া লাশটি দাহ করেছিলেন। তিনি একটি মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তারপর বাংলাদেশে তার পরিবারকে খুঁজে বের করেন। পাঁচ বছর পর মহিলা আবার ছেলের সাথে মিলিত হন। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে।
মানুষ বলছে আগামী নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য এসব করছেন। রাজনীতি জীবনে তার প্রথম দিনগুলো বজরং দলের সঙ্গে থাকলেও সুজন দেবরায় কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন। আজ তিনি লেফট, রাইট উভয়ের সঙ্গেই কাজ করেন। করিমগঞ্জে অনেক তরুণ বলেন যে তারা সুজন দেবরায় হতে চান। তারা রবিনহুড আর্মিতে যোগ দিতে চান।আর এটাই তার এবং তার কাজের প্রভাব।
সুচেতা ভট্টাচার্য
শিলচরের পঞ্চায়েত রোড এলাকায় থাকা ‘ওয়ানস্টপ সেন্টার’ মহিলা সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
পারিবারিক ও সামাজিক যাতনার শিকার মহিলারা বিভিন্ন সময় কোন পথ না দেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এমন পরিস্থিতিতে পড়া মহিলাদের পাশে থেকে তাদের সম্পূর্ণ সুরক্ষার দায়ভার নিচ্ছে ওয়ানস্টপ সেন্টার।
যদিও এটা সরকারি প্রকল্প, তবে সারা রাজ্যে এর তেমন কোনও প্রভাব নেই যতটা কাছাড় জেলায় রয়েছে। এর পেছনে রয়েছেন অক্লান্ত পরিশ্রম করা অত্যন্ত সাহসী একজন মহিলা, সুচেতা ভট্টাচার্য। গত আড়াই বছরে কয়েকশো মহিলার জীবন রক্ষা করেছেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য এবং তার দলের সদস্যরা। চরম দুরবস্থা থেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে মহিলাদের শক্তিশালী করে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করেন এরা, কিন্তু তারা নিজেদের কোন প্রচার করেন না। নেপাল থেকে অপহৃত হয়ে শিলচরের নিষিদ্ধ পল্লীতে এসে আটকা পড়া মহিলাদের যখন উদ্ধার করা হয়, তাদের মানসিক ভাবে লড়াইয়ে সাহায্য করেন সুচেতা ভট্টাচার্য এবং তার সহযোগীরা। তবে যারাই তাদের ওয়ান স্টপ সেন্টারে সহযোগিতা পেয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে যান, তাদের নাম প্রকাশ্যে আনা হয় না। আমরা এবছর সুচেতা ভট্টাচার্য এবং সহযোগীদের সম্মান জানাচ্ছি।
Editor’s note:
Compiling the list this year was tougher compared to 2019. The news team grew in size so there was more debate, there are a few organisations who are doing a phenomenal job but they aren’t individuals so there was a dilemma. A disclaimer, nobody has commissioned us to prepare the list. We all grew up reading Forbes, Time, Indian Express having their list of most powerful so we had decided to have our own list since last year.
In the process, we realised that we need to also make lists of the most powerful organisations. The Commoners, Smile, Friends of The Earth, the way these organisations are working in this pandemic, it has to be said – hat’s off.
A special mention to Sayantan Chakraborty, the true “Immortal Boy” who is not there with us but it is his influence in the form of Thousand Sayantans’ that keeps working to improve the healthcare infrastructure.
This list is an addition to our list last year, so, Subimal Bhattacharjee, Joydeep Biswas, Kamalakhya Dey Purkayastha, Arijit Aditya, Rahul Singh, Chitrabhanu Bhowmick, Ahmed Ali, Taimur Raja Choudhury, Mohitosh Paul continue to remain as influential as they were last year.
This is our list, and we are sure that you have yours. Please do share it with us. We will come up with another list next year.
Comments are closed.